পুরনো রোগ চাগাড় দেওয়ায় দেহকষ্ট ভোগ করতে হতে পারে। তীর্থ ভ্রমণ ও ধর্মকর্মে আত্মিক তৃপ্তিলাভ। ... বিশদ
বহুকাল বিপরীত চিন্তা না করিলে এই দেহাত্মবুদ্ধি দূর হয় না। কিন্তু ঐ একটা সামান্য কাজের জন্য বহু সময় দিতে মানুষ রাজী হয় না। বিপরীত চিন্তায় মন বসে না, তাই মহাপুরুষগণ কত ব্যবস্থা করিয়াছেন মনকে ‘ভিতরমুখী’ করিবার। কিন্তু তাহাদের কোনও ব্যবস্থাই মানুষ মানিয়া চলিতে পারে না। কত দারুণ আঘাত, মর্মবেদনায় মরণাপন্ন হইয়াও মনটী বহির্জগতে ক্যাঙ্ল্যামি করিয়া বেড়ায়। ম্লেচ্ছরা তাই ভগবানের ন্যায় শক্তিশালী শয়তানের কল্পনা করিয়া নিজের সকল দোষ তাহার ঘাড়ে চাপাইতেছে।
লোকে বলে জগতে এত দুঃখ কেন, কেন সৃষ্টিকর্তা এইরূপ দুঃখময় জগৎ সৃষ্টি করিয়াছেন। কিন্তু হায়, তাহারা কিছুতেই বুঝিতে পারে না যে “ভগবান সৃষ্টি করেন নাই, তিনি নিজেই জগৎ সাজিয়াছেন”। জীবের দুঃখ চাই-ই চা-ই যে! কে না জানে জগৎ দুঃখময়! কিন্তু নিজের জগৎ গুটাইবার চেষ্টা করে কে? একটী তুচ্ছ বস্তুর নাশে শাস্ত্রজ্ঞ সাধক, দীক্ষিত ভক্ত কত বিচলিত হন দেখা যায়। দেখিলে ত মনে হয় এই জগৎ মানুষেরই সৃষ্টি। বন্ধুটী পরমসুখে গদীর উপর শুইয়া আছেন আমি পাশে বসিয়া উপন্যাস পড়িতেছি। বন্ধু স্বপ্ন দেখিলেন ঘরে আগুন ধরিয়াছে, তাহার সর্ব্বস্ব পুড়িয়া যাইতেছে, তিনি বোধ করিলেন—তিনি বিপন্ন বিপন্ন। আমি কিন্তু নিশ্চিত, সুনিশ্চিত রূপে জানি, বন্ধু আমার নিরাপদে পরম সুখে আছেন। আবার আমি উপন্যাসের ঘটনার সঙ্গে মিলিয়া গিয়া কখন হাসিতেছি কখন কাঁদিতেছি!!
দিবানিশি ঐসব ঐন্দ্রজালিক ব্যাপার, ভোজবাজি নিয়া আমরা এমন মাতিয়া রহিয়াছি যে শত দুঃখের মধ্যেও যেন বেশ আছি। যদি কোথাও কোনও বিয়োগান্ত নাটকের অভিনয় হয় তবে কাঁদিবার জন্য কত শত নরনারী সেখানে গিয়া উপস্থিত হয়। মানুষের দুর্দ্দশা শুনিয়া ‘ব্যথালাভ’ করিবার জন্য মানুষ কত উৎকর্ণ!! তবুও কি প্রশ্ন করা সাজে ভগবান কেন এই দুঃখময় জগৎ সৃষ্টি করিলেন? স্পষ্ট দেখা যাইতেছে তোমার আমার মত ‘দুঃখপ্রিয়’ জনগণকে আমোদিত করাই ভগবানের উদ্দেশ্য যদি তাঁহাকে সৃষ্টিকর্তা মনে কর!!!
মন বুদ্ধিকে বলদ সাজাইয়া, গাড়ীতে রূপ-রস-গন্ধ-স্পর্শ-শব্দ বোঝাই করিতে করিতে জগতের পথে পথে ঘুরিয়া মরাই আমার কাজ! কারও হিতকথা শুনি না—কিছুই বুঝি না! ভক্ত ভগবানের মন্দির, মূর্ত্তি মহোৎসব, লীলাকীর্তন, তীর্থদর্শনের ছলে গাড়ী বোঝাই করেন। জ্ঞানী শাস্ত্রকথায় গাড়ী সাজান। আমরা বলি এক, করি আর।
সচ্চিদানন্দ ধরের সংকলিত স্বামী প্রেমেশানন্দজীর ‘পত্র-সংকলন’ থেকে