পুরনো রোগ চাগাড় দেওয়ায় দেহকষ্ট ভোগ করতে হতে পারে। তীর্থ ভ্রমণ ও ধর্মকর্মে আত্মিক তৃপ্তিলাভ। ... বিশদ
অন্তঃপুরবাসিনীদের বিবর্ণ জীবনে নতুন প্রাণের স্পন্দন আনত এই দোল উৎসব। তঁাদের সাদা-কালো জীবনে এক ঝলক রঙের ছোঁয়া আসত দেলের হাত ধরে। পাখিদের শিসে অকারণ উল্লাসের তীক্ষ্ণতার সঙ্গে ঘরের কোণে পড়ে থাকা নারীটিও যেন গুনগুনিয়ে উঠত উৎসবের সূচনাতেই। ‘রঙে রঙে রঙিল আকাশ, গানে গানে নিখিল উদাস— যেন চল-চঞ্চল নব পল্লবদল মর্মরে মোর মনে মনে....’
সে কাল, সে নয়নের আয়ু শেষ হয় পৃথিবীর নিয়ম মেনেই। কালকে অতিক্রম করে আসে এ যুগ, এ কাল। অন্তঃপুরের সঙ্কীর্ণতা ডিঙিয়ে চলে অচলায়তন ভাঙার নিয়তি। সময়ের বদল আর নানা সামাজিক আন্দোলনের ফলস্বরূপ ঘরের কোণই কেবলমাত্র মেয়েদের জন্য নির্দিষ্ট নয়, আজকের খোলনলচে বদলানো উত্তর আধুনিক সময়ে মেয়েদের জীবন এখন অনেক বেশি রঙিন। আর ঘরের রীতিনিয়মে মেয়েরা সড়গড় নয়, আধুনিক। সাদা-কালো জীবন পেরিয়ে নিজের জীবনে ইচ্ছে অনুযায়ী রং ভরে নিতে সক্ষম তারা। তাই এই যুগে দোল উদ্যাপনে শুধু পুজোটাই মূল এমনটাও আর নয়, বরং সেটা পেছনের সারিতে গিয়ে রংটাই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। আজকের প্রজন্মের যাপন চিত্রের সঙ্গে পাশ্চাত্য জীবনধারার তেমন তফাত নেই। আজকের মেয়েরা স্বনির্ভর, সংসারে মেয়েদের মতামত প্রাধান্য পাচ্ছে, কেউ উদ্যোগপতি, নিজের ক্ষমতায় তারা বেড়াতে যাচ্ছে নিজের মতো, এমনকী আজকের মেয়েরা পুরুষ ব্যতীত সন্তান মানুষ করার সাহস পর্যন্ত দেখাচ্ছে। সাহসী মেয়েরা বিশ্বায়নের যুগে বিয়ের বন্ধনে আটকে না থেকেও মা হওয়ার সিদ্ধান্ত স্বেচ্ছায় নিচ্ছে। সমাজ সেই ভাবনাকে মেনেও নিচ্ছে। সিঙ্গল মাদারহুড তাই এখন সমাজে স্বীকৃত। এতটাই রঙিন তাদের জীবন। নিজের মনের মতো ইচ্ছে-খুশির রং নিয়েই মেয়েরা জীবনকে সাজাতে শিখেছে সহজাত দক্ষতায় ও পারদর্শিতায়।
প্রকৃতির নিয়ম মেনে আজও বসন্ত আসে ঠিকই, তবে এই সময়ে দাঁড়িয়ে এখন মেয়েদের রঙিন উজ্জ্বল হতে আর বসন্তের অপেক্ষা লাগে না। এখন আর বাইরে থেকে রং এনে ভরতে লাগে না নারী জীবনে। মেয়েদের অস্তিত্ব এখন উজ্জ্বল। তাদের জীবনে রঙের অভাব নেই। তাই রঙিন হওয়ার জন্য আর মেয়েরা বছরভরের অপেক্ষা করে না। দোল উৎসব মিটে গেলেই আবারও সেই ধূসর জীবনেও আর মেয়েরা প্রত্যাবর্তন করে না।
কিন্তু বদলানো সময়ে মেয়েদের জীবনের হতাশা, আর সুদীর্ঘকালের ব্যর্থতার গ্লানিকে, বঞ্চনা, অপ্রাপ্তি আর লাঞ্ছনাকে ফুৎকারে উড়িয়ে দিতে পেরেছে কি? মেয়েরা হাতের ভোঁতা বল্লম ফেলে ধারালো তলোয়ারের সঙ্গে শক্তি ও সাহস নিয়েই সফল, সার্থক ও রঙিন হয়েছে ঠিকই। তবু কোথাও তাদের জীবনে আজও একটা ‘কিন্তু’ কাজ করে কি? সাফল্যের জয়মুকুট একটার পর একটা ছিনিয়ে নিয়ে নতুন ভুবনের বাসিন্দা হয়েও নারী কি সঠিক অর্থে উন্মুক্ত, উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে? আশা করি জীবনের রং নারীকুলকে ছুঁয়ে যাবে।
তনুশ্রী কাঞ্জিলাল মাশ্চরক