বাধা ও অসফলতার জন্য চিন্তা। মানসিক টানাপোড়েনের মধ্যে কোনও ভালো যোগাযোগ পেতে পারেন। ... বিশদ
ঈশ্বরলাভের উপায় সম্বন্ধে বিভিন্ন ব্যক্তি বিভিন্ন অভিপ্রায় প্রকাশিত করেন। কেহ মনে করেন, ঈশ্বর কি সহজে পাওয়া যায়? একজন বড় লোকের [সঙ্গে] দেখা করিতে হইলে কত লোকের উমেদারী, কত প্রকার পরিশ্রম, কত লোকের কত প্রকার স্তব-স্তুতি করিতে হয়। এইসকল উমেদারী ও পরিশ্রমের ফলেও সেই বড় লোকের দেখা পাইবে কিনা সন্দেহ। কিন্তু এরূপ কষ্ট ব্যতীত যে, দেখা পাইবে না, ইহা নিশ্চিত। কেহ মনে করেন, ঈশ্বর নির্গুণ, শত উপাসনা করো, কিছুতেই কিছু হইবে না; আপনাকে নির্গুণ অবস্থায় লইয়া যাইবার চেষ্টা করো, বহু সাধনার পর সেই নির্গুণ অবস্থা প্রাপ্ত হইবে। কেহ মনে করেন, তাঁহার উপাসনার প্রথাসকল রহিয়াছে, সেই প্রথা অনুসারে কার্য করো, পুষ্পে, নৈবেদ্য প্রভৃতি দিয়া অর্চনা করো, শুদ্ধরূপে মন্ত্রসকল উচ্চারণ করো—এইসকল কার্য করিতে-করিতে যদি ত্রুটি না হয়, তাঁহার কৃপাদৃষ্টি পড়িলেও পড়িতে পারে। কেহ-বা বলেন, ও-সকল বাহ্যপূজায় কি ঈশ্বরের তৃপ্তি হয়? ও-সকল বাহ্যপূজা নিম্ন অধিকারীর নিমিত্ত । তাঁহার নাম করো, ধ্যান করো, কীর্তন করো, ক্রমে ক্রমে উন্নতি হইতে থাকিবে। কেহ বলেন, অতি শুদ্ধাচারে থাকিতে হইবে, প্রত্যহ স্নান করিয়া শুচি হও, সকাল বিকাল সন্ধ্যাহ্নিক করো, হবিষ্যান্ন আহার করো, আগে দেহশুদ্ধি করো, তারপর সে কথা। কেহ-বা বলেন প্রাণায়াম করিয়া আগে মনস্থির করো, নেতি ধৌতি করিয়া দেহশুদ্ধি করো—উপাসনার কথা পরে। কেহ তাঁহাদের কথায় আপত্তি করিয়া বলেন যে, সংসারে থাকিয়া নানা সাংসারিক কার্য করিয়া—ও-সকল কার্য কিরূপে হইবে? তাহার উত্তরে যোগপন্থী বলেন—“সত্যই তো, তাহা হইবার নয়, অতএব সন্ন্যাস আশ্রম অবলম্বন করো।” সে কথার প্রত্যুত্তরে তাঁহার প্রতিবাদী বলেন, “কেন, গার্হস্থ্যধর্ম কি ধর্ম নয়? গার্হস্থ্যধর্মে কি হয় না?” এই বাদ-প্রতিবাদের অন্তর্ভূত একটি কথা আছে: ‘হওয়া’ কাহার নাম, এ কথা তাঁহাদের উপলব্ধি হয় নাই। “নিয়তই ঈশ্বরে মনোনিবেশ,” তাহার নাম যদি ‘হওয়া’ হয়, সংসারে যে, সে-পক্ষে পদে-পদে বিঘ্ন, তাহার আর সন্দেহ নাই।
যাহাই হউক, এই তো বাদানুবাদ। ঈশ্বরের সহিত আমাদের কি সম্বন্ধ, ইহা স্থির করিতে না পারাইতে এই সকল বাদানুবাদ উপস্থিত হয়। ঈশ্বর বহুদূরে, এইরূপ ধারণাই এই বাদানুবাদের মূল।