বিদ্যায় অধিক পরিশ্রম করতে হবে। ব্যবসায় যুক্ত ব্যক্তির পক্ষে দিনটি শুভ। প্রেম-প্রীতিতে আগ্রহ বাড়বে। নতুন ... বিশদ
মাত্র কয়েকটা দিনের যাত্রাতে বুদ্ধি বিকাশের নানা খেলা, গাছগাছালির সঙ্গে পরিচয় সবই হয়। একই সঙ্গে রং-বেরঙের পাখির কলকাকলিতে মুখর ভোরের আলো দেখার সুযোগ মেলে। পাহাড়, সমুদ্র বা আরণ্যক পরিবেশের টানে ছুটে যাওয়া মানুষগুলির জীবনে আসে অন্য স্বাদ, অন্য রং।
সোমার অভিযান সঙ্গীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য একজন দাবাড়ু দিব্যেন্দু বড়ুয়া। যিনি কিছুদিন আগেই পরিবারসহ সোমাজ ক্যাম্প আয়োজিত একটি সাইকেল ট্যুরে অংশ নিয়েছিলেন। বকখালি থেকে প্রায় কুড়ি কিলোমিটার পথ সাইকেলে চেপে গিয়েছিলেন হেনরি আইল্যান্ড। সেই সফরের অভিজ্ঞতা সম্বন্ধে বলতে গিয়ে উচ্ছ্বসিত দিব্যেন্দু বললেন, ‘খুব ভালো অ্যারেঞ্জমেন্ট। দু’দিন দারুণ উপভোগ করেছি। দিনেরবেলা সাইকেল চালাবার পর বিকেলবেলা নানারকম বুদ্ধির খেলায় মাতিয়ে রাখতেন সোমা আমাদের। ওঁদের পরিষেবাও যথেষ্ট আকর্ষণীয়। তাছাড়া সোমা এতটাই এনারজেটিক এবং মিশুকে যে আমি এবং আমার স্ত্রী সহেলি ভবিষ্যতেও সোমাজ ক্যাম্প আয়োজিত বিভিন্ন ওয়াকিং ট্যুর, নেচার ক্যাম্প বা সাইকেল ট্যুরে যাব।’
সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত প্রচেষ্টায় সোমাই সম্ভবত এই বঙ্গের একমাত্র মহিলা যিনি বেশ কিছু বছর ধরেই সর্বসাধারণকে অভিযানের শরিক হতে সাহায্য করছেন। শুধু প্রাপ্তবয়স্কদেরই নয়, বাচ্চাদেরও একাকি ভ্রমণের সুযোগ করে দিয়েছেন সোমা। মজা-আনন্দ হয়তো অনেকটাই আছে ট্রেকিংয়ে, কিন্তু ঝুঁকিও আছে প্রচুর। সেই ঝুঁকিপূর্ণ পেশাতে হঠাৎ করেই নেশার টানে একদিন ঢুকে পড়েছিলেন সোমা। এক লহমায় ছেড়ে দিয়েছিলেন নামী সংস্থার সেন্টার হেডের চাকরি। বলছিলেন, ‘একঘেঁয়েমি থেকে মুক্তি পেতে ট্রেকিং আয়োজনের এমন আকর্ষণীয় পেশাটাকে গ্রহণ করেছিলাম। ভালোবেসেই আমার এই পেশায় আসা।’
এক আত্মীয় বাইপাসের ধারে ক্যাপটেন ভেরিতে ‘শেয়ার এ সানডে উইথ ইওর চাইল্ড’ শিরোনামের একটি সামার ক্যাম্প আয়োজনের দায়িত্ব নিয়েছিলেন। সোমা সেই আয়োজনে ছিলেন ওই আত্মীয়ের সহকারী। কিন্তু পরে সেই আত্মীয় দায়িত্ব থেকে সরে গেলে মাঝপথে সমস্ত দায়িত্ব এসে পড়ে সোমার কাঁধে। সেদিন পিছিয়ে না গিয়ে প্রবল উৎসাহে ঝাঁপিয়ে পড়েন সোমা। তাঁর তত্ত্বাবধানে ক্যাম্প এতটাই সফল হয়েছিল যে, অংশগ্রহণকারীদের প্রচুর প্রশংসা আপ্লুত করে সোমাকে। সংবাদ মাধ্যমেও প্রচারিত ও প্রশংসিত হয় সোমার উদ্যোগ আয়োজন। উৎসাহ তাতে বাড়ে। উদ্যমী সোমা তারপর আর বসে থাকেননি। সবাইকে নিয়ে প্রকৃতি সফর শুরু করে দেন তখন থেকেই। ক্যাম্পের আয়োজন তো ছিলই, সেই সঙ্গে চলছিল বিভিন্ন স্কুলে গিয়ে ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে ট্রেকিংয়ে অংশ নেওয়ার জন্য আবেদন। শুরুর দিকে স্কুলগুলো সাড়া না দিলেও, বালিগঞ্জ শিক্ষা সদনের তৎকালীন শিক্ষিকা রত্নাবলী ঘোষ প্রথম তাঁর ছাত্রীদের অনুমতি দেন সোমার সঙ্গে ট্রেক করার। আর এখন? হাওড়া, উলুবেড়িয়া, বারাসত-এর একাধিক স্কুল সোমার ক্লায়েন্ট। পেশা আর নেশার অদ্ভুত মিলন ঘটেছে সোমার জীবনে। ট্রেকিং-এর আয়োজন তো আছেই, একই সঙ্গে আছে বালিগঞ্জ শিক্ষা সদন স্কুলের অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টসের শিক্ষকতা।
বিপজ্জনক স্পোর্টস বা তার প্রশিক্ষণের সুরক্ষা কতটা, জানতে চেয়েছিলাম সোমার কাছে। ট্রেনিং বা ওয়ার্কশপে যেসব সাজ-সরঞ্জাম বা যন্ত্রপাতি তিনি ব্যবহার করেন তা অতি আধুনিক। আর পাহাড়ে যাওয়ার আগে রেকি করে ট্রেকিং রুট একশো শতাংশ নিরাপদ না হলে কাউকে সেই পথে নিয়ে যাওয়া হয় না। ওয়ার্কশপ বা ট্রেকিং উভয়ক্ষেত্রে সুরক্ষাই তাঁর কাছে অগ্রাধিকার।
সুরক্ষা সম্পর্কে নিশ্চিত করার পর তাঁর এই দুঃসাহসিক উত্তেজনাপূর্ণ কর্মপ্রচেষ্টার অনুপ্রেরণা কারা, সেই প্রসঙ্গে তিনি যে তালিকা দিলেন তা বেশ দীর্ঘ। সেই তালিকায় বাবা-মা, শাশুড়ি-ননদ যেমন রয়েছেন, তেমনি আছেন স্বামী পুলক পাল ও একমাত্র পুত্র দেবাদিত্য। পেশায় ইঞ্জিনিয়ার পুলকবাবু ক্লাইম্বিংয়ের জন্য প্রয়োজনীয় আধুনিক যন্ত্রপাতি বিদেশ থেকে এনে দেন নিয়মিত। এছাড়াও শম্পা রায়, দুই প্রতিবেশী মহুয়া মারিক ও তনুজা মজুমদার এবং সি-এক্সপ্লোরার্সের তিন কর্মী— তাপস চৌধুরি, অসীম মণ্ডল, পলাশ পালদের সহযোগিতা থাকে সোমার সঙ্গে।
ব্যক্তিগত যোগাযোগ ছাড়াও ফেসবুক, ই-মেল ইত্যাদির মাধ্যমে উৎসাহীদের সঙ্গে ট্যুরসংক্রান্ত যাবতীয় যোগাযোগ চলে সোমাজ ক্যাম্পের। তবে গতানুগতিক ট্যুর অপারেটর বা ভ্রমণ সংস্থা নয় সোমার এই প্রতিষ্ঠান। সে কথা স্পষ্ট করে দিয়েছেন সোমা নিজেই। যে যাত্রায় রোমাঞ্চ নেই, শিহরণ নেই বা নেই কোনও প্রকৃতি পাঠের অবকাশ সেখানে সোমা যান না। চ্যালেঞ্জহীন নিরাপদ অভিযানে ট্রেকিং বিলাসী সোমা অনুপস্থিত।
সাক্ষাৎকারের শেষ লগ্নে প্রশ্ন করেছিলাম নিজের নামের অনুকরণেই সংস্থার নাম সোমাজ ক্যাম্প কিনা। সোমা জানান এটা একটা অ্যাক্রোনিম বা সংক্ষিপ্তসার। যার পুরোটা হল ‘শোর অব মিলিয়ন অ্যাকটিভিটিজ’ (Shore of Million Activities)। কর্ত্রীর সঙ্গে সংস্থার নামের এমন কাকতালীয় সাদৃশ্যের পিছনে অবশ্য পুরো অবদান পর্বতারোহী দীপাঞ্জন চক্রবর্তীর। লোগো তৈরি করে দিয়েছেন আরেক পর্বতারোহী অমিত রায়। সেকথাও সেদিন বলতে ভোলেননি সোমা মজুমদার পাল। অকুণ্ঠ কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন ওই দুই পর্বতারোহীর প্রতি।