বিদ্যায় অধিক পরিশ্রম করতে হবে। ব্যবসায় যুক্ত ব্যক্তির পক্ষে দিনটি শুভ। প্রেম-প্রীতিতে আগ্রহ বাড়বে। নতুন ... বিশদ
শুবিল
ভাগ্য ভালো থাকলে আফ্রিকা বেড়াতে গিয়ে সিংহের সঙ্গে দেখা মিলতে পারে এই পাখির। আফ্রিকার উগান্ডা, রাওন্ডা, পশ্চিম তানজেনিয়া ও জামবিয়ায় প্রত্যন্ত জলাভূমিতে এই আশ্চর্য পাখির বাস। শুবিল একটি বিরল প্রজাতির পাখি। তথ্য বলছে, আফ্রিকার বিস্তীর্ণ অংশে ছড়িয়ে থাকা শুবিলের সংখ্যা মাত্র ৫ হাজার। এরা লম্বায় প্রায় ১১৫ সেমির (৩.৮ ফিট) মতো হতে পারে। পালকের রং মোটামুটি ধূসর নীল বর্ণের। পালক ও গায়ের রঙের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে এদের পায়ের রংও ধূসর নীল বর্ণের।
তবে এই পাখির এমন আজব নামকরণ নিয়েও রয়েছে একটা আশ্চর্য তথ্য। তোমরা লক্ষ করেছ কি, এই পাখির মুখের অংশ অনেকটা জুতোর মতো দেখতে? না লক্ষ করে থাকলে এবার ভালো করে দেখে নাও। মিল পেলে নিশ্চয়ই। তাই এর নাম রাখা হয়েছে শুবিল। পাশাপাশি এদের শু-বিলড স্টর্ক এবং হোয়েল হেডেড স্টর্ক নামেও ডাকা হয়।
জলাভূমির মাছ, কচ্ছপ এবং ছোট কুমির খেয়ে এরা দিন কাটায়।
এই পাখির একটা অবাক করা বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এরা অনেকক্ষণ এক জায়গায় একভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে পারে। তোমাদের সঙ্গে স্ট্যাচু খেলা খেললে এরা নিশ্চয়ই প্রথমই হতো। আর জানো, এই পাখি কিন্তু একদম মানুষের সান্নিধ্য পছন্দ করে না। তাই এর দেখা মেলা বেশ কঠিন।
হোটজিন
এক অদ্ভুত দর্শনের পাখি হল হোটজিন। সামনাসামনি না দেখলে বিশ্বাস করা দায়। তবে সৌভাগ্যবশত এই পাখিটিকে দেখতে পাওয়া এতটাও কঠিন নয়। উত্তর ও মধ্য দক্ষিণ আফ্রিকার বিস্তীর্ণ অঞ্চলে এর অবাধ দেখা মেলে। এরা মোটামুটি লম্বায় ৬৫ সেমির (২৫.৬ ইঞ্চি) মতো হয়। তবে এদের ওজন হয় ১ কেজির কম। হোটজিনের পিছনের পালক বেশ লম্বা। পালকের উপরের অংশ ডোরাকাটা বাদামি বর্ণের, নীচের দিকে সামান্য হলুদ। মাথায় রয়েছে ঝুঁটি। এই পাখির মুখের রং নীল। চোখগুলি টকটকে লাল। সব মিলিয়ে এক অবাক করা রূপ! এই পাখির পুরুষ ও মহিলা মোটামুটি একই রকম দেখতে হয়।
সাধারণত জলাশয় বা ধীর গতির নদীর ধারের গাছগুলিতে এই পাখির বাস। এরা মূলত দলবদ্ধভাবে খোলা জায়গায় বসে থাকে। তবে বিপদ দেখলে নিশ্চিন্ত আশ্রয়ে পৌঁছে যেতে একদম দেরি করে না। এরা মুখে এক বিশেষ ধরনের আওয়াজ করে। এই পাখি মূলত শাকাহারী। গাছের পাতা, ফুলের কুঁড়ি খেয়েই বেঁচে থাকে। প্রাপ্তবয়স্ক হোটজিন কিছুটা দূরত্ব পর্যন্ত উড়তে পারে। তবে উড়তে এরা ভালোবাসে না। বরং কোথাও বসে খাবার হজম করতেই এরা পছন্দ করে।
লায়ার বার্ড
দক্ষিণ পূর্ব অস্ট্রেলিয়ার জঙ্গলে দেখা মিলবে এই অদ্ভুত পাখির। বিভিন্ন ধরনের শব্দের অবিকল আওয়াজ করার শিল্প এদের আয়ত্তে রয়েছে। মিমিক করার এই অদ্ভুত প্রতিভার জন্য সারা পৃথিবীতে লায়ার বার্ড প্রসিদ্ধ। নিজস্ব ঢঙে বিভিন্ন ধরনের আওয়াজ করে গান করতেও এরা সিদ্ধহস্ত। আর গানগুলিতে সুর, তাল, লয়ও থাকে বলেই জানা যায়। তাই অনেকের কাছে এই পাখি প্রাকৃতিক সঙ্গীতজ্ঞ হিসেবে পরিচিত।
এদের দেখতে বেশ সুন্দর। পুরুষ লায়ার বার্ডের পিছনের দিকের পালকগুলি বেশ লম্বা। সেই পাখনা মেলে ধরার দৃশ্য এক মুহূর্তে তোমাদের মন জয় করে নিতে পারে।
সাধারণত মাটিতেই এরা বেঁচে থাকে। তেমন ভালোভাবে উড়তে পারে না। কোনও বিপদের গন্ধ পেলেই মুখ থেকে সাংকেতিক আওয়াজ করে। এরপর সেই জায়গা ছেড়ে দৌড়ে পালায় বা সেখানেই কোনও একটি জায়গায় লুকিয়ে পড়ে। এদের খাওয়াদাওয়াও অত্যন্ত সাধারণ। মাটিতে থাকা পোকামাকড় শিকার করেই এদের দিন কাটে। সাধারণত আরশোলা, গুবরে পোকা, কেন্নো, মথ, মাকড়শা, কেঁচো ইতাদি খায়। কোনও কোনও সময় টিকটিকি, ব্যাঙের মতো খাদ্য খেতেও এরা পিছুপা হয় না।
আতলান্তিক পাফিন
একঝলক দেখলে পেঙ্গুইনের সঙ্গে মিলিয়ে ফেলছ নিশ্চয়ই! তবে এরা পেঙ্গুইন নয়। গায়ের রঙে পেঙ্গুইনের সঙ্গে মিল থাকলেও ঠোটের দিকটা সম্পূর্ণ আলাদা। এই পাখির ঠোঁট দেখতে অনেকটা তোতাপাখির মতো। তাই এই পাখিকে ‘সি প্যারোট’ নামেও ডাকা হয়।
এই পাখির বিজ্ঞানসম্মত নাম ফ্র্যাটারকুলা আর্কটিকা। এরা আকারে অত্যন্ত ছোট। লম্বায় ২৮ থেকে ৩০ সেমি (১৯ থেকে ২৫ ইঞ্চি)। ডানার দৈর্ঘ্য মোটামুটি ৪৭ থেকে ৬৩ সেমি। খালি চোখে দেখতে একরকম হলেও ছেলেরা মহিলাদের তুলনায় সামান্য বড় হয়। এরা দলগতভাবে বাস করে। এরা ২০ বা তার বেশি বছর পর্যন্ত বাঁচতে পারে।
আতলান্তিক পাফিন নিজের জীবনের বেশিরভাগ সময় সমুদ্রেই কাটিয়ে দেয়। সুযোগমতো সাঁতার কাটা বন্ধ রেখে সমুদ্রের জলে ভেসে থেকেই নেওয়া হয়ে যায় বিশ্রাম। এরা সাঁতার কাটায় অত্যন্ত পটু। ডানাগুলিকে ব্যবহার করে এরা জলের তলায় অনায়াসে সাঁতার কাটতে পারে। নিজেদের ডানা ও পায়ের সাহায্যে এরা চোখের নিমেষে সমুদ্রের গভীরে প্রায় ২০০ মিটার পর্যন্ত পৌঁছে যেতে সক্ষম। এই বিশেষ গুণের জন্য আতলান্তিক পাফিন বিশ্বের দরবারে অত্যন্ত পরিচিত নাম। তবে জলের তলায় এরা ২০ থেকে ৩০ সেকেন্ডের বেশি থাকতে পারে না। অথচ এই সময়ের মধ্যেই তারা নিপুণ ঠোঁটে সেরে ফেলে শিকার।
ওড়ার কাজেও পাফিনের জুড়ি মেলা ভার। এই ছোট শরীর নিয়ে ৫৫ মাইল প্রতি ঘণ্টা গতিতে উড়তে পারে পাফিন। ১ মিনিটে ৪০০ বার ঝাপটাতে পারে পাখা। তাই সময় সুযোগ পেলে উত্তর আতলান্তিক সমুদ্রে বেড়াতে বেড়াতে দেখে নিতে পারো এই খুদে আশ্চর্যকে।
হামিং বার্ড
পৃথিবীর সবথেকে ছোট পাখি হল হামিং বার্ড। দৈর্ঘ্যে মোটামুটি ৭.৫ থেকে ১৩ সেমির (৩ থেকে ৫ ইঞ্চি) মতো। এই পাখির এমন নামকরণের পিছনে রয়েছে এক আশ্চর্য তথ্য। হামিং বার্ড প্রতি সেকেন্ডে প্রায় ৮০ বার ডানা ঝাপটাতে পারে। কি অবাক লাগছে! আর এই দ্রুতগতিতে ডানা ঝাপটানোর ফলে এক ধরনের গুঞ্জনের মতো শব্দ তৈরি হয়। আর গুঞ্জন বা গুনগুন শব্দের ইংরেজি প্রতিশব্দ হল হামিং। তাই এই পাখির নাম হল হামিং বার্ড। হামিং বার্ড উড়তে ভীষণ পটু। সামনে, ডায়ে, বাঁয়ে, পিছনে, এমনকী উল্টো অবস্থাতে উড়তেও এরা পারে।
হামিং বার্ড ফুলের পরাগ, মধু, ছোটখাট পোকা খেয়েই বেঁচে থাকে। এই পাখির ঠোঁট বেশ লম্বা হওয়ায় ফুলের মধু সংগ্রহ করতে সুবিধে হয়। আর এদের পা ব্যবহার হয় শিকারের জন্য। সারা বিশ্ব জুড়ে মোটামুটি ৩০০-র বেশি ধরনের হামিং বার্ডের প্রজাতির দেখা মেলে।
এই পাখির পালক চোরা শিকারিদের কাছে বিশেষ আকর্ষণের। এছাড়া খাদ্যের অভাব, বিশ্ব উষ্ণায়নের মতো সমস্যাও এদের দিন দিন গিলে খাচ্ছে।
ছবি : সংশ্লিষ্ট সংস্থার সৌজন্যে