কর্মপ্রার্থীদের ক্ষেত্রে শুভ। যোগাযোগ রক্ষা করে চললে কর্মলাভের সম্ভাবনা। ব্যবসা শুরু করলে ভালোই হবে। উচ্চতর ... বিশদ
যেন রূপকথার গল্পের মতো তাঁর জীবন। এশিয়ান মিটে সোনার মেডেল নিতে পোডিয়ামে উঠবেন তা দু’বছর আগে কখনও ভাবতে পারেননি।
৮০০ মিটারের প্রথম ল্যাপের শেষে একেবারে পিছিয়ে পড়েছিলেন। কিন্তু মনের জোর আর জেদকে সম্বল করে এগতে শুরু করেন। তখনও পিছিয়ে ছিলেন, চীনা প্রতিদ্বন্দ্বীর থেকে। মোক্ষম সময়ে ফিনিশ লাইনের ঠিক আগে দারুণভাবে ফিনিশ করে সোনা জিতলেন এবং পেছনে ফেলে দিলেন সকলের ফেভারিট ওয়াংকে। সোনা জিতে আবেগে চোখের জল ধরে রাখতে পারেননি। সোনা উৎসর্গ করেছেন তাঁর প্রয়াত বাবা ও কোচকে। কঠোর পরিশ্রমের ফল পেলেন, এবার লক্ষ্য এশিয়ান গেমস।
খুব গরিব ঘরের মেয়ে গোমতী, গোমতীর বাবা চাষাবাদ করতেন। তবে অ্যাথলেটিকস ছিল তাঁর স্বপ্ন। ভোর চারটেয় মেয়েকে ঘুম থেকে তুলে সাইকেলে চাপিয়ে পাঁচ কিমি দূরে বড় রাস্তায় নিয়ে যেতেন। সেখান থেকে বাসে চেপে গোমতী যেতেন আরও পাঁচ কিমি দূরে কলেজের মাঠে। সেখানে তিন ঘণ্টার অনুশীলন শেষ করে তবে বাড়ি ফেরা। অদম্য লড়াই চালিয়ে গেছেন। বেশিদিন বাবার সাহায্য পাননি গোমতী। বাবা মারিমুথুরের অসুস্থতার সময় কিছু করার ছিল না সমগ্র পরিবারের। অর্থ ছিল না বাবাকে চিকিৎসা করানোর মতো। ডাক্তাররা বাবাকে ভালো খাবার খেতে বলেছিলেন, কিন্তু বাড়িতে গোরুর জন্য যে খাবার রাখা থাকত তাই প্রতিদিন বাবা খেতেন। শাক-সব্জি সহ সামান্য পুষ্টিকর খাবার মেয়ের জন্য রেখে দিতেন। ফলে বেশিদিন বাঁচানো যায়নি বাবাকে। তবে মারা যাবার আগে বাবা বলে গিয়েছিলেন, ‘খেলা ছাড়বি না। লড়ে যাবি, তবেই আমার আত্মা শান্তি পাবে।’ সেই কথা শিরোধার্য করে এগিয়ে গেছেন গোমতী।
অঘটনের পর অঘটন। বাবার মৃত্যুর মাত্র পাঁচ মাস পরেই মারা যান গোমতীর কোচ। যাকে তিনি বাবার আসনে বসিয়েছিলেন, তাঁর কাছেই শিখেছেন অ্যাথলেটিকসের প্রাথমিক পাঠ। সোনা জিতে, দেশে ফিরে গ্রামে স্থানীয় স্কুলে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের সময় গোমতী বলেছিলেন, ‘বাবা এবং কোচ মারা যাওয়ার পরে ভেবেছিলাম খেলা ছেড়ে দেব। চোট-আঘাতে তখন রীতিমতো কাহিল। চোট সারাবার মতো টাকা নেই, ভালো খাবার নেই। কিন্তু লড়াই ছাড়িনি, বাবার কথা মনে পড়ে গেল, কোচের শিক্ষার দাম দিতে হবে। তাই অনুশীলনে নিজেকে ডুবিয়ে রাখতাম।’ তারপরের ঘটনা ইতিহাস। তামিলনাড়ুর সালেম থেকে ২০ কিমি দূরে অখ্যাত গ্রামের এই অ্যাথলিট এখন বীরের সম্মান পাচ্ছেন। তবে সংবর্ধনার ভিড়ে গোমতী কিন্তু ভোলেননি সাইনি উইলসনকে। উটিতে অনুষ্ঠিত জাতীয় শিবিরে হাজির হয়েছিলেন সাইনি, তাঁর কথায় ‘ওকে দেখে আমি তাজ্জব হয়ে গিয়েছিলাম। মনে মনে ভেবেছি, সত্যি দেখছি তো। তারপর উইলসনের কাছে নিজের সমস্যার কথা বললাম, উনি হাসিমুখে সব শুনলেন এবং টিপস দিলেন ভবিষ্যতের সাফল্যের জন্য। সাইনি উইলসন যে টিপস দিয়েছেন, তা অক্ষরে অক্ষরে পালন করে পেয়েছি সাফল্য।’
বর্তমানে গোমতীর বয়স ৩০ বছর। তবে বয়স তাঁর কাছে কোনও বাধা নয়। লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন এশিয়ান গেমসের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করছেন। এশিয়ান মিটে সোনা জেতার পর আর্থিক সাহায্য আসতে শুরু করেছে। সংসারের হাল ফিরেছে। রাজ্য সরকার থেকে শুরু করে রাজনৈতিক দল, ব্যবসায়ীরা অর্থ দিচ্ছেন বা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। স্পনসররা যোগাযোগ আরম্ভ করেছে। গোমতী আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় নিজেকে মেলে ধরতে চান।