বিদ্যার্থীদের ক্ষেত্রে ভাবনা-চিন্তা করে বিষয় নির্বাচন করলে ভালো হবে। প্রেম-প্রণয়ে বাধাবিঘ্ন থাকবে। কারও সঙ্গে মতবিরোধ ... বিশদ
জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত মানুষের জীবন বিভিন্ন পর্যায়ের। এক ক্রমবিকাশের মধ্যে সে পরিমার্জিত ও পরিবর্ধিত হওয়ার অনেক সুযোগ লাভ করেছে। যারা এই সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে পারেনি, তারাই জীবনযুদ্ধে ব্যর্থকাম হয়েছে, অশান্তি ভোগ করছে। জীবনের এই ধারা বৈচিত্র্যকে দেহধারী মানুষ এড়াতে পারেনা; মহামানব, মহাপুরুষ কেউই যেন এ থেকে বাদ পড়েন নি। সকলকে জীবনের মোড় ঘুরাতে হয়েছে। এ প্রসঙ্গে একটি দৃষ্টান্ত: রত্নাকর। ইনি জীবনযুদ্ধে সফলকাম হওয়ার জন্যে দস্যুবৃত্তি অবলম্বন করেছিলেন। কিন্তু যাদের জন্য এ দস্যুবৃত্তি তাদের কেউই এ অপকর্মের দায়িত্ব নিতে রাজী নয়। তাঁর সম্বিৎ ফিরল; তিনি ভাবিত হলেন। মাতা-পিতা, স্ত্রী-পুত্র আপনজনের ভরণপোষণ এবং এদের সুখী করতেই তো এই দুর্বৃত্তি। আর পাপের ভাগী হবেন কিনা তিনি একাই। তিনি জীবনের উদ্দেশ্যের কথা ভাবলেন; পরিবর্তিত হল জীবনের ধারা। এও সেই মোড় ঘুরানো। আত্মীয় যখন আপন হউন না তখন আপনজনকে খোঁজাই ভাল। যাঁকে পেলে আর পাবার কিছু থাকে না, তাঁকেই খুঁজবেন তিনি। জীবনের মোড় ঘুরিয়ে তপস্যায় লাভ করলেন নতুন জীবন। রত্নাকর হলেন ঋষিকবি বাল্মীকি, ঈশ্বর-জনিত পুরুষ; মহাকাব্য ‘রামায়ণ’-এর প্রণেতা, যাঁকে আমরা আজও স্মরণ করি। ইনি রামচন্দ্রের পিতা রাজা দশরথ-এর সমসাময়িক ছিলেন। জীবনের উদ্দেশ্য সাধনে জীবনযাত্রার পরিবর্তন সকলের কাম্য। এ উদ্দেশ্যই তাঁর লক্ষ্যবস্তু— ঈশ্বর বা পরমজ্ঞান। সাধনায় মানুষ দেবতা হয়, এ এক নজির।
মানুষ পার্থিব ভোগ-সুখে বড় ক্লান্ত ও শ্রান্ত। যেন এ-মানুষ হারিয়ে ফেলেছে আসল মানুষটিকে। সে ভাবছে আরও প্রয়োজন সহায়-সম্পদের। সে জানে না যে, সহায়-সম্পদের আধিক্য তাঁর এ ক্লান্তি এবং অশান্তি দূর করতে ব্যর্থ হবে। মানুষ বিভ্রান্ত। তবুও মানুষ ভোগের মধ্যে আজও ঈশ্বর আরাধনা করে, ত্যাগের পথে সাধন-ভজন করে ঈশ্বর চিন্তায় মগ্ন হয়। শ্রেয়ঃ ও প্রেয়—ত্যাগ ও ভোগের অন্ত নেই। শ্রীরামকৃষ্ণ ভোগ ও ত্যাগ এ উভয় জীবনে ঈশ্বরলাভকে জীবনের সার বলেছেন। সংসারাশ্রম ও সন্ন্যাসাশ্রম এ দুই তাঁর কাছে সমান্তরাল পথ। তিনি একটি গানের কথা বললেন: ‘কালীনামে দাও রে বেড়া, ফসলে তছরুপ হবে না’—এর সাধারণ অর্থ গরু-ছাগলের অত্যাচার থেকে ফসল রক্ষা করতে বেড়ার প্রয়োজন। সংসার যেন একটি ফসল বিশেষ। সংসারে দায়িত্ব, কর্ম ও কর্তব্য অনেক। স্ত্রী-পুরুষ, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব, দেশ-দাশের প্রতি প্রেম, প্রীতি, ভালবাসা, সেবা, স্নেহের দান ইত্যাদি কত রকম কর্তব্য রয়েছে সংসারে। তাছাড়া আপদ-বিপদ, ভাল-মন্দ, সুখ-দুঃখ দ্বন্দ্ব তো আছেই। সংসারে কর্তব্য ও দায়িত্ব পালনে এবং সকল দ্বন্দ্বের অবসান ঘটাতে বিশ্বসংসারের যিনি প্রাণকেন্দ্র, সেই ঈশ্বরে মনোনিবেশ অপরিহার্য।