বাধা ও অসফলতার জন্য চিন্তা। মানসিক টানাপোড়েনের মধ্যে কোনও ভালো যোগাযোগ পেতে পারেন। ... বিশদ
‘ইফ ইউ কমিট ওয়ান মিসটেক বাই নট নোইং ইট, দেন ইউ কমিট টেন মিসটেকস বাই নট লুকিং ইনটু ইট।’ অনবদ্য এই কথাটি বলেছিলেন প্রাক্তন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিল। ডায়াবেটিস বা মধুমেহ বা চলতি কথায় সুগার রোগে এই কথাটি খুব গুরুত্বপূর্ণ। ডায়াবেটিকদের দেখার সময় কোন কোন অঙ্গে তা প্রভাব ফেলতে পারে, তা চিকিৎসকদের আগে খেয়াল রাখা উচিত। কখনও পরিস্থিতি এমনও জায়গায় পৌঁছে যায় যে পা কেটে বাদ দিতে হয়। শুনতে আশ্চর্য লাগলেও এটাই বাস্তব। ‘ডায়াবেটিক ফিট’ এড়াতে তাই আমরা বলি, আগে পায়ের যত্ন, তারপর মুখের। গোটা পৃথিবীর প্রায় ৪০ শতাংশ দুর্ঘটনা ছাড়া পা বাদ যাওয়ার কারণই সুগার। প্রতি ৩০ সেকেন্ডে সুগারে মানুষের একটি করে পা বাদ যাচ্ছে।
ডায়াবেটিক ফিট কী?
ডায়াবেটিসে দেহের স্নায়ুর সংবেদনশীলতা কমে পায়ে দ্রুত কড়া বা ফুট কর্ন বা কেলাস তৈরি হয়। খালি পায়ে হাঁটলে সেগুলি ফেটে যায়। ধুলো ঢোকে, সংক্রমণ হয়। ফলে পায়ে ঘা তৈরি হয়। আলসারের পরিচর্যা না হলে তা গোটা পায়ে ছড়ায় ও পুঁজ হয়। পরবর্তী সময়ে তাতে গ্যাংগ্রিন হয়ে পচতে শুরু করবে। তখন ব্যাকটেরিয়ার টক্সিন বা বিষ পা থেকে সারা শরীরে ছড়াবে। রোগীর প্রাণ নিয়ে টানাটানি পড়ে যাবে। ফলে রোগীকে বাঁচাতে পা কেটে বাদ দিতে হয়।
কেন হয়?
নিউরোপ্যাথি: নিউরোপ্যাথিতে পায়ের বোধশক্তি কমে। গরম বা ঠান্ডা বস্তুর স্পর্শ রোগী বোঝেন না। ছোট ক্ষত বড় হতে থাকে। বোধশক্তি না থাকায় পায়ে ছোটখাট কিছু ফুটে গেলেও রোগী বুঝতে পারেন না। তৈরি হয় বড় ক্ষত।
পেরিফেরাল ভাস্কুলার ডিজিজ: পায়ের হাড় ও কোষগুলিকে বাঁচাতে সঠিক মাত্রায় রক্তপ্রবাহ প্রয়োজন। ডায়াবেটিকদের এই রক্তপ্রবাহে ব্যাঘাত ঘটে। সহজেই পায়ে ক্ষত সৃষ্টি হয়, সহজে সারে না। রক্তপ্রবাহ একেবারে বন্ধ হলে পায়ে গ্যাংগ্রিন হয়। ব্যবস্থা না নিলে ওই অংশ কেটে ফেলতে হয়।
পায়ের তলায় ক্র্যাক বা ফাটল: দীর্ঘদিনের ডায়াবেটিকদের পায়ের তলার চামড়া শুকিয়ে ফাটল তৈরি হয়। ফাটলগুলো দিয়ে রোগ-জীবাণুর সংক্রমণ ঘটে।
চিকিৎসা
বিভিন্ন হাসপাতালে ডায়াবেটিক ক্লিনিকের সঙ্গে ফুট ক্লিনিকও থাকে। সেই ক্লিনিকে পা পরীক্ষা করা হয়।
প্রতিরোধে কী করবেন?
১. ফুট মিরর দিয়ে পায়ের তলা দেখা উচিত। ২. খালি পায়ে হাঁটবেন না। ঘরে নরম জুতো ও বাইরে কভার দেওয়া, ভালো ফিট হওয়া জুতো পরবেন। ৩. পায়ের আঙুলের ফাঁকে ছত্রাক জমে। সেজন্য কাজ থেকে ফিরে সাবান-জল দিয়ে পা ধুয়ে শুকনো তোয়ালে দিয়ে মোছা উচিত। ৪. এক দিন অন্তর মোজা কাচতে হয়। শুকতলা খয়ে যাওয়া জুতো পরা উচিত নয়। ৫. ঘা হলে সাধারণ সালাইন দিয়ে ড্রেসিং করতে হয়। আলসারে অ্যান্টিবায়োটিক ক্রিম লাগিয়ে কিছু কাজ হয় না। ৬. পা নরম রাখতে ও শুষ্ক হওয়া রুখতে পেট্রলিয়াম জেলি, ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন। ৭. ব্যথা হলে গরম সেঁক দেওয়া বারণ। সুগারে পায়ে সাড় না থাকায় দুম করে গরম সেঁক দিলে ফোস্কা পড়ে যায়। তখন পায়ের চামড়া উঠে গিয়ে ধুলো-বালি ঢুকে ইনফেকশন হতে পারে।
৮. বিভিন্ন ধর্মীয় স্থানে যেতে গেলে খালি পায়ে অনেকটা হাঁটতে হয়। তখন পা কেটে বা পেরেক ফুটলে আলসার হতে পারে। চাষিরা খালি পায়ে হাঁটেন বলেও বিষক্রিয়া হতে পারে।
লিখেছেন দেবজ্যোতি রায়
পৃষ্ঠাসজ্জায়: সুব্রত মাজী, চন্দন পাল