বিদ্যার্থীদের ক্ষেত্রে ভাবনা-চিন্তা করে বিষয় নির্বাচন করলে ভালো হবে। প্রেম-প্রণয়ে বাধাবিঘ্ন থাকবে। কারও সঙ্গে মতবিরোধ ... বিশদ
সেইজন্য শিশুর প্রাণস্তরের শিক্ষা যথাসম্ভব সত্ত্বর আরম্ভ করবার বিশেষ প্রয়োজন, বস্তুতঃ যখনই সে ইন্দ্রিয় পরিচালনা করতে শিখেছে তখন সঙ্গে সঙ্গেই তা আরম্ভ হয়ে যাওয়া উচিত। এতে অনেক কু-অভ্যাসের হাত থেকে সে রক্ষা পাবে, অনেক ক্ষতিকর প্রভাব বর্জ্জন করতে পারবে।
সাধারণতঃ, ইন্দ্রিয় সমূহের এবং সত্তার সব রকমের শিক্ষা, সংস্কৃতি ও শুদ্ধিকরণ হল—প্রবৃত্তি, বাসনা এবং গভীর আসক্তিকে সংশোধিত করার অন্যতম প্রকৃষ্ট উপায়। এইগুলিকে দূরীভূত করলে তাদের সংশোধন হয় না; এগুলির উৎকর্ষ সাধন করা, বোধশক্তিযুক্ত ও মার্জ্জিত করা—তাই হবে সংশোধনের সুনিশ্চিত উপায়। প্রগতি ও উন্নতির সন্তোষজনক সম্ভাব্য প্রকাশ ঘটতে দেওয়া ও কোনরূপ সামঞ্জস্যবোধ ও অনুভূতির নির্ভুলতা অর্জন করা তাই হল সত্তার সংস্কৃতি, সত্তার শিক্ষার অংশবিশেষ। যারা তাদের বুদ্ধিবৃত্তির উৎকর্ষতাসাধন করে, যারা শিক্ষা করে, পড়াশোনা করে, চিন্তা করে, তুলনা করে ও গভীর ভাবে অধ্যয়ন করে—এই ধরনের ব্যক্তিরা, উপরোক্ত গুণ-সমন্বিত। এইসব ব্যক্তিদের মনের প্রসারতা ঘটে, তারা অনেক উদার, তাদের বোধশক্তি অন্য যারা মানসিক শিক্ষা ছাড়াই জীবন যাপন করে তাদের অপেক্ষা অনেক বেশী। এইসব ব্যক্তিরা (মানসিক শিক্ষা-বিহীন) তুচ্ছ কতকগুলি ধারণা নিয়ে থাকে যা কখনও কখনও তাদের চেতনার বিপরীতধর্মী ও তাদেরকে সম্পূর্ণভাবে পরিচালিত করে কেননা কেবল এই ধারণাগুলিই তাদের আছে এবং তারা মনে করে যে তাদের এইসব অসামান্য ধারণাগুলির দ্বারাই তাদের জীবন নিয়ন্ত্রিত হওয়া উচিত, এইসব ব্যক্তিরা খুবই সঙ্কীর্ণ ও সীমিত চেতনার—অপরপক্ষে যারা শিক্ষার আলোকপ্রাপ্ত ও অধ্যয়নশীল—এসবের ফলে অন্ততঃ তাদের মনের প্রসারতা ঘটে এবং তারা বুঝতে পারে, বিভিন্নভাবে তুলনামূলক বিচার করতে পারে এবং অনুভব করে যে পৃথিবীতে সবরকমের সম্ভাব্য ধারণা আছে এবং কেবল সীমিত সংখ্যার ধারণার প্রতি আসক্ত থাকা এবং সেইগুলিকেই সত্যের একমাত্র প্রকাশ বলে মনে করা অযৌক্তিক হবে।
চেতনাকে এক ঊর্দ্ধতর উন্নতির জন্য প্রস্তুত করতে শিক্ষা নিশ্চয়ই অন্যতম উৎকৃষ্ট উপায়।
কিন্তু কোন যুক্তিসিদ্ধ শিক্ষার অর্থ অবশ্যম্ভাবীরূপে তিনটি জিনিস: প্রথমত: মানুষকে শিক্ষা দেওয়া যে কিভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হয় এবং যে বিষয় সমূহের উপর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে সেগুলিকে কিভাবে ভাল ক’রে জানতে হয়, দ্বিতীয়ত: তাদেরকে ফলপ্রসূভাবে ও গভীর ভাবে চিন্তা করতে শিক্ষা দেওয়া; তৃতীয়ত: তাদের জ্ঞান ও তাদের চিন্তা নিজেদের ও সাধারণের মঙ্গলের জন্য কার্যকরী ভাবে ব্যবহার করার জন্য তাদেরকে যোগ্য করে তোলা। পর্য্যবেক্ষণ ও জ্ঞান লাভের সামর্থ্য, বুদ্ধিবৃত্তি ও বিচার ক্ষমতা, সক্রিয়তা ও উচ্চ স্বভাবের ধারণক্ষমতা—এক যুক্তিসঙ্গত সামাজিক শৃঙ্খলায় সুনাগরিকত্বের জন্য প্রয়োজন। এই সমস্ত কঠিন অথচ অবশ্য প্রয়োজনীয় গুণাবলীর যে কোন একটির অপ্রতুলতা অকৃতকার্য্যতার সুনিশ্চিত কারণ।
বুদ্ধি যেন একটি দেহযন্ত্রবিশেষ যা কতকগুলি বৃত্তির সমন্বয়ে সংশ্লিষ্ট—এই গুলিকে দুটি গুরুত্বপূর্ণ শ্রেণীতে ভাগ করা যায়—দক্ষিণ হস্তের কার্য্যাবলী ও মানসিক বৃত্তি রাজি এবং বামহস্তের কার্য্যাবলী ও মানসিক বৃত্তি রাজি।
শ্রীঅরবিন্দ ও শ্রীমায়ের ‘নব চেতনার উন্মেষে নূতন শিক্ষাধারা’ বাণী থেকে