রাজনীতিক ও পেশাদারদের ব্যস্ততা বাড়বে। বয়স্করা শরীর স্বাস্থ্যের প্রতি যত্ন নিন। ধনযোগ আছে। ... বিশদ
মুক্তিপ্রয়াসী ভক্ত যিনি দেবতাকে ভালবাসেন, যিনি পরিবারপরিজনকেও ভালবাসতে চান অথচ আসক্তির জালে বদ্ধ হতে চান না, তাঁর কাছে একটি বড় চ্যালেঞ্জ ভালবাসাকে কীভাবে অনাসক্ত করা যায়। সেই চ্যালেঞ্জের সার্থক মোকাবিলা সম্ভব যদি প্রিয়েরে দেবতা করা, অর্থাৎ প্রিয়জনের মধ্যে দেবতার সান্নিধ্য অনুভবের সাধনা করা যায়।
সেই সাধনার পরিণামে আবিলতা ভরা ভালবাসার আবিলতাযুক্ত ভালবাসায় উত্তরণ ঘটে। চিত্তকে তা আসক্তির মোহ থেকে মুক্ত করে নিজের ও প্রিয়জনেরও শুদ্ধ বুদ্ধ মুক্ত স্বরূপ উপলব্ধি করায়।
ভালবাসার ভাষা
ভালবাসার ভাষা এক—তা সে মানবীয় প্রেম হোক বা ভগবৎ প্রেমই হোক। বিশেষত মানবীয় প্রেম ও ভগবৎ প্রেমের ভেদরেখা যখন সঙ্গীত বা কাব্যরচয়িতার মন থেকে মুছে যেতে থাকে তখন তাঁর রচিত কোনও গান বা কবিতা কোন্টি প্রেমপর্যায়ের তা নির্ধারণ করা কঠিন হয়ে পড়ে।
ঠিক এমনটিই ঘটেছে রবীন্দ্রনাথের রচনার ক্ষেত্রে। ফলত রবীন্দ্রনাথের কোনও গান, যেখানে প্রেম বা পূজার অনুষঙ্গে বিশেষ কোনও শব্দ অনুপস্থিত, সেটি প্রেমপর্যায়ের কি পূজা-পর্যায়ের তা নিয়ে রীতিমতো বিতর্ক হতে পারে।
উদাহরণ দেওয়া যাক। ‘তোমারেই করিয়াছি জীবনের ধ্রুবতারা,/এ সমুদ্রে আর কভু হব নাকো পথহারা।’ স্বামী বিবেকানন্দ রবীন্দ্রনাথের এই গানটি ভক্তিগীতি হিসেবে শ্রীরামকৃষ্ণ শুনিয়েছিলেন। রামকৃষ্ণ মিশন-প্রকাশিত ‘সঙ্গীত-সংগ্রহ’ বইটি, যা ভক্তিগীতির সঙ্কলন, সেখানে এটিকে ভক্তিগীতি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বর্তমান লেখকেরও দীর্ঘকাল ধারণা ছিল এটি ‘পূজা’ পর্যায়ের গান এবং এই গ্রন্থের পাঠকদেরও অনেকের ধারণা সম্ভবত তা-ই।
কিন্তু ‘গীতবিতানের’ সঙ্গে মিলিয়ে দেখতে গিয়ে ধরা পড়ল এটি ‘প্রেম’ পর্যায়ের! আবার ‘তোমায় নতুন করে পাব বলে হারাই ক্ষণে ক্ষণ ও মোর ভালবাসার ধন’—এই গানটিকে বর্তমান লেখকের মনে হত ‘প্রেম’ পর্যায়ের, কিন্তু সেটি প্রকৃতপক্ষে ‘পূজা’ পর্যায়ের। ‘গীতবিতানে’ এ ধরনের বিভাগ যা স্বয়ং রবীন্দ্রনাথকৃত, তা নিয়ে মনে প্রশ্ন উঠলেও আমাদের এখন তা মেনে নেওয়া ছাড়া গত্যন্তর নেই।
ভক্ত বা প্রেমিকের কাছে অবশ্য এ ধরনের বিভাগের খুব একটা প্রাসঙ্গিকতা আছে বলে মনে হয় না; যেহেতু ভাষার থেকে তাদের কাছে ভাবই প্রধান আর দুরকম ভাবই যখন এক ভাষায় প্রকাশ করা যায়—ক্লাসিক রচনার যা অন্যতম বৈশিষ্ট্য।
স্বামী মেধসানন্দের ‘রবীন্দ্রনাথের অধ্যাত্মচেতনা ও শ্রীরামকৃষ্ণ-প্রসঙ্গ’ থেকে