কর্মপ্রার্থীদের ক্ষেত্রে শুভ। যোগাযোগ রক্ষা করে চললে কর্মলাভের সম্ভাবনা। ব্যবসা শুরু করলে ভালোই হবে। উচ্চতর ... বিশদ
তোমরা জান বুদ্ধ শব্দটির অর্থ হচ্ছে যাঁর মধ্যে গভীর আধ্যাত্মিক জ্ঞান আছে, যিনি বোধির দ্বারা পরিচালিত হন। সাধারণ মানুষ পরিচালিত হয় বুদ্ধি বা সহজাত বৃত্তি তথা সহজাত প্রবণতার দ্বারা। অক্টোপাস জানে যে কাঁকড়া জাতীয় জীব তার খাদ্য। অক্টোপাসের এই যে জ্ঞান তা পূর্ব অভিজ্ঞতা বা কোন পুস্তক থেকে আসেনি। এটা হচ্ছে তার সহজাত বৃত্তি। ময়ূর জানে সাপ তার জাতশত্রু, সাপও জানে ময়ূর তার জাতশত্রু। এটিও তেমনিধারা পুস্তকীয় বা অভিজ্ঞতালব্ধ বা কোন সংঘর্ষসমিতিসংজাত জ্ঞান নয়। এগুলি হ’ল এদের সহজাত প্রবৃত্তি বা যাকে তুমি বলতে পার এক ধরনের জন্মগত উত্তরাধিকার। কয়েকটি উন্নত পশুর ক্ষেত্রে তারা অভিজ্ঞতা থেকে বা সংঘর্ষসমিতির কারণে কিছু জ্ঞান প্রাপ্ত হয়। আবার কয়েকটি অধিকতর উন্নত পশু যেমন—কুকুর, বানর, তারা উপযুক্ত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে জ্ঞান বা দক্ষতা অর্জন করে। মানুষের ক্ষেত্রে দেখা যায় যে সূক্ষ্ম জ্ঞানের ওপরেও এক সূক্ষ্মতর জ্ঞানের জগৎ আছে। সেই সূক্ষ্মতর জ্ঞানকে বলা হয় বোধি। এই বোধিপ্রাপ্ত যে মহান ব্যষ্টি তাকেই সংস্কৃতে বলা হয় বুদ্ধ।
যাই হোক মহামতি বুদ্ধ মানুষের জন্যে যে আটটি পথনির্দেশনা দিয়েছিলেন তাকেই অষ্টাঙ্গমার্গ (মাগ্গ) বলা হয়। ‘অষ্টাঙ্গ’ মানে আটটি অঙ্গের সমাহার। আর সংস্কৃতে ‘মার্গ’ মানে পথ। যেমন ‘আনন্দমার্গ’। বুদ্ধের সময় সংস্কৃত মৃত ভাষায় পরিণত হয়েছিল আর সংস্কৃতেরই দুহিতা প্রাকৃত তখন ছিল জনভাষা। এই ‘মার্গ’ শব্দ প্রাকৃতে হয়ে গেল মাগ্গ।
বুদ্ধের এই আটটি নীতি হ’ল—সম্যক দর্শন, সম্যক সঙ্কল্প, সম্যক বাক, সম্যক আজীব, সম্যক ব্যায়াম, সম্যক কর্মান্ত, সম্যক স্মৃতি ও সম্যক সমাধি।
এখন, ‘সম্যক দর্শন’ কাকে বলব। সংস্কৃতে ‘দর্শন’ কথাটার দু’টি অর্থ আছে। একটি অর্থ হচ্ছে ‘দেখা’ আর অপর অর্থ বোধির দৃষ্টিতে দেখা বা আভ্যন্তরীণ ভাবে দেখা অর্থাৎ অন্তর্দৃষ্টি। ধর, তুমি দেখলে একজন কিছু চুরি করলো। এই সাধারণ ভাবে দেখা বা বাহ্যিক দৃষ্টিতে দেখার ভিত্তিতে তুমি ভেবে নিলে যে ওই মানুষটির অবশ্যই শাস্তি পাওয়া উচিত। কিন্তু অন্তর্দৃষ্টি প্রয়োগ করে তুমি দেখলে যে ওই মানুষটি চারদিন ধরে ক্ষুধার্ত ছিল। তাই অবস্থার চাপে পড়ে সে চুরি করতে বাধ্য হয়েছিল। তখন এই বোধি দর্শনের ভিত্তিতে তুমি সিদ্ধান্ত নিলে যে আর্থিক-সামাজিক সংরচনাটা নোতুন ভাবে সাজাতে হবে, তার পরিবর্তন করতে হবে যাতে করে দিনের পর দিন ক্ষুধার জ্বালা সহ্য করতে না পেরে কাউকে যেন চুরির পথ নিতে বাধ্য হতে না হয়। তাহলে এখন তোমরা দু’ধরনের দেখার মধ্যেকার তফাৎটা খুব ভালো ভাবে বুঝে গেলে।
আমি যখন আনন্দমার্গের প্রবর্ত্তন করলুম তখন আমি চেয়েছিলুম যে সামগ্রিক ভাবে মানুষের সমাজ যেন কঠোর নৈতিক অনুশাসন, মানবীয় মূল্যবোধ আর আধ্যাত্মিকতার দৃঢ় ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকে। এ জন্যে অন্তর্দৃষ্টির মাধ্যমে আমি যখন দেখলুম সমাজে অনেক বৈষম্য, অনেক ত্রুটিবিচ্যুতি পরিব্যপ্ত হয়ে আছে, তখন আমাকে একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে হ’ল। যদিও মানুষ পৃথিবীতে এসেছে প্রায় ১০ লাখ বছর আগে কিন্তু মানুষ এখন পর্যন্ত একটা দৃঢ়নিবদ্ধ সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারেনি। তাই অতীব প্রয়োজন এক সুদৃঢ় সামাজিক ব্যবস্থা সে জন্যে আমাকে ‘প্রাউট’ (প্রগতিশীল উপযোগ তত্ত্ব) নামে দর্শন শাস্ত্রের আর একটি শাখার সৃষ্টি করতে হ’ল।