কর্মে শুভ। নতুন কর্মপ্রাপ্তি বা কর্মসূত্রে দূররাজ্য বা বিদেশ গমন হতে পারে। আনন্দানুষ্ঠানে যোগদান ও ... বিশদ
কেশরী ছবির কাহিনী গড়ে উঠেছে ২১ জন শিখের মরণপণ লড়াইয়ের সত্য ঘটনাকে কেন্দ্র করে। তবে গোটা ছবি জুড়ে দাপিয়ে গিয়েছেন একজনই। তিনি হলেন হাবিলদার ইশর সিংয়ের ভূমিকাভিনেতা অক্ষয়কুমার। ছবির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত অন্য কোনও অভিনেতা-অভিনেত্রীর করার মতো কিছুই রাখা হয়নি চিত্রনাট্যে। এমনকী নায়িকার ভূমিকায় পরিণিতী চোপড়ারও না। এই ছবি যেহেতু ইতিহাস আশ্রিত তাই ছবির আলোচনায় ঢোকার আগে সেই ইতিহাসের খানিকটা বলা দরকার। অনেকে হয়তো জানেনও সেই ইতিহাস।
১৮৯৭ সালে বর্তমান পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশে (তখন নাম ছিল নর্থ ওয়েস্ট ফ্রন্টিয়ার প্রভিন্স) অবস্থিত সারাগারহি নামে একটি ছোট্ট দুর্গের দায়িত্বে ছিল ৩৬ শিখ রেজিমেন্টের ২১ জন নন কমিশনড সেনা। এদের চার্জে ছিলেন হাবিলদার ইশর সিং। এক সময় শিখ রাজা রঞ্জিত সিং এইসব দুর্গম অঞ্চলগুলো সেখানকার জনজাতিদের থেকে জয় করে নিয়েছিলেন। পরে এইসব অঞ্চল ইংরেজদের হাতে আসে। কিন্তু ওইসব পার্বত্য অঞ্চলের জনজাতি এবং তাদের শাসকরা মাঝেমাঝেই হামলা চালাত ইংরেজদের উপর। সারাগারহি আদতে দু’দিকের দুটি দুর্গ ফোর্ট লকহার্ট ও ফোর্ট গুলিস্তানের মধ্যে সংবাদ আদানপ্রদানের জন্য ব্যবহৃত হত। সারাগারহি দুর্গের এর থেকে বেশি গুরুত্ব ছিল না। ১৮৯৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে স্থানীয় আফগান জনজাতি, আফ্রিদি জনজাতি, পাশতুন জনজাতির মানুষেরা একযোগে আক্রমণ করে সারাগারহি দুর্গ। ফোর্ট লকহার্টে সাহায্য চেয়ে বার্তা পাঠানো হলে সেখানকার দায়িত্বে থাকা কর্নেল হাউটন জানান তারা সেনা পাঠাতে অক্ষম কারণ, রাস্তা আফগান জনজাতিরা বন্ধ করে রেখেছে। এই অবস্থায় হাবিলদার ইশর সিংয়ের নেতৃত্বে ২১ জন শিখ সেনা আমৃত্যু লড়াইয়ের সিদ্ধান্ত নেয়। শেষ অবধি ২১ জনই বীরের মৃত্যু বরণ করেন।
ছবিতে গল্প এগিয়েছে একেবারে অনুভূমিক সরলরেখায়। মাঝে মাঝে ইশর সিংয়ের প্রেম, বিবাহ ইত্যাদি টুকরো টুকরো ঘটনা এসেছে ফ্ল্যাশব্যাকে। সবমিলিয়ে বোধহয় বার তিনেক। ছবি শেষ হয় ইশর সিংয়ের নায়কোচিত লড়াইয়ের মধ্যে দিয়ে মৃত্যুবরণ করায়।
আগেই বলেছি এ ছবিতে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত শুধুই অক্ষয়কুমার। তিনি পোড় খাওয়া অভিনেতা, ফলে নিঃসন্দেহে উৎরে গিয়েছেন। গল্প বলার ভঙ্গিতেও কোনও বিশেষত্ব নেই। মাঝে মাঝে কিছু আবেগঘন মূহূর্ত সৃষ্টিতে অবশ্য সক্ষম হয়েছেন পরিচালক ও চিত্রনাট্যকার অনুরাগ সিং। অংশূল চৌবের সিনেমাটোগ্রাফি ঠিকঠাক। এডিটিং নিয়েও আলাদা করে কিছু বলার নেই। সবমিলিয়ে কেশরী মাঝারিমানের একটি ছবি। তবে একটা কথা বলা দরকার। সিনেমার শুরুতে অফ ভয়েস বলে, শিখ রাজা রঞ্জিত সিং ভারতের এইসব অঞ্চলগুলি আফগান জনজাতিদের দখলমুক্ত করেন। বলার মতো বিষয় হল ১৮৯৭ সালে অখণ্ড ভারত বলে কোনও দেশের কোনও অস্তিত্বই ছিল না। ব্রিটিশরা প্রশাসনিকভাবে অনেকগুলি দেশীয় রাজ্যকে এক সীমানার মধ্যে এনেছিল ঠিকই, কিন্তু ভারতীয় জাতিসত্তার উন্মেষ তখনও ঘটেনি। ভারতীয় জাতিসত্তার উন্মেষ ঘটান মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী। ১৮৯৭ সালে তিনি তখনও দক্ষিণ আফ্রিকায়।
স্বস্তিনাথ শাস্ত্রী