পুরনো রোগ চাগাড় দেওয়ায় দেহকষ্ট ভোগ করতে হতে পারে। তীর্থ ভ্রমণ ও ধর্মকর্মে আত্মিক তৃপ্তিলাভ। ... বিশদ
‘দ্বিবিধো হি বেদোক্তো ধর্মঃ—প্রবৃত্তিলক্ষণঃ, নিবৃত্তিলক্ষণশ্চ জগতঃ স্থিতিকারণম্ প্রাণিনাং সাক্ষাদভ্যুদয়নিঃ শ্রেয়সহেতুঃ।’
জীবকুলের বহিরঙ্গের অভ্যুদয়ের বা উন্নতির জন্য প্রবৃত্তিমূলক কাজকর্ম যেমন কৃষি, শিল্প, বাণিজ্য প্রভৃতির প্রয়োজন আছে। অভ্যুদয় বস্তুতপক্ষে সামাজিক উন্নতি। মানুষ সমাজে বাস করে। সে একা থাকে না। তাই সকলে নানাধরনের কাজ করে যাতে সমাজের উন্নতি হয়। একে ‘অভ্যুদয়’ আখ্যা দেওয়া হয়েছে। এই অভ্যুদয় ব্যক্তি বিশেষের কাজের থেকে বোঝা যায় না। অনেকে মিলে কাজ করলে সামগ্রিকভাবে সমাজের উন্নতি হয়। সম্মিলিত প্রবৃত্তিমূলক কর্মের দ্বারাই সভ্যতা ও সংস্কৃতির ক্রমবিকাশ সম্ভব হয়েছে।
কিন্তু মানুষের পূর্ণবিকাশের ক্ষেত্রে প্রবৃত্তিমূলক কর্ম যথেষ্ট নয়। পাশ্চাত্যদেশ প্রবৃত্তিমূলক কর্মের দ্বারা যথেষ্ট সমৃদ্ধশালী হয়েছে। সে দেশে বহিরঙ্গে যথেষ্ট সমৃদ্ধি আছে, বাহ্য ভোগ্যবস্তুর অভাব নেই অথচ অন্তর-জগত শূন্য। এ অবস্থাও সামঞ্জস্যহীন। অপরপক্ষে ভারতে বহুবছর ধরে কেবল নিবৃত্তিমার্গের উপর জোর দেওয়া হয়েছিল। নিবৃত্তিমূলক কর্ম দ্বারা চিত্ত অন্তর্মুখ ধ্যানপরায়ণ হয়, উন্নত মানুষ তৈরি হয়, কিন্তু জাগতিক সমৃদ্ধি হয় না। আবার অতিশয় দারিদ্র্যে আধ্যাত্মিক সচেতন হবার বোধ তথা প্রয়োজনীয়তা মানুষের কাছে অর্থহীন হয়ে দাঁড়ায়। নিষ্ঠুর নির্মম জীবন সংগ্রামে সেই অতি গরিব মানুষটির জীবন থেকে আধ্যাত্মিক সচেতনতা হারিয়ে যায়। কাজেই সুস্থ সমাজজীবনের জন্য প্রবৃত্তিমূলক ও নিবৃত্তিমূলক উভয়বিধ কর্মের প্রয়োজন আছে। যেমন একটা জাহাজ যাচ্ছে—যার একদিক ভারী হলে যেমন জাহাজটির বিপদের সম্ভাবনা আছে, তেমনি অপরদিকটি বেশি ভারী হলেও বিপদের সম্ভাবনা থাকে। সাম্যাবস্থায় (Steady) পৌঁছানোর জন্য দুদিকের ভার সমান হতে হবে। সেইজন্য অভ্যুদয় আর নিঃশ্রেয়স—এ দুটির উপরই সমান জোর দেওয়া প্রয়োজন। শাঙ্করভাষ্যে এটিই পরিষ্কারভাবে বলা হয়েছে।
ভগবান শ্রীকৃষ্ণ কুরুক্ষেত্রে অর্জুনকে যে তত্ত্বের উপদেশ দিয়েছিলেন তার উৎস হলো উপনিষদ্। ঋষিরা বৈজ্ঞানিক দৃষ্টি নিয়ে মানুষের ভিতরের তত্ত্ব জেনেছিলেন যে আমাদের এই শরীর মন ইন্দ্রিয়াদি এ সবের পিছনেই আত্মচৈতন্য রয়েছে, যা আমাদের আসল স্বরূপ। এর জন্মও নেই, মৃত্যুও নেই। উপনিষদের এটি Central teaching (মূল কথা)। গীতার দ্বিতীয় অধ্যায়ে এই সার কথাই ব্যাখ্যা করা হয়েছে। আর বর্তমানে স্বামী বিবেকানন্দের বাণীর সারমর্ম হলো divinity of man বা মানুষের দেবত্ব। সকলের
ভিতরে সর্বজনীন দেবত্ব আছে—ইহাই গীতা, উপনিষদ ও স্বামীজীর
বাণীর মূল শিক্ষা।