কর্মপ্রার্থীদের ক্ষেত্রে শুভ। যোগাযোগ রক্ষা করে চললে কর্মলাভের সম্ভাবনা। ব্যবসা শুরু করলে ভালোই হবে। উচ্চতর ... বিশদ
এই পন্থার সমস্যা দুটি। সমস্যার প্রথমটা হল, ভারতে কাজকর্ম হয়ে থাকে প্রচলিত বা পরম্পরাগত ধারায়। সমস্যার দ্বিতীয়টা হল সমাজের বিভিন্ন শ্রেণীর প্রতিযোগিতামূলক দাবি। তার মধ্যে অনড়ভাবে থাকবে দরিদ্রতম, দুর্বলতম, সবচেয়ে বঞ্চিত এবং শোষিত মানুষের কণ্ঠ। এই সরকারের প্রথম দফা শেষ হওয়ার অভিজ্ঞতা এই যে—(১) প্রচলিত ধারার কর্মপদ্ধতি আরও বিলম্বিত হয়েছে এবং (২) দরিদ্রতম, দুর্বলতম, সবচেয়ে বঞ্চিত এবং শোষিত মানুষ রয়ে গিয়েছে দরিদ্র, দুর্বল, বঞ্চিত ও শোষিত।
পরীক্ষিত ও ব্যর্থ
দ্বিতীয় দফা মোদিজি অবশ্যই প্রচলিত পথ ভেঙে যাত্রা শুরু করবেন। মোদিজির মিত্র অরবিন্দ পানাগড়িয়া এবং বেঙ্কটেশ কুমার নিম্নোক্ত পথ বাতলে দিয়েছেন:
‘তাঁর (মোদিজির) শাসনপদ্ধতির একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান (কি এলিমেন্ট) হল—তিনি কয়েকটি গ্রুপে সচিবদের নিয়োগ করে থাকেন, প্রতিটি গ্রুপকে প্রজেক্ট, প্রোগ্রাম এবং পলিসির প্রেজেন্টেশন তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হয়, পরবর্তী বছরে অর্থনীতির প্রধান ক্ষেত্রগুলিতে সেগুলি রূপায়ণের জন্য। এটা চূড়ান্ত হয়ে যাওয়ার পর প্রেজেন্টেশনগুলোই গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রগুলোর রোড ম্যাপ হয়ে ওঠে।’
এরপর লেখকদের হুঁশিয়ারি:
‘কিন্তু যখন এটা আমূল সংস্কারে (র্যাডিকাল রিফর্মস) গিয়ে দাঁড়ায় তখন এই পদ্ধতির একটি নেতিবাচক দিক ধরা পড়ে। প্রকৃতিগতভাবে, আমলারা সতর্ক হয়ে থাকেন এবং তাঁদের ঝোঁকটা অতি মাত্রায় থাকে প্রজেক্ট ও প্রোগ্রাম মুখী। এমনকী, তাঁরা যখন পলিসি পরিবর্তনের প্রস্তাব দেন, তখন তাঁরা ধাপে ধাপে করেন এবং ক্বচিৎ জোড়াতাপ্পির বাইরে যান।’
আমি এবিষয়ে একমত কিন্তু, তাঁদের বিকল্প পদ্ধতির সঙ্গে একমত হতে পারি না। খুব কাছ থেকে নিরীক্ষণ করে বুঝেছি, এটাতে কোনও তফাত হয় না। বিকল্প মডেলে মন্ত্রীর জায়গা নেবেন মিশন হেড, সচিবের জায়গা নেবেন উপদেষ্টা এবং আধুনিক পেশাদারদরা আসবেন যুগ্মসচিব এবং তাঁর টিমের জায়গায়!
‘ডিসরাপশন’টাই মূল
স্বচ্ছ ভারত এবং উজ্জ্বলা-তে যা প্রাপ্তি হয়েছে তার থেকে পৃথক কিছু ফললাভ ঘটবে না। স্বচ্ছ ভারত প্রকল্পের ক্ষেত্রে তিক্ত সত্যটি হল—গুজরাত ভিন্ন কোনও বড় রাজ্যকে ‘খোলা স্থানে মলত্যাগ মুক্ত (ওডিএফ)’ হিসেবে ঘোষণা করেনি। তৈরি হওয়া শৌচাগারের কত শতাংশ অব্যবহৃত বা ব্যবহারের অযোগ্য রয়ে গিয়েছে? উজ্জ্বলা প্রকল্পের ক্ষেত্রে সাফল্য অথবা ব্যর্থতার মাপকাঠি হল একজন উপকৃত ব্যক্তি (বেনিফিসিয়ারি) বছরে গড়ে ক’টি পরিবর্ত সিলিন্ডার কিনে থাকেন: এটা হতাশ হওয়ার মতো ৩ অথবা সর্বাধিক ৮ কি? আমি যতটা জানি আপনারাও জানেন ততটাই।
আমূল সংস্কার র্যাডিক্যাল পলিসি এবং ‘ডিসরাপশন’-এর মাধ্যমেই কার্যকরী হতে পারে মাত্র। ১৯৯১-৯৬ পর্বে আমরা ‘রেড বুক’-এর বহ্ন্যুৎসব করেছিলাম এবং বৈদেশিক বাণিজ্যে আমূল পরিবর্তন ঘটে গিয়েছিল। আমরা পুরনো বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ন্ত্রণ আইন (ফরেন এক্সচেঞ্জ রেগুলেশন অ্যাক্ট) পাল্টে ফেলেছিলাম এবং তার ফলে বৈদেশিক মুদ্রা ভাণ্ডার (ফরেন এক্সচেঞ্জ রিজার্ভ) হু হু করে বেড়েছিল। শিল্প লাইসেন্স ব্যবস্থা বাতিল করে দিয়েছিলাম এবং তার ফলে নতুন প্রজন্মের শিল্পোদ্যোগীদের দেখা পাওয়া গিয়েছিল। শিক্ষা, স্বাস্থ্য পরিষেবা, এবং গ্রামীণ সড়ক ও পরিবহণ ক্ষেত্রে মোদিজি অবশ্যই তেমন কিছু একটা করার চেষ্টা করবেন। স্কুলশিক্ষার ক্ষেত্রে তিনি কংগ্রেসের নির্বাচনী ইস্তাহার থেকে আইডিয়া ধার নিয়ে স্কুলশিক্ষাকে রাজ্য তালিকার অন্তর্ভুক্ত করে দিতে পারেন, রাজ্যগুলিকে টাকা দিতে পারেন, যাতে করে তারা স্বাধীনভাবে উদ্ভাবনী উদ্যোগ ও প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে বিকশিত হতে পারে। মানুষ তার রাজ্য সরকারের কাছে ‘রেজাল্ট’ দাবি করবে এবং, একটা সময়ে তারা সেটা পাবেও।
মূল আইডিয়া—যেটা হবে সবচেয়ে ‘ডিসরাপটিভ’—বিকেন্দ্রীকরণ। স্বল্পমেয়াদি রেজাল্ট অসন্তোষজনক হবে হয়তো কিন্তু মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদে সুশাসিত রাজ্যগুলি এখনকার থেকে অনেক ভালো করবে এবং এটাই রাজ্যস্তরে সুশাসনের চাহিদা বাড়িয়ে দেবে মানুষের মনে। বিকেন্দ্রীকরণের সুফল যেসব ক্ষেত্রে অত্যন্ত বেশি পরিমাণে পৌঁছবে সেগুলি হল—প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের স্বাস্থ্য পরিষেবা, পানীয় জল, শৌচাগার (স্যানিটেশন), পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি (রিনিউয়েবল এনার্জি), বিদ্যুৎ বণ্টন প্রভৃতি।
ড. সুব্রামনিয়ন শরণ
দ্বিতীয় মারাত্মক চ্যালেঞ্জটি হল ‘দরিদ্রের মধ্যে দরিদ্রতম’। তারা সবচেয়ে গরিব বলে সাক্ষরতায়, স্বাস্থ্যসূচকে, গৃহ ও শৌচাগার, খাদ্য ও জল, সরকারি পণ্য এবং পরিষেবা গ্রহণেও তাদের অবস্থান সবার নীচে। একটি গ্রামে আপনি তাদের দেখতে পাবেন সেই গ্রামটিরই প্রান্তিক এলাকাগুলিতে। অপেক্ষাকৃত গরিব রাজ্যগুলিতে দেখবেন গ্রামগুলি গরিব মানুষেই পরিপূর্ণ। এটাই মেনে নেওয়া যাক যে, উপর্যুপরি সরকারের অধীনে উন্নয়ন প্রক্রিয়া চলে ভারতের সবচেয়ে গরিব যে ২০ শতাংশ মানুষ তাঁদেরকে এড়িয়ে। মন্ত্রীরা এবং সরকারি কর্তাব্যক্তিরা গ্রাম ও সরকারি কর্মসূচির পরিদর্শনে গিয়ে হয় বড় রাস্তাতেই থেমে যান অথবা তাঁদের সেখানেই থামিয়ে দেওয়া হয়।
দরিদ্রতম মানুষের কাছে পৌঁছনোর একমাত্র উপায় হল তাদের স্বনির্ভর করে তুলতে সাহায্য করা: আকাঙ্ক্ষাপূরণে ব্যাকুল হওয়ার আগুন জ্বালিয়ে দিতে হবে তাদের মনে, সেটা তাদের হৃদয় বিদীর্ণ করে ঘরে ঢুকে যাবে, দারিদ্রের শৃঙ্খল থেকে তাদের বেরতে দিতে হবে এবং নিজেদেরকেই উঁচুতে তুলে ধরতে হবে নিজেদেরকে। পিএম-কিসান তাদের কোনও সাহায্য করবে না, কারণ খুব কম মানুষেরই একখণ্ড জমি আছে, বেশিরভাগই কৃষিশ্রমিক অথবা অন্য কোথাও শ্রমিকের কাজ করেন এবং ভীষণ গরিব মানুষের একটা বড় অংশই থাকেন শহরে, মহানগরে। ডিসরাপটিভ পলিসি পরিবর্তনটা হবে সরাসরি টাকা ট্রান্সফার করার মাধ্যমে একটি ‘বেসিক ইনকাম’। মোদিজি এই আইডিয়াটার জন্য ড. অরবিন্দ সুব্রামনিয়নকে কৃতিত্ব দিতে পারেন এবং তাঁকে আমন্ত্রণ জানিয়ে সংশ্লিষ্ট ডিপার্টমেন্টের শীর্ষপদে বসিয়ে এই স্কিমটার রূপরেখা তৈরি ও রূপায়ণ করে নিতে পারেন।
যদি আমরা ৬-৭ শতাংশ হারে বার্ষিক বৃদ্ধির চিরাচরিত ক্লান্ত-মন্থর পথটিই আঁকড়ে থাকি তবে আমাদের বিশেষ পরিবর্তন হবে না। কোনও পরিবর্তনই দেখতে পাব না যদি আমরা বর্তমান পলিসিগুলো নিয়ে রগড়ারগড়ি করতে থাকি অথবা বর্তমান প্রশাসনিক ব্যবস্থাটার মেরামতির পথটাই নিই। সংশ্লিষ্ট অফিসারদের অস্বাভাবিক ক্ষমতা বাড়িয়ে দিলে অথবা মানুষকে অভিযুক্ত করার কিংবা জেলে ভরে দেওয়ার হুমকি দিলে আরও ক্ষতি হবে। রূপান্তর গোছের পরিবর্তনের সবচেয়ে কার্যকরী একক উপায়টি হল মানুষের ক্ষমতায়ন এবং তাদের জ্ঞান, শিল্প ও কর্মদক্ষতার উপর আস্থা স্থাপন।