গৃহে শুভকর্মের প্রস্তুতি ও ব্যস্ততা। হস্তশিল্পীদের নৈপুণ্য ও প্রতিভার বিকাশে আয় বৃদ্ধি। বিদ্যায় উন্নতি। ... বিশদ
মাতৃদুগ্ধের উপকারিতা
মাতৃদুগ্ধ শিশুর সম্পূর্ণ আহার। পুষ্টিগুণে পরিপূর্ণ। মাতৃদুগ্ধে শিশুর বৃদ্ধির জন্য উপযুক্ত পরিমাণে প্রোটিন, ফ্যাট, কার্বোহাইড্রেট, ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ থাকে। এছাড়া মায়ের দুধে থাকা অ্যান্টিবডি বাচ্চাকে বহু সংক্রমণ থেকে বাঁচায়।
বাচ্চার অতিরিক্ত মোটা হওয়া আটকায়।
মাতৃদুগ্ধ শিশুর জন্য সহজপাচ্য ও সহজলভ্য।
শিশুর বুদ্ধিবৃত্তির বিকাশে সাহায্য করে।
শিশুমৃত্যু কমায়।
মায়ের দুধ সারাবছরে পাঁচ বছর বয়সের নীচে প্রায় আট লক্ষেরও বেশি শিশুর প্রাণহানি রোধ করতে পারে।
মায়ের দুধ শিশুর বুদ্ধি বা আইকিউ তিন থেকে চার অঙ্ক বাড়াতে পারে।
মাতৃদুগ্ধে থাকা ল্যাকটোফেরিন অন্ত্রে খারাপ ব্যাকটেরিয়া জন্মাতে দেয় না। আইজিএ সংক্রমণ ও এলার্জি থেকে বাঁচায়। আবার দুধে থাকা
লাইসোজাইম বাচ্চাকে ই কোলাই ও সালমোনেল্লার মতো ব্যাকটেরিয়ার হাত থেকেও রক্ষা করে। বিফিডাস ফ্যাক্টর উপকারী ল্যাকটোব্যাসিলাস ব্যাকটেরিয়া জন্মাতে সাহায্য করে।
মায়ের দুধে থাকা ফ্যাট শিশুর ব্রেন ও স্নায়ুতন্ত্র বিকাশে সাহায্য করে।
ল্যাকটোজ উপকারী ব্যাকটেরিয়া জন্মাতে সাহায্য করে ও ক্যালশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম ও ফসফরাসের আত্তীকরণে সাহায্য করে।
কোন কোন রোগ দূরে রাখে?
শিশুকে অসংখ্য অসুখ থেকে দূরে রাখে মায়ের দুধ।
এলার্জি, একজিমা, ইউরিন ইনফেকশন, ইনফ্লামেটারি বাওয়েল ডিজিজ, পেটের সংক্রমণ, কানের সংক্রমণ, হিমোফিলিস, ইনফ্লুয়েঞ্জা, মেনিনজাইটিস, নেক্রোটাইসিং, এন্টেরোকোলাইটিস, নিউমোনিয়া, সেপসিস, সাডেন ইনফ্যান্ট ডেথ সিন্ড্রোম, হজকিন লিম্ফোমা সহ আরও বহু অসুখ। ব্রেস্টফিডিং করানোর সুফল আরও রয়েছে।
মায়ের জন্য—
জন্মের পর ব্রেস্ট ফিডিং করালে তা ইউটেরাসের সংকোচনে সাহায্য করে ও রক্তপাত কমায়।
স্বাভাবিকভাবে গর্ভনিরোধকের কাজ করে।
ব্রেস্ট ও ওভারির ক্যান্সার আটকাতে সাহায্য করে।
শিশু ও মায়ের মধ্যে সম্পর্ক দৃঢ় করে। এভাবে বছরে ২০ হাজার মায়ের প্রাণহানি আটকানো সম্ভব।
মায়েদের সুগার প্রতিরোধে সাহায্য করে।
পরিবারের জন্যে
অর্থ সাশ্রয় করে।
পরিবার পরিকল্পনায় সাহায্য করে।
হাসপাতালে ভর্তির হার কমায়।
শিশুমৃত্যু রোধে অবদান রয়েছে।
মুশকিল হল, প্রথম মা হওয়ার পর মেয়েদের মনে নানা দ্বিধা দ্বন্দ্ব কাজ করে। ভয় থেকে যায় যে বাচ্চা ঠিকভাবে ব্রেস্টফিড করছে কি না। এছাড়া বাচ্চা সত্যিই দুধ খাচ্ছে কি না, তা বোঝাও মায়ের কর্তব্য। তা বোঝারও উপায় রয়েছে।
কী করে বুঝবেন বাচ্চা ঠিকমতো বুকের সঙ্গে যুক্ত?
বাচ্চার মুখ খোলা থাকবে।
নিপল ও অ্যারিওলার বেশিরভাগ অংশ বাচ্চার মুখে থাকবে এবং নীচের অ্যারিওলা দেখা যাবে না।
বাচ্চার থুতনি ব্রেস্টে ঠেকে থাকবে।
নীচের ঠোঁট সামান্য উল্টে থাকবে।
শিশু কতবার ব্রেস্টফিড করবে?
যতবার ইচ্ছে করতে পারে। বাচ্চা যতবার খিদেয় কাঁদবে, ততবার খাওয়ান।
এমনিতে দুই থেকে তিন ঘণ্টা অন্তর আট থেকে ১০ বার বাচ্চাদের খাওয়াতে হবে।
অবশ্যই রাতে ব্রেস্টফিড করান।
কী করে বুঝবেন সন্তান দুগ্ধপান করে সন্তুষ্ট?
প্রতিবার খাওয়ার পর বাচ্চা ঘুমিয়ে যাবে ও দুই থেকে তিন ঘণ্টা ঘুমোবে।
ছয় থেকে আটবার প্রস্রাব করবে।
রোজ ২৫-৩০ গ্ৰাম করে ওজন বাড়বে।
মাতৃদুগ্ধ কত প্রকার ও কী কী ?
১. কোলোস্ট্রাম: এটি মা-এর প্রথম দুধ, গাঢ় এবং হলুদ রঙের।
২. অন্তর্বর্তীকালীন দুগ্ধ: তিন থেকে চারদিন পর থেকে শুরু করে দ্বিতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত পাওয়া যায়।
৩. পরিণত দুগ্ধ: অন্তর্বর্তীকালীন দুগ্ধের পর এটি তৈরি হয়। অপেক্ষাকৃত তরল ও বাচ্চার বৃদ্ধিতে সহায়ক।
৪. অপরিণত বাচ্চাদের জন্য দুগ্ধ: খুব ছোট বাচ্চাদের মায়ের দুধে প্রোটিন, পুষ্টি, খনিজ অনেক বেশি পরিমাণে থাকে।
৫. প্রাথমিক দুগ্ধ: প্রথমে বেশি নিঃসৃত তরল দুধ, যা শিশুর তৃষ্ণা মেটায়।
৬. পরবর্তী দুগ্ধ: পরে নিঃসৃত অপেক্ষাকৃত ঘন দুধ যা শিশুর ক্ষুধা মেটায়।
কোলোস্ট্রাম কী এবং কীভাবে শিশুর উপকার করে?
কোলোস্ট্রাম হল ঘন হলুদ রঙের প্রথম দুধ, যা শিশুর জন্মের পর মায়ের শরীরে উৎপন্ন হয়।
কোলোস্ট্রাম পুষ্টিগুণে ও অ্যান্টিবডিতে সমৃদ্ধ যা শিশুকে সম্পূর্ণ পুষ্টি প্রদান করে এবং অসুস্থতা ও সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে।
ব্রেস্টফিডিং সম্পর্কিত কাল্পনিক কথা—
ঘন ঘন দুধ পান করালে দুধের উৎপাদন কমে যাবে।
প্রথম ঘন ও হলুদ দুধ কোলোস্ট্রাম শিশুর জন্য ভালো নয়।
ব্রেস্টফিডিং করানোর সময় পাঁচ-দশ মিনিটের মাথায় শিশু তার প্রয়োজনীয় সমস্ত দুধ পেয়ে যায়।
একবার ব্রেস্টফিড করানোর পর মায়ের শরীরে দুগ্ধ সঞ্চয়নের জন্য কিছুটা সময় বিরতি হিসেবে দেওয়া উচিত।
ব্রেস্টফিড করানোর সঙ্গে যুক্ত সমস্যাগুলি
উল্টো বা চ্যাপ্টা নিপল: দিনে কয়েক বার হালকা করে টানলে তা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে।
ফাটা বা ব্যথা হওয়া নিপল: বাচ্চা শুধুমাত্র নিপল থেকে খেলে মা-এর এই ধরনের সমস্যা হতে পারে। শিশুকে সঠিকভাবে বুকে ধরালে এমন হবে না।
বুকে দুধ জমে যাওয়া: এর ফলে বুক ভারী বা ব্যথা হতে পারে। বাচ্চাকে ঘনঘন দুধ খাওয়ান। বেশি ব্যথা হলে উষ্ণ জলে কাপড় ভিজিয়ে বুকে রাখুন।
বুকে পুঁজ জমে যাওয়া: এতে মায়ের জ্বর আসে ও তীব্র ব্যথা হয়। এই সময় শিশুকে অন্য বুকে খাওয়ান। চিকিৎসা বলতে রয়েছে পুঁজ বের করা ও অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়া।
দুধ না হওয়া: বারবার শিশুকে দুধ খাওয়ান। শিশু যদি ওজনে বাড়ে, জানবেন দুধের পরিমাণ ঠিকই আছে। রাতে দুধ খাওয়ান।
উইনিং কী?
উইনিং হল শিশুর জন্মের ছয় মাস পর ধাপে ধাপে পরিপূরক ভারী খাবার ও তরলের সঙ্গে সঙ্গে মায়ের দুধ চালানো।
ব্রেস্টফিডিং-এর পথে বাধা কী কী?
একটি এনএফএইচএস সার্ভে অনুযায়ী, ভারতের ছয় মাসের নীচের শিশুদের ব্রেস্টফিডিং-এর হার মাত্র ৫৫ শতাংশ।
১. ব্যক্তিগত ভুল ধারণা: সঠিক জ্ঞানের অভাব, ব্রেস্টফিড করানোর লজ্জা, ‘পর্যাপ্ত দুধ হচ্ছে না’ এইসব ভুল ধারণা ভুল সামাজিক চিন্তা।
২. পরিবারগত সমস্যা: পরিবারের সাহায্য না পাওয়া, অত্যধিক কাজের চাপ।
৩. সামাজিক সমস্যা: কম বয়সে বিয়ে হয়ে যাওয়া। জনসচেতনতার অভাব, সামাজিক কারণে বাচ্চাদের মধু, গোরুর দুধ ইত্যাদি খাওয়ানো, দারিদ্র্য।
৪. প্রাতিষ্ঠানিক সমস্যা: ব্রেস্টফিড করানোর জায়গার অভাব, কর্মরতা মায়েদের ছুটির মারাত্মক সমস্যা। অনেককেই ছ’মাসের বহু আগেই কাজে যোগ দিতে হয়। এছাড়া সহকারীদের সাহায্য না পাওয়াও একটা বড় কারণ। আরও একটা বড় কারণ হল, বাণিজ্যিক গুঁড়ো দুধের সহজলভ্যতা।
একনজরে
জন্মের সঙ্গে সঙ্গে মাতৃদুগ্ধ পান।
কোলোস্ট্রাম অবশ্যই খাওয়ান।
মা যে কোনও অবস্থায় স্তন্যপান করাতে পারেন।
দিনে ও রাতে ব্রেস্টফিড করান।
শিশুকে প্রথমে একটি বুকে সম্পূর্ণ খাওয়ান, তারপর অন্যটিতে।
ছয় মাস পর্যন্ত শুধুমাত্র মাতৃদুগ্ধ পান।
মিছরির জল, মধু, গোরুর দুধ, গুঁড়ো দুধ কখনওই খাওয়াবেন না।
কখনওই বোতলে খাওয়াবেন না।