কর্মে শুভ। নতুন কর্মপ্রাপ্তি বা কর্মসূত্রে দূররাজ্য বা বিদেশ গমন হতে পারে। আনন্দানুষ্ঠানে যোগদান ও ... বিশদ
সামনেই দোল। বাঙালিদের দোল আর তার পরদিন অবাঙালিদের হোলি। অবাঙালি হয়েও এক মহিলা কিন্তু বাঙালিদের মতোই উত্তেজিত দোল নিয়ে। ছোটবেলায় মেয়েটি মোটেই টিভি দেখতে পছন্দ করত না। ছোটবেলায় তার মা, ঠাকুমা কিংবা অন্য কেউ টিভি দেখতে বসলেই সে বলত, কেন সময় নষ্ট করছ? কী হবে এসব শাশুড়ি-বউয়ের তরজা আর একটা লোকের তিনটে বিয়ের গল্প দেখে? বদলে তাঁর পছন্দ ছিল বই পড়া, গান শোনা ইত্যাদি। কিন্তু ঘটনাচক্রে এই মেয়েটিই বড় হয়ে দায়িত্ব নিয়ে ফেলল একটি গোটা টিভি চ্যানেলের এবং সে যেগুলো পছন্দ করত না সেই শাশুড়ি-বউয়ের ঝগড়া আর বাস্তববোধ বর্জিত পরকীয়ার গল্পের কিন্তু ঠাঁই হল না তাঁর চ্যানেল আকাশ আট-এ। বদলে বাঙালির নিজস্ব সংস্কৃতি আর কৃষ্টিকে করে তুলল চ্যানেলের পাথেয়। রবীন্দ্রনাথ, শরৎচন্দ্র, বঙ্কিমচন্দ্র, বিভুতিভূষণ থেকে শুরু করে সমরেশ মজুমদার, প্রচেত গুপ্তের সাহিত্য থেকে তৈরি করল ধারাবাহিক। পাশাপাশি চলল বাংলার মহাপুরুষদের জীবনী অবলম্বনে ধারাবাহিক—জগজ্জননী মা সারদা, শিরডির সাঁইবাবা, নটী বিনোদিনী প্রভৃতি। জগজ্জননী মা সারদা তো দর্শকমহলে তুমুল আলোড়ন ফেলে দিয়েছিল। যে কারণে শেষ হয়ে যাওয়ার পরও ধারাবাহিকটির পুনঃসম্প্রচার শুরু করেছে চ্যানেল কর্তৃপক্ষ। আর ঠিক এই কারণেই দোল নিয়ে তাঁর এত উত্তেজনা। দোলের দিন কী প্রোগ্রাম উপহার দেওয়া হবে দর্শককে বহুদিন আগে থেকেই তার চিন্তাভাবনা শুরু করে দিয়েছেন তিনি। তিনি অর্থাৎ সেই ছোট্ট মেয়েটি, যে টিভি দেখতে একদম পছন্দ করত না— ঈশিতা সুরানা।
আকাশ আট চ্যানেলের যে বিরাট সাফল্য, এই সাফল্যের অন্যতম দাবিদার কিন্তু ঈশিতা। যিনি আকাশ আটের অন্যতম ডিরেকটর এবং ক্রিয়েটিভ হেড। তাঁকে বলা যেতেই পারে ‘বাংলার একতা কাপুর’। ঈশিতা এবং আকাশ আটের সাফল্য অন্য বিনোদন চ্যানেলগুলিকে এতটাই প্রভাবিত করেছে যে তারাও এই ধরনের বিষয় নিয়ে একের পর এক ধারাবাহিক সম্প্রচার করতে শুরু করে দিয়েছে।
ঈশিতা বিবাহিত, তাঁর দুই সন্তান, বাড়িতে শ্বশুর-শাশুড়ি আছেন। সেই গৃহস্থালি সামলে এই এতবড় এক সাম্রাজ্য চালান কী করে? অসুবিধে হয় না?
ঈশিতা হেসে বললেন, ‘অসুবিধে তো হয়ই। কিন্তু ছোটবেলা থেকে আমি শিখেছি, জীবনের নানা সমস্যা আসলে আপনার সামনে সুযোগ নিয়ে আসে। এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ। সমস্যা জয় করতে পারলে আপনি এগিয়ে যাবেন। নয়তো সমস্যা চিরদিনই সমস্যা থেকে যাবে। তাছাড়া আমার অভিভাবকরা, আমার স্বামী সবাই আমাকে প্রচুর সাহায্য করেন। ওঁদের আন্তরিক সহযোগিতা ছাড়া আমার পক্ষে এইভাবে কাজ করা সম্ভব হত না।
তবে হ্যাঁ, আমি চেষ্টা করি পরিবারকেও সময় দেওয়ার। এই ইন্ডাস্ট্রিতে সময়ের কোনও ঠিকঠিকানা থাকে না আপনি জানেন। কিন্তু আমার লক্ষ্য থাকে প্রতিদিন সন্ধে ছ’টা-সাড়ে ছ’টা নাগাদ অফিস ছাড়ার। তারপর সোজা বাড়ি। আমার ছেলেমেয়েরা স্কুল থেকে সোজা আমার বাপেরবাড়ি চলে যায়। আমি অফিস থেকে ফেরার সময় ওদের নিয়ে বাড়ি যাই। আমার মনে হয় পরিবারকে অসুখী রেখে কেউ অফিসের কাজে মন বসাতে পারেন না। কারণ, বাড়িতে যদি অশান্তি থাকে তবে অফিসেও সেই অশান্তি প্রতিমুহূর্তে আপনাকে তাড়া করবে। আপনি শান্তিতে অফিসের কাজে মন বসাতে পারবেন না।’
আপনি চেষ্টা করেন পরিবারকে সময় দেওয়ার, তা সত্ত্বেও ছেলেমেয়ে কিংবা স্বামীর তরফে কোনও অভিযোগ, অনুযোগ শুনতে হয় না? প্রশ্নটা শুনে দৃশ্যতই ঈশিতাকে একটু খুশি মনে হল। হয়তো প্রশ্ন না করলেও এটা বলতেন। তিনি বললেন, দেখুন আমার ছেলেমেয়েরা ছোট থেকেই আমাকে অফিস করতে দেখছে। ওরা জানে বাবা-মা দু’জনেই কাজ করে। তাছাড়া ওদের বয়স বছর তিনেক। ওরা এখনও অভিযোগ, অনুযোগ করার পর্যায়ে পৌঁছয়নি। আর যদি বলেন স্বামীর কথা, তবে বলব হ্যাঁ মনোমালিন্য, ছোটখাট সমস্যা যে একবারে হয় না তা নয়। তবে ও জানে যে আমি যেরকম কাজ পাগল তাতে আমাকে যদি কাজ করতে না দেওয়া হয় তাতে ওর আরও অসুবিধে হবে। আমি অসুস্থ হয়ে পড়ব। ও আমার সাফল্যের সবথেকে বড় স্তম্ভ। ও এবং আমার বাবা দু’জনেরই আমাকে এগিয়ে যেতে উৎসাহ দেন প্রতিনিয়ত।
পুনের আইআইএমএম থেকে এমবিএ করা ঈশিতা ২০০৭ সালে তাঁদের পারিবারিক এই ব্যবসায় যোগ দেন। কলকাতায় তাঁর জন্ম, স্কুলে বাংলা ছিল তাঁর দ্বিতীয় ভাষা। তাই অনেক বাঙালির থেকেও তিনি বেশি বাংলা বই পড়েন, এখনও। তাঁর চ্যানেলে যেসব সাহিত্য থেকে ধারাবাহিক হয় সবগুলিই তিনি খুঁটিয়ে পড়েন এবং তারপর মতামত দেন। বাংলা সাহিত্য এবং সংস্কৃতি সম্পর্কে তাঁর এই জ্ঞানই বোধহয় তাঁকে চ্যানেল সফলভাবে চালাতে সাহায্য করে।