বিদ্যার্থীদের শুভদিন। উচ্চ/ উচ্চতর বিদ্যালাভে উন্নতি। ব্যবসায়িক কর্মে বাধা। বন্ধুর শত্রুতায় মনঃকষ্ট। ... বিশদ
ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি কী?
রেটিনা হল চোখের পিছনের ভাগের নার্ভ সমষ্টি। এই অংশই বাইরের আলোকে রূপান্তরিত করে বৈদ্যুতিক সংকেতে। আমাদের মস্তিষ্ক এই সংকেতমালা বিশ্লেষণ করে তৈরি করে চিত্র। এই চিত্রই আমরা দেখি! রেটিনার উপরে অসংখ্য রক্তনালিকা বা ব্লাড ভেসেলস থাকে। এই রক্তনালিকাগুলো রেটিনাতে অক্সিজেন এবং পুষ্টি পৌঁছে দেয়। ডায়াবেটিস থাকলে এই সমস্ত রক্তনালিকা বিভিন্নভাবে প্রভাবিত হতে শুরু করে। বিশেষ করে ডায়াবেটিস অনিয়ন্ত্রিত থাকলে সমস্যা আরও বেশি হয়। পরিবর্তনগুলো যদি মারাত্মক ধরনের হয়ে থাকে তাহলে তা রেটিনাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং দৃষ্টিশক্তি ধীরে ধীরে ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর হতে থাকে।
চিকিৎসাহীন ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি দৃষ্টিশক্তি হারানোর অন্যতম কারণ। ওষুধ, খাদ্যাভ্যাস নিয়ন্ত্রণ, ইনসুলিনের সাহায্যে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করার পরেও ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি হওয়ার ঝুঁকি থেকেই যায়।
প্রাথমিক রেটিনোপ্যাথি: এই পর্যায়ে ডায়াবেটিস রেটিনার অবস্থিত রক্তনালীকে প্রভাবিত করতে শুরু করে। রক্তনালীগুলি সামান্য স্ফীত হয়। রক্ত ও তরল ক্ষরণ হয়। রোগীর দৃষ্টিশক্তি প্রভাবিত না হলেও, টেস্ট থেকে বোঝা যায়, চোখে পরিবর্তন ঘটে দৃষ্টিশক্তি নষ্ট হতে পারে।
প্রলিফারেটিভ রেটিনোপ্যাথি: এই পর্যায়ে রেটিনার বিস্তৃত অংশ যথাযথ মাত্রায় রক্ত সরবরাহ থেকে বঞ্চিত হয়। সঠিক সময়ে চিকিৎসা না করালে দৃষ্টিশক্তি হারানোর ঝুঁকি থাকে।
ম্যাকুলোপ্যাথি: ম্যাকুলা হল রেটিনার কেন্দ্রস্থ সেই ক্ষুদ্র অংশ যা ব্যবহার করে আমরা সবকিছু পরিষ্কারভাবে দেখতে পাই।
ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি যখন ম্যাকুলাতে বা ম্যাকুলার চারপাশে হয় তখন তাকে ম্যাকুলোপ্যাথি বলা হয়।
ভিট্রিয়াস হেমারেজ: প্রলিফারেটিভ ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথির চিকিৎসা না করালে রক্তনালী থেকে রক্তক্ষরণ শুরু হয়। ফলে চোখের দৃষ্টি ক্রমশ ক্ষীণ হতে শুরু করে। সবশেষে দৃষ্টিশক্তি নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।
ট্রাকশনাল রেটিনাল ডিটাচমেন্ট: এই অবস্থায় রেটিনার পর্দা ছিঁড়ে যায় ও দৃষ্টিশক্তি নষ্ট হতে পারে।
কাদের ঝুঁকি বেশি?
দীর্ঘ সময়ের ডায়াবেটিক সুগারের সঙ্গে হাই প্রেশার।
কিডনির সমস্যাও রয়েছে। ডায়াবেটিসের রোগী সন্তানসম্ভবা হলে।
রোগ প্রতিরোধ:
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করলে রেটিনোপ্যাথির ঝুঁকি কমে। এছাড়া চোখের রেটিনোপ্যাথি স্ক্রিনিং নিয়মিত করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি জটিল অবস্থায় না পৌঁছানো পর্যন্ত তেমন কোনও লক্ষণ প্রকাশ পায় না।
অবশ্য করণীয়:
প্রতিবছর ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি স্ক্রিনিং।
ব্লাড সুগার ও এইচবিএ১সি নিয়ন্ত্রণ। রক্তচাপ বেশি থাকলে ওষুধের সাহায্যে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
রক্তে কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখুন।
দৃষ্টিশক্তির নতুন সমস্যায় রেটিনা পরীক্ষা করে নিতে হবে।
স্বাস্থ্যকর এবং সুষম আহার করা প্রয়োজন।
অতিরিক্ত ওজন কমান।
নিয়মিত ব্যায়াম করুন।
ধূমপানের অভ্যেস ছাড়ুন।
চিকিৎসা—
প্রাথমিক রেটিনোপ্যাথিতে কোনও চিকিৎসার প্রয়োজন হয় না। তবে দৃষ্টিশক্তি ব্যাহত হলে অবশ্যই খতিয়ে দেখতে হবে। ডায়াবেটিকদের ২ থেকে ৪ মাস অন্তর রেটিনা স্ক্রিনিং করিয়ে নেওয়া প্রয়োজন এবং রক্তে শর্করার মাত্রা সঠিক রাখা দরকার। কারণ ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথিতে চিকিৎসার চাইতেও প্রতিরোধ খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তবে চিকিৎসা রয়েছে। চিকিৎসা পদ্ধতির নাম লেজার চিকিৎসা বা লেজার ফটোকোয়াগুলেশন।