বাধা ও অসফলতার জন্য চিন্তা। মানসিক টানাপোড়েনের মধ্যে কোনও ভালো যোগাযোগ পেতে পারেন। ... বিশদ
আয়ুর্বেদে সব ধরনের শরীর রোগ, মানসরোগ ও তার প্রতিকার নিয়েই আলোচনা করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, আলোচনা রয়েছে এই ধরনের রোগের প্রতিরোধ নিয়েও। রয়েছে রোগে পড়ার আগেই শরীর মনকে সুস্থ ও সক্ষম রাখায় উপায়।
আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে মেধ্য রসায়ন বলে একটি শব্দ উল্লেখ করা হয়েছে যায় সাধারণ অর্থ হল মস্তিষ্ক, স্নায়ু বা স্নায়ুতন্ত্রকে অর্থাৎ নার্ভাস সিস্টেমকে সবল ও সক্ষম রাখার জন্য দ্রব্য।
এই মেধ্য দ্রব্যগুলির মধ্যে সহজলভ্য ও বিশেষ কার্যকরী হল, ব্রাহ্মী, থানকুনি, যষ্টিমধু, শঙ্খপুষ্পী, গুড়ুচী, কুষ্মাণ্ড, জ্যোতিষ্মতী ইত্যাদি। এছাড়া আয়ুর্বেদে আরও অনেক দ্রব্যে উল্লেখ করা হয়েছে যেগুলি প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে মস্তিষ্ক ও স্নায়ুতন্ত্রের ওপর ভালো কাজ করে।
ব্রাহ্মী: স্যাঁতসেঁতে জলা জায়গায় জন্মায় ব্রাহ্মীশাক। ছোট পুরু পাতাযুক্ত লতানো গাছ। কলপাড়ে, কুয়াপাড়ে এই শাকের দেখা সহজেই মেলে। ব্রাহ্মীর বৈজ্ঞানিক নাম বাকোপা মনিএরা এবং এটি স্কোফুলেরিয়েসি গোত্রভুক্ত উদ্ভিদ। ব্রাহ্মী সংস্কৃত শব্দ এবং এর অর্থ হল স্মৃতিশক্তি বর্ধক। এই শাক কাঁচা অবস্থায় ভালো করে ধুয়ে নিয়ে তার পাতা ও ডাঁটা ভালো করে রস করে এবং সেই রস ছোটরা এক থেকে দুই চামচ এবং বড়রা দুই থেকে চার চামচ সকালে খালিপেটে খেতে পারে। ব্রাহ্মী স্মরণশক্তি যেমন বাড়াতে সাহায্য করে তেমনি মস্তিষ্ক ও স্নায়ুর অতিসক্রিয়তা অবস্থাকে প্রশমিত করতে সাহায্য করে। এইজন্য এটি উন্মাদ রোগে এবং অপস্মার বা খিঁচুনি (সিজার ডিসঅর্ডার) রোগের চিকিৎসায় আয়ুর্বেদিক ঔষধ হিসাবে ব্যবহার করা হয়।
থানকুনি: থানকুনি পাতা বাজারে সহজেই দেখা মেলে। এর সংস্কৃত নাম মণ্ডুকপর্ণী অর্থাৎ এর পাতা ব্যাঙের মাথার মতো দেখতে, বলে একে মণ্ডুকপর্ণী বলে। বৈজ্ঞানিক নাম সেনটেলা এশিয়াটিকা এবং অ্যাম্বেলিফেরি গোত্রভুক্ত উদ্ভিদ। থানকুনি পাতার রস বা পাতা বাটা আমাশা বা অ্যামিবায়েসিস রোগে ব্যবহার করা হয় তা অনেকে জানেন কিন্তু থানকুনির পাতা এবং ডাঁটার রস মস্তিষ্কের ধারণ ক্ষমতা বা ধৃতি বাড়াতে সাহায্য করে। এছাড়া মস্তিষ্ক এবং স্নায়ুতন্ত্রের উপর এই শাকের কার্যকারিতা আছে বলে একে বিভিন্ন মানসরোগের চিকিৎসায় আয়ুর্বেদিক বিভিন্ন ওষুধের উপাদান হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
শঙ্খপুষ্পী: এই গাছটির ফুল শঙ্খের মতো সাদা এবং দেখতে বলে একে শঙ্খপুষ্পী বলে। গাছটি সাধারণত পাথুরে মাটিতে হয়। বৈজ্ঞানিক নাম কনভলভুলাস প্লুরিকাওলিস এবং কনভলভুলেসি গোত্রভুক্ত উদ্ভিদ। এর পঞ্চাঙ্গ অর্থাৎ গাছটির সমস্ত কিছুই আয়ুর্বেদিক ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এটি মস্তিষ্ক যা স্নায়ুর উত্তেজনাকে প্রশমিত করতে সাহায্য করে। শঙ্খপুষ্পী ভালো নিদ্রাজনক অর্থাৎ ঘুমের সহায়ক। বিভিন্ন মানসিক রোগের চিকিৎসাতেও আয়ুর্বেদিক ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করা হয় এই গাছটিকে। উদ্ভিদটির কল্ক বা কাঁচাবাটা সাধারণত ব্যবহার হয়ে থাকে মেধ্য রসায়ন হিসাবে।
জ্যোতিষ্মতী: এই গাছটির কাণ্ডে সাদা বিন্দু বিন্দু দেখা যায় বলে একে জ্যোতিষ্মতী বলে। বৈজ্ঞানিক নাম সিলাসট্রাস প্যানিকুলাটাস এবং এটি সিভাসট্রাসি গোত্রভুক্ত উদ্ভিদ। গাছটিকে সাধারণত কাশ্মীর,পাঞ্জাবের পার্বত্য অঞ্চলে দেখা যায়। গাছটির বীজ এবং তেল আয়ুর্বেদিক ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। মস্তিষ্কের ধী বা বোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে এবং স্নায়ুর দূর্বলতা দূর করতে সাহায্য করে জ্যোতিষ্মতী।
যষ্টিমধু: এই গাছটির কাণ্ড ও মূল সরু লাঠির মতো এবং স্বাদে মধুর তাই একে যষ্টিমধু বলে। বৈজ্ঞানিক নাম গ্লাইসিরাজিয়া গ্লেসরা এবং লেগুমিনেসি গোত্রভুক্ত উদ্ভিদ। এর মূলের চূর্ণ আয়ুর্বেদিক ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। আয়ুর্বেদিক বিখ্যাত গ্রন্থ চরক সংহিতায় এর মূল চূর্ণকে মেধ্য রসায়ন হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে। এটি মস্তিষ্ক ও স্নায়ুর বল প্রদানকারী।
গুড়ুচী: এই গাছটি বাংলায় গুলঞ্চ বা পদ্মগুলঞ্চ নামে পরিচিত। বৈজ্ঞানিক নাম টিনোসপোরা কর্ডিফোলিয়া এবং মিনিস্পারমোর্সি গোত্রভুক্ত। গাছটি লতানো। গাছটির কাণ্ডে ছোট ছোট ফোলা উঁচু অংশ থাকে। গাছটির পাতা পান গাছের পাতার মতো দেখতে। গাছটি আমাদের পশ্চিমবঙ্গে প্রচুর হয়। এই গাছের কাণ্ডের রস ব্রেন টনিক হিসেবে কাজ করে।
অশ্বগন্ধা: এই গাছটি এক ফুট থেকে পাঁচ ফুট উঁচু হয় এবং পাতা চওড়া ও সামান্য মোটা হয়। বৈজ্ঞানিক নাম ওইথেনিয়া সোমনিফেরা এবং সোলানেসি গ্রোত্রভুক্ত উদ্ভিদ। এর মূল চূর্ণ আয়ুর্বেদিক ওষুধ হিসেবে ব্যবহার হয়। মানসিক দুশ্চিন্তা ও অবসাদ দূর করতে কার্যকরী ওষুধ অশ্বগন্ধা।
কুষ্মাণ্ড: বাংলায় আমরা যাকে কুমড়া বলি সেই কুমড়ার পাকা ফল মস্তিষ্ক ও স্নায়ুর পক্ষে উপকারী। কুমড়া থেকে তৈরি ওষুধ বিভিন্ন মানসিক রোগের চিকিৎসায় ব্যবহার হয়।
এছাড়া জটামাংসী, বচ, উস্তুখুদুস, সর্পগন্ধা, অহিফেন ইত্যাদি দ্রব্যের মস্তিষ্ক এবং স্নায়ুতন্ত্রের ওপর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্রভাব আছে। তাই এইগুলি নার্ভ বা স্নায়ুর বিভিন্ন রোগের চিকিৎসার ঔষধের উপাদান হিসাবে ব্যবহার করা হয়।
শেষে একটি বিষয় বলা প্রয়োজন— গোরুর দুধের থেকে তৈরি ঘি খেলে মস্তিষ্ক ও স্নায়ুর পক্ষে ভালো। কারণ আমাদের মস্তিষ্ক এবং নার্ভের বিশেষ একটি উপাদান হল লিপিড। এই জন্য স্নায়ু বা নার্ভের বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায় গোঘৃতকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।