বিদ্যায় অধিক পরিশ্রম করতে হবে। ব্যবসায় যুক্ত ব্যক্তির পক্ষে দিনটি শুভ। প্রেম-প্রীতিতে আগ্রহ বাড়বে। নতুন ... বিশদ
সোয়াইন ফ্লুতে হোমিওপ্যাথি
ঘরে থাক জরুরি ওষুধ:
যে কোনও ভাইরাসজনিত অসুখে হোমিওপ্যাথি ওষুধ খুব ভালো কাজ করে। সোয়াইন ফ্লু’র ক্ষেত্রেও হোমিওপ্যাথি কার্যকরী। আমরা জানি চিকিৎসার তুলনায় রোগ প্রতিরোধই সেরা উপায়।
রোগ প্রতিরোধে ওষুধ—
ওসিলোকক্সিনাম ৩০, ২০ মাত্রার চারটি করে দানা দিনে একবার করে পাঁচদিন খেতে পারেন। আপনার এলাকায় ফ্লু দেখা দিলে, একমাস পরে একই নিয়মে এই ওষুধ খেতে পারেন। এছাড়া আর্সেনিক অ্যালবা ৩০ ওষুধটিও প্রতিষেধক হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন।
রোগ সারাতে ওষুধ—
আর্সেনিক অ্যালবাম: রোগী মানসিকভাবে উদ্বিগ্ন, অস্থির, ক্লান্ত, জল পিপাসা আছে, একটু একটু করে বারাবার জল পান করেন, নাক দিয়ে জল পড়া, জ্বালাভাব সঙ্গে বমি, পায়খানা হলে এই ওষুধটি খাওয়ানো যায়।
ইউপটেরিয়াম পারপিউরাম: সারা শরীরে ব্যথা, হাড়ে ব্যথা, জল পিপাসা আছে, কিন্তু ঠান্ডা ভাবের জন্য জল পান করতে পারেন না।
জেলসিমিয়াম: রোগী খুব দুর্বল, তন্দ্রাচ্ছন্ন, শুয়ে থাকতে চান এবং জলপিপাসা থাকে না—এমন লক্ষণে এই ওষুধ কার্যকরী।
ব্রায়োনিয়া অ্যালবা: নাক দিয়ে জল পড়া, গা-হাত-পা-মাথা ব্যথা থাকলে, রোগী চুপচাপ শুয়ে থাকতে চাইলে, জিভ, ঠোঁট শুকিয়ে যাওয়া এবং সঙ্গে জলপিপাসা বোধ থাকলে এই ওষুধ দেওয়া যায়।
রাসটাকস: রোগীর গা, হাত, পা ব্যথা, অস্থিরতা, শুয়ে থাকতে চান না, জল পিপাসা আছে, এমন লক্ষণে এই ওষুধটি খাওয়া যায়। এছাড়া রোগলক্ষণ অনুযায়ী নাক্সভোমিকা, ইনফ্লুয়েঞ্জিনাম, ব্যাপটিসিয়া, ডালকামারা ইত্যাদি ওষুধ কার্যকরী।
সোয়াইন ফ্লুতে আয়ুর্বেদ
তুলসী: বর্তমানে নানা বৈজ্ঞানিক গবেষণায় তুলসীর ‘অ্যান্টি ফ্লু প্রপার্টি’র প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে। সোয়াইন ফ্লু দূরে রাখতে নিয়মিত দুই থেকে পাঁচটি তুলসীর পাতা খেতে হবে। এছাড়া তুলসী, আদা, মরিচ, লবঙ্গ অল্প অল্প (তিন গ্রাম) পরিমাণে নিয়ে জলে ফুটিয়ে ক্বাথ তৈরি করে নেওয়া যায়। এই ক্বাথ মধু মিশিয়ে সপ্তাহে অন্তত তিন দিন পান করলে উপকার হয়। এছাড়া তুলসী চা হিসেবে বা ফল অথবা স্যালাডেও মেশানো যায়। এ তো গেল তুলসীর প্রতিরোধক দিক; আর যদি সোয়াইন ফ্লু ধরা পড়ে তবে দ্রুত নিরাময়ের জন্য এই তুলসী যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। এটি জ্বর নিয়ন্ত্রণে রাখে, মেটাবলিজম বাড়ায়, নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া কমাতে সাহায্য করে এবং মিউকাস মেমব্রেনের ইনফ্লামেশন কমায়। অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট যুক্ত তুলসী দেহের ইমিউনিটি বাড়াতে সাহায্য করে।
হলুদ: হলুদ এইচ১এন১ ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে খুবই কার্যকর। হলুদের রস অথবা দুধের সঙ্গে অল্প মাত্রায় হলুদ মিশিয়ে পান করা যায়। হলুদ শতকরা ৯০ ভাগ পর্যন্ত ভাইরাসের বৃদ্ধি দমন করতে পারে। হলুদের কারকিউমিন নামক যৌগটি অ্যান্টি-মাইক্রোবিয়াল গুণযুক্ত।
গুলঞ্চ: সোয়াইন ফ্লু নিয়ন্ত্রণে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ভেষজ হল গুলঞ্চ। এটি অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট তো বটেই, সেই সঙ্গে অ্যান্টিসেপটিক, অ্যানালজেসিক (ব্যথা কমায়) এবং অ্যান্টিপাইরেটিক (জ্বর কমায়)। গুলঞ্চ রস সামান্য পিপুল চূর্ণ ও মধু মিশিয়ে খেলে জ্বর কমে। শরীরের জ্বালাভাব, দূর্বলতা কমে এবং অরুচি কম হয়। কিছু কিছু বৈজ্ঞানিকের মতে গুলঞ্চ ও তুলসীর রস একত্রে পান করলে রক্তের প্লেটলেটের সংখ্যা বাড়ে।
আমলকী: আমলকী রোজ খেলে এই রোগের আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। আমলকী ইমিউনিটি বাড়ায়। ফলে সহজে ভাইরাস সংক্রমণ হয় না।
যষ্টিমধু: এর চূর্ণ তিন থেকে ছ’গ্রাম মাত্রায় খেলে উপকার হয়। যষ্টিমধু অ্যান্টি-ভাইরাল গুণযুক্ত। এটি মধুসহ খেলে (সোয়াইন ফ্লু’র কারণে ক্ষতিগ্রস্ত) গলার মিউকাস মেমব্রেনের ইনফ্লামেশন কমে।
চা: সোয়াইন ফ্লুতে গলা ব্যথা এবং গলার মিউকাস মেমব্রেনের প্রদাহ কমাতে কয়েক ফোঁটা লেবুর রস মেশানো চা খেলে উপকার হয়। এই চায়ে হালকা গরম অবস্থায় একটু মধু মিশিয়ে নিতে হবে।
সোয়াইন ফ্লু-এর গুরুত্বপূর্ণ আয়ুর্বেদিক ওষুধ:
১. লক্ষ্মীবিলাস রস ২. ত্রিভুবনকীর্তি রস ৩. সঞ্জীবনী বটী ৪. আনন্দভৈরব রস এবং ৫. সিতোপলাদি চূর্ণ।
এই রোগে প্রাণহানির উল্লেখযোগ্য কারণগুলো হল নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট, প্রবল জ্বর, ডি-হাইড্রেশন এবং রেনাল ফেলিওর। তাই জ্বর যাতে না বাড়ে এবং শ্বাসকার্য স্বাভাবিক থাকে, সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। যদি বেশি বমি ও ডায়ারিয়া হয় তবে উপরোক্ত ভেষজগুলো সাময়িকভাবে বন্ধ রেখে আগে ডি-হাইড্রেশনের চিকিৎসা করানো দরকার। কোনও ব্যক্তি আক্রান্ত রোগীর কাছে গেলে, তাঁর এই রোগ হবার আশঙ্কা থাকে। তাঁরা প্রতিষেধক হিসেবে এই সব ভেষজ ব্যবহার করলে উপকার পাবেন। সোয়াইন ফ্লু রোগ নিয়ন্ত্রণে খাওয়ার আগে ভালোভাবে হাত ধোওয়া জরুরি, হ্যান্ড ওয়াশ হিসেবে কর্পূর মিশ্রিত জল খুবই কার্যকর। ভাইরাস দমনে ঘরে নিম, ধুনো ও গুগ্গুলের ধোঁয়া দিলে উপকার পাওয়া যায়।
যে কোনও চিকিৎসা পদ্ধতিতেই ডাক্তারবাবুর পরামর্শ মেনে ওষুধ খাওয়াই বাঞ্ছনীয়।