বাধা ও অসফলতার জন্য চিন্তা। মানসিক টানাপোড়েনের মধ্যে কোনও ভালো যোগাযোগ পেতে পারেন। ... বিশদ
কলকাতায় কি প্রায়শই আসা হয়?
ছোট থেকে কলকাতাতেই বড় হয়েছি। কাজ থাকলে মুম্বই চলে যাই। নাহলে বেশির ভাগটা কলকাতাতেই থাকি।
তাহলে বাংলায় কাজ করতে এত দেরি হল কেন?
কেউ তো ডাকলই না। এখন অবশ্য পর পর দুটো বাংলা কাজ করলাম। সৌমিক সেনের ‘মহালয়া’য় আমি আকাশবাণীর স্টেশন ডিরেক্টর। ছোট রোল, অবাঙালি চরিত্র। ‘তারানাথ তান্ত্রিক’ এ বৃদ্ধ তারানাথের ভূমিকায় আমি। পুরো সিরিজটাই প্রায় ফ্ল্যাশব্যাকে। বাংলায় কাজ না পাওয়া প্রসঙ্গে মৃণালকাকাকে (মৃণাল সেন) নিয়ে একটা গল্প বলতে পারি।
কীরকম?
আমি দূরদর্শনে ‘মিস্টার ইয়া মিসেস’ নামে একটা ধারাবাহিক করতাম। তখন একদিন বম্বেতে মৃণালকাকার সঙ্গে দেখা হয়। উনি আমাকে বললেন, ‘তোমার মিস্টার ইয়া মিসেস দেখার পর আমি অন্তত তোমায় কখনও কাজ দেব না।’ শুনে খুব দুঃখ পেয়েছিলাম। একটু ভেবে মৃণালকাকাকে বলেছিলাম, আপনি তো ধারাবাহিকটা দেখার আগেও আমাকে কোনওদিন কাজের সুযোগ দেননি। পরেও দেবেন না। ‘তোমার থেকে এই জবাবটা আশা করিনি’ বলে কাকা খুব জোরে হেসেছিলেন। তবে শুধু মৃণাল সেন কেন বাংলা থেকে কেউই আমাকে কখনও কোনও কাজের প্রস্তাব দেয়নি।
আপনি তো বেশ সিলেক্টিভ। সেক্ষেত্রে তারানাথ তান্ত্রিক করার কারণ কী?
সত্যি কথা বলতে ‘তারানাথ তান্ত্রিক’ সম্পর্কে আমি কিছুই জানতাম না। তবে বাংলা আমার মাতৃভাষা নয়। বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কিছু রচনা আমি ইংরেজিতে পড়েছি। সত্তরের দশকের গোড়ায় যাদবপুরে পড়ার সময় আমি বাংলা শিখি। সেইসময় রাজনৈতিকভাবে কলকাতা খুবই উত্তাল ছিল। প্রচুর দেওয়াল লিখন হতো। সবই ছিল বাংলায়। মূলত সেগুলো পড়ার আগ্রহ থেকেই বিদ্যাসাগরের ‘বর্ণপরিচয়’ কিনে আমার বাংলা শেখা। এই কাজটা করছি তার প্রধান কারণ পরিচালক কিউ। একদিন হঠাৎ আমার বাড়িতে হাজির হয়ে বলল,‘তুমি তারানাথ তান্ত্রিক করছ। আমি তো অবাক। বললাম বিভূতিভূষণ বা তারাদাস কী লিখে গিয়েছেন সে তো কিছুই আমার জানা নেই। তাছাড়া এই অশক্ত শরীরে হিন্দি, ইংরেজি সংলাপই মনে রাখতে পারি না, সেখানে বাংলায় কাজ করব কী করে? মঞ্চ,পর্দা কোথাওই এখন আর অভিনয় করতে ভালো লাগেনা। অভিনয়ের প্রতি প্রেমটা হারিয়েই গিয়েছিল। কিন্তু কিউ এতো সহজে আমাকে দিয়ে বাংলায় কাজ করিয়ে নিল যে মনে হচ্ছে হারানো প্রেম ফিরে আসছে।
অভিনয় এখন আর ভালোলাগে না কেন?
বয়স হয়েছে তাই কুঁড়ে হয়ে গিয়েছি। আমি কোনওদিন কারও কাছে কাজ চাইনি। যা এসেছে, পছন্দ হলে তবেই করেছি। অভিনয় হোক বা সাহিত্য সবটাই মনের তাগিদে করেছি।
ছোটপর্দা থেকে বড়পর্দা আর এবার ওয়েব—সর্বত্রই ব্ল্যাক ম্যাজিক। অতিপ্রাকৃতের রমরমা। কী বলবেন সমাজ এগোচ্ছে?
না একেবারেই না। আমরা যে সময় কাজ করেছি তখনও যে সব কাজ ভালো হতো, তেমন নয়। দূরদর্শনের ‘রামায়ণ’, ‘মহাভারত’ও আমার ভালো লাগেনি। সত্যজিৎ রায়, মৃণাল সেন একবারই জন্মান। আসলে মাধ্যামটা দায়ী নয়। যাঁরা এগুলো তৈরি করছেন তাঁরা দায়ী। শিল্প হোক বা সাহিত্য উন্নত চিন্তার প্রতিফলন ঘটছে না সেভাবে। তারানাথ কিন্তু একটু হলেও স্বতন্ত্র।
ওয়েব সেন্সরশিপ বিষয়ে আপনার কী মত?
শিল্পে আবার সেন্সর কিসের? আপনি জানতে চাইছিলেন না আমরা এগোচ্ছি কিনা। এগোনোর বদলে আমরা পিছোচ্ছি।
নতুন নাটক লিখছেন?
নতুন নাটক লিখছি না। কয়েকটা মনোলগ লিখছি। সেগুলো আমার স্ত্রী পরিচালনা করবেন।
আপনার সব লেখাতেই কলকাতার প্রাধান্য কেন?
কলকাতা ছাড়া তো কিছু ভাবতেই পারিনা।কাজের সুবাদে মুম্বই বা বিদেশে থাকলেও লেখার সময় শুধু কলকাতা মনে আসে।
শেষ দেখা বাংলা ছবি?
‘ময়ূরাক্ষী’। বেশ ভালো কাজ। তবে আমি সবসময় মৃণাল সেনের ছবি দেখতে ভালোবাসি। ‘ইন্টারভিউ’, ‘কলকাতা ৭১’ আমার খুব প্রিয় ছবি।
মানসী নাথ