বাধা ও অসফলতার জন্য চিন্তা। মানসিক টানাপোড়েনের মধ্যে কোনও ভালো যোগাযোগ পেতে পারেন। ... বিশদ
এদের লড়াইটা এক সময় শুরু হল পরিবতর্নশীল সমাজের সঙ্গে। বড় বড় শপিংমল নামক সিমেন্টের সৌধ, আলপিন থেকে এলিফ্যান্ট, কি নেই সেখানে? সেখানে একজন ছোট্ট মুদি, তাঁর চারটি বস্তা, ছ’টা বয়াম... কী নিয়ে লড়াই করবেন তিনি? এক বিবর্ণ, প্রাচীন দোকান নিয়ে শঙ্কর মুদিরা আর কতদিন এই অসম প্রতিযোগিতায় টিকিয়ে রাখতে পারবেন নিজেদের অতীত ঐতিহ্য? তবুও লড়ে যাচ্ছেন কেউ কেউ। আজও। অলিতে-গলিতে, কোনও ভেঙে পড়া বাড়ির পরিত্যক্ত কোণে, কোনও রকমে, শুধু মাত্র আন্তরিকতাকে সম্বল করে। এরকমই এক মুদিকে পর্দায় জীবন্ত করে তুলেছেন কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়। ‘ছুটির মেজাজে’ এই ছবিতে অভিনয় করা দাপুটে পরিচালক মুচকি হেসে বলেন, ‘যে মানুষটা পরিচালকের ভূমিকায় সারা বছর নিজের ছবির চাপ নিয়ে জেরবার হয়, সেই মানুষটিই অন্যের ফ্লোরে অভিনেতা সেজে তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করে আর একজন পরিচালকের করুণ অবস্থাটা।’ টানা পরিচালনার কাজে হাঁফিয়ে গেলে, অভিনয় করে নিজেকে তাজা করে নেন কৌশিক। ‘শঙ্কর মুদি’ তেমনই এক অক্সিজেন দেওয়া চরিত্র। এমন চরিত্রের মানুষের সঙ্গে নিজে বড় হয়ে উঠেছেন বলেই আত্মবিশ্বাসী কৌশিক বলেন, ‘এতদিন আমাকে সবাই গণেশ মণ্ডল বলছিল। এবার থেকে শঙ্কর মুদি বলবে।’ কৌশিক কি সিনেমার শঙ্কর মুদি? হেসে জবাব দেন কৌশিক, ‘আমিও খাতা নিয়ে যাচ্ছি। কখনও পরিচালক হিসেবে, কখনও অভিনেতা হিসেবে।’
সংসারের বাইরে গড়ে ওঠা এই সংসারটা হারিয়ে যাচ্ছে মানুষের জীবন থেকে। অথচ শঙ্কর মুদিদেরও তো নিজের সংসার থাকে। বউ থাকে। কী বলছেন শঙ্কর মুদির ‘বউ’ শ্রীলা মজুমদার? অনেকটা এই ধরণের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন পঁচিশ বছর আগে উৎপলেন্দু চক্রবর্তীর ‘চোখ’ ছবিতে। ওম পুরির সঙ্গে। একজন বিহারীর বউয়ের চরিত্রে। এটাও একজন বিহারী ঘরনির চরিত্র। স্বামী বহু বছর বাংলায় থেকে বাঙালি বনে গিয়েছে। সুখী দাম্পত্য। কিন্তু অভাব একটাই, কোনও সন্তান নেই। শ্রীলা বলেন, ‘দুটো চরিত্রর গুণগত মান তো আলাদা। এটা তো খানিকটা মূল্যবোধের ঘটনা। আমরা যে সংস্কৃতিতে অভ্যস্ত, সেটা ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে। আমরা এগিয়ে যাব বলে কি পিছনটাকে ভুলে যাব? সমাজ এগোক, সেইসঙ্গে সমঝোতাটাও জরুরি।’
আবার সমঝোতা করতে পারেন না বলেই বাংলা ছবির জন্য গান লেখেন না, সুর দেন না কবীর সুমন। ‘শঙ্কর মুদি’র সুরকার বলেন, ‘আমি ভাই তুই তোকারি করে গান লিখতে পারব না। নাপিতকে যদি বলা হয় বাড়ি বানাতে, তাতে বাড়ি ও নাপিতের যে দশা হবে, বাংলা সিনেমার গানেরও সেই দশা হয়েছে।’ এই প্রথম বাংলা ছবিতে কোনও সূত্রধরের মুখে গান শোনা যাবে। বিদিপ্তা চক্রবর্তীকে দিয়েও একটা গান গাইয়েছি।’ এই ছবির জন্য দুটি গান গেয়েছিলেন সদ্য প্রয়াত প্রতীক চৌধুরীও।
শঙ্কর মুদি কি রাজনৈতিক ছবি? ‘কেন নয়?’ সোজা হয়ে বসে পাল্টা প্রশ্ন করেন পরিচালক অনিকেত চট্টোপাধ্যায়। বলেন, ‘পরিকল্পনা করে আমাদের দেশে ছোট পুঁজিকে শেষ করার জন্য বড় পুঁজিকে বাইরে থেকে ঢোকানো হচ্ছে। এটা রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। সবকটা রাজনৈতিক দল স্বাধীনতার পর থেকে সাধারণ মানুষের উপর জোচ্চুরি চালিয়েছে। তাদের কথা যখন বলতে যাব, তখন ছবিটা রাজনৈতিক ছবি হয়ে যাবেই।’ পরিচালকের দাবি ‘প্রত্যেকের একটা সংরক্ষণ দরকার।’ তারই অভিমুখ আমাদের আশপাশ থেকে হারিয়ে যাওয়া শঙ্কর মুদিরা।
ছবি: দীপেশ মুখোপ্যাধ্যায়