বিদ্যায় অধিক পরিশ্রম করতে হবে। ব্যবসায় যুক্ত ব্যক্তির পক্ষে দিনটি শুভ। প্রেম-প্রীতিতে আগ্রহ বাড়বে। নতুন ... বিশদ
মেয়েদের মনের ছবি: পৃথা চক্রবর্তী
মেয়েরা আজ অনেকেই স্বনির্ভর। তবু ছবিতে দু’জনই হাউস ওয়াইফ। এক্ষেত্রে বর্তমানে মেয়েদের অবস্থানের সঙ্গে এই ছবি কতটা সামঞ্জস্যপূর্ণ?
এই ছবি শুধুমাত্র দু’জন গৃহবধূর গল্প নয়। বরং দু’জন মানুষের পরিচয় খোঁজারও গল্প। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কিন্তু চাকুরিরতা ও গৃহবধূ উভয়ের অবস্থানই বাড়িতে একরকম। বাড়ির সবাই আশা করেন যে বউমা সংসারের কাজ করবেন। ছবিতে শাশুড়ি-বউমা দু’জনেই হোম মেকার হলেও এই ছবির সঙ্গে গৃহবধূ ও চাকুরিরতা সবাই রিলেট করতে পারবেন।
শাশুড়ি-বউয়ের সম্পর্কের গতানুগতিক ভাবটা ছবিতে যে ভেঙে দেওয়া হয়েছে তা বাস্তবে শাশুড়ি বউয়ের সম্পর্কের দ্বারা কতটা প্রভাবিত?
আমার মনে হয় প্রতিদিনের ছোট ইস্যুগুলো নিয়েই শাশুড়ি-বউমার সম্পর্কে বিবাদের সৃষ্টি হয়। এই ছবি দৈনন্দিন ইস্যুগুলোকে নিয়েই তৈরি। আমরা চেষ্টা করেছি শাশুড়ি-বউয়ের চরিত্রের গ্রে শেডগুলো তুলে ধরতে। বউমা যখন বলে যে আমি নিজের জন্য টিভি কিনে এনেছি, তখন বউমা ‘নিজের’ না বলে ‘আমাদের’ শব্দটা বললে হয়তো শাশুড়ির একাকিত্ব অনেকটা কমে যায়। যদি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করতে পারি তবে এই পথ চলাটা অনেক মসৃণ হয়। শাশুড়ি-বউমা সম্পর্ক শুনলেই যে আমরা নাক শিঁটকোই সেটার যদি শতকরা একশো ভাগের মধ্যে এক ভাগেরও পরিবর্তন হয় তবে আমরা সুখী হব। ছবিটি করার আগে গবেষণা করতে গিয়ে জানতে পারি যে বউমা শাশুড়িকে নিয়ে মনোবিদের কাছে গিয়েছে এটা কোনও বিরল ঘটনা নয়। মনোবিদের কাছে যাওয়া একটা সোশ্যাল ট্যাবু। ছবি করার সময় অনেক মনোবিদের সঙ্গে কথা বলে জানতে পেরেছি যে ঘরোয়া অনেক সমস্যা নিয়ে বউমা ও শাশুড়ি মনোবিদের কাছে যান। মনোবিদের কাছে যে সেশন চলে ছবিতে পুরোটাই যদি তুলে ধরতাম তবে সেটা তথ্যচিত্র মনে হতো। সেক্ষেত্রে পরিচালক হিসেবে যতটা স্বাধীনতা নেওয়া যায় ততটুকু নিয়েছি। ছবিটিকে মেয়েদের ছবি না বলে বরং মনস্তত্ত্বের ছবি বলা উচিত।
যুগোপযোগী ছবি: সম্রাজ্ঞী বন্দ্যোপাধ্যায়
শাশুড়ি-বউয়ের সম্পর্কের মনস্তত্ত্ব ছবিতে কতটা আছে?
ছবিতে মনস্তত্ত্বের ব্যাপারটা অনেকখানি রয়েছে। ছবির শুরুতে রয়েছে শাশুড়ি-বউয়ের সমস্যা। পরে সমস্যাগুলো শনাক্ত করা হয়। শাশুড়ি-বউমা তাঁদের অতীতকে খুঁড়ে বের করে পরিবারে নিজেদের জায়গা খুঁজে নেন।
শুধুমাত্র ছবির গল্পে নয়, বাস্তবে শাশুড়ি-বউমার সম্পর্কে মনস্তত্ত্ব কতটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে?
আমাদের যে কোনও কাজের পেছনে মনস্তত্ত্ব রয়েছে। আমরা যে কাজ করি তার কারণ খুঁজে বের করতে গেলে সত্যি মনস্তত্ত্বের প্রয়োজন হয়।
আমাদের সমাজে নিউক্লিয়ার ফ্যামিলির সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। সেক্ষেত্রে শাশুড়ি-বউমা নিয়ে এই ছবি কতটা যুগপোযোগী?
অধিকাংশ ক্ষেত্রেই শাশুড়ির সঙ্গে বউমার সম্পর্ক কিন্তু ভালো নয়। অর্থাৎ স্বামী-স্ত্রী-বাচ্চা আলাদা আছে এটার থেকেও বড় কথা আগের প্রজন্মের সঙ্গে এদের সম্পর্ক ভালো নয়। ফলে বাচ্চারাও ঠাকুমা-ঠাকুরদা বা দাদু-দিদাকে পায় না। সেক্ষেত্রে শাশুড়ি-বউমার সম্পর্ক নিয়ে ছবি আমার মতে যথেষ্ট যুগপোযোগী। আমরা জীবনে অন্যান্য সম্পর্ককে অস্বীকার করতে পারি না। তবু এই একটা সম্পর্ককে ছেঁটে ফেলতে চাইছি কেন? কারণ আমি সেই সম্পর্ককে নিয়ে চলতে পারছি না। তাই বলে সম্পর্কটা তো অস্বীকার করা যায় না। বউমা হিসেবে আমি যদি বাবা, মা, স্বামী, সন্তানকে ছাড়তে না পারি তবে ক্রমাগত একটা মানুষকে ছাড়তে চাইছি কেন? এই প্রশ্নটাই আমরা এই ছবির মাধ্যমে করার চেষ্টা করেছি। আমার মনে হয় এই যুগের পক্ষে ছবিটি বিশেষভাবে উপযুক্ত।
পুরুষদেরও ভালো লাগবে: নন্দিতা রায়
এই ছবিকে কি নারীবাদী ছবি বলা যেতে পারে?
ছবিটি নারীবাদী ঠিক বলব না। তবে নারীদের নিয়েই গল্প। এই ছবি দেখে পুরুষেরাও উপভোগ করবেন।
কেন ছবিটিকে নারীবাদী বলবেন না?
আমি মনে করি না যে পুরুষের বিরুদ্ধে নারীদের আলাদা সমস্যা থাকতে পারে যা পুরুষেরা বুঝবেন না। ছবির গল্প পুরুষদেরও নাড়া দেবে।
শাশুড়ি-বউয়ের সম্পর্কের উত্তরণ কি এই ছবিতে ধরা পড়বে?
একদম তাই। গল্পে খুব সুন্দর করে বোঝানো হয়েছে যে শাশুড়ি এবং পুত্রবধূ দু’জনেই মহিলা হওয়া সত্ত্বেও সমাজ কিন্তু তাদের দু’জনকে দু’জনের বিরুদ্ধে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। তাঁরা একই প্ল্যাটফর্মে একে অপরের বন্ধু হতে পারে। সেই জায়গা থেকে অবশ্যই ছবিতে সম্পর্কের উত্তরণ রয়েছে।
শাশুড়ি-বউ সম্পর্কেও বদল এই ছবিতে কতটা এবং কীভাবে ধরা পড়েছে?
এই ছবিটি এতটাই পজিটিভ যে যাঁরাই এই ছবি দেখবেন তাঁদের এই ব্যাপারটা স্পষ্টভাবে চোখে পড়বে। শাশুড়ি-বউমার যে সংঘর্ষ সেটা আসলে সত্যি নয়।
সেটা কী কারণে হয় তা ছবিতে বোঝানো হয়েছে। কেন ওঁদের সম্পর্কে বাধা রয়েছে এই বাধাকে অতিক্রম করে শাশুড়ি-বউমা যে একসঙ্গে হাঁটতে পারে সেটাও সুচারুভাবে ছবিতে তুলে ধরা হয়েছে।