বাধা ও অসফলতার জন্য চিন্তা। মানসিক টানাপোড়েনের মধ্যে কোনও ভালো যোগাযোগ পেতে পারেন। ... বিশদ
মানুষের মত মানুষ হইবে বলিয়া তুমি যে আকাঙ্ক্ষা পোষণ করিয়াছ, শ্রীপ্রভুর শুভেচ্ছা ও আশীর্ব্বাদে তাহা অভিষিক্ত হইবে। মহাজনগণের চরণ-চিহ্ন অনুসরণ করিয়া তোমাদের জীবনে তাঁহাদের সমকক্ষ অথবা ততোধিক মহিমাময় গৌরব প্রতিষ্ঠিত হউক। পরার্থে সর্ব্বত্যাগে তুমি তাঁহাদের পবিত্র পদাঙ্কের অনুগমন করিয়া ধন্য ও কৃতার্থ হও। তোমার স্বার্থ-লেশহীন আত্মোৎসর্গ পরবর্ত্তীগণের জন্য সমুচ্চ আলোকস্তম্ভ-স্বরূপে দেদীপ্যমান রহুক। তোমার ভবিষ্যৎ জীবন সম্বন্ধে সদাত্মারা যে সকল আশার বাণী শুনাইয়াছেন, তাহা সহস্রগুণিত হইয়া তোমার জীবনের কর্ম্মে সত্য হউক এবং লক্ষগুণিত হইয়া মোহমুগ্ধ স্বার্থলুব্ধ লক্ষ্যহীন মানবচিত্তের উপরে প্রভাব বিস্তার করুক। কাজের মত কাজ করিয়া নামের মত নাম রাখিয়া যাও। যে নাম শুনিলে ভগবানের অভয়হস্ত প্রসারিত দেখিতে পাওয়া যায়, যে নামটী মনে থাকিলে পাপের পিচ্ছিল পথে চলিতে চলিতে কামুক লম্পট সহসা নবশক্তির উন্মেষ পাইয়া ফিরিয়া দাঁড়ায়, তোমার নামটীর মধ্যে তেমন এক জ্যোৎস্না-মাখা প্রেম এবং বজ্রাগ্নি-মাখা তপস্যার স্মৃতি জড়াইয়া রাখ। মন্ত্রশক্তিতে যেমন ক্রুব্ধ ভুজঙ্গম মাথা নত করে, বিকট-দর্শন প্রেত-মূর্ত্তি আকাশে মিলাইয়া যায়, যে নামটী দিয়া জগতের কাছে তুমি পরিচিত হইতেছ, সেই নামটীর মধ্যেও তেমন অব্যক্ত শক্তির সঞ্চার কর। মৌন সাধনের প্রচ্ছন্ন মহাবীর্য্য দিয়া ইহাকে ভরপুর কর। অকপট অক্লান্ত তপঃসাধনের বলে প্রতি নিঃশ্বাস প্রশ্বাসে সহস্র ব্রহ্মাণ্ডের উত্থান-পতন লক্ষ্য করিয়া আজ আত্মস্থ হও এবং আত্মস্থ নিত্য চৈতন্যের পরিপূর্ণ আশ্বাস পাইয়া সমগ্র জগৎকে তাহা লাভ করাও।
যাঁহার উপরে নির্ভর করিয়াছ, তাঁহার উপরে আরও নির্ভরশীল হও। যাঁহাকে সর্ব্বস্ব সমর্পণ করিয়াছ, তাঁহাতে নিজেকেও নিঃশেষে সমর্পণ কর। যাঁহাকে ভালবাসিয়া জীবনে নবযৌবনের বিকাশ পাইয়াছ, তনু মন দিয়া ভাষা ও আশা দিয়া, কর্ম্ম ও মর্ম্ম দিয়া একমাত্র তাঁহাকেই ভালবাস। যাঁহার দুয়ারে দাঁড়াইয়াছ, তিনি কাহাকেও ফিরাইয়া দেন না। প্রকৃতই যদি তাঁহাকে চাহ, না বুঝিয়া দুই চারিটা দোষ করিলে তিনি রোষ করিবেন না। জগতের সংগ্রামমুখর কর্ম্মক্ষেত্রে জগত-কল্যাণে যুদ্ধ করিতে যাইয়া রুধির-বসা-লিপ্ত ধূলিপঙ্ক অঙ্গে লাগিলে তিনি অধম পামর বলিয়া উপেক্ষা করিবেন না। যিনি হৃদয়ের স্বামী, তাঁহারই মহিমা প্রচার করিতে কলকণ্ঠ হও, সমগ্র বিদ্রোহী চিত্তবৃত্তি কোলাহল পরিহার করিয়া নিমেষে নীরব হইয়া যাইবে, চিরপ্রার্থিত তাঁর চরণে ঠাঁই দিবেন।
দুঃখদুর্গতি না থাকিলে কখনই মানুষ পরিপূর্ণ জীবন লাভ করিতে পারিত না। মাঝে মাঝে আকাশ মেঘাচ্ছন্ন না হইলে সূর্য্যরশ্মিরও কদর থাকিত না।
পাণ্ডবজননী কুন্তী চিরদুঃখই চাহিয়াছিলেন, কারণ, যখন মানুষ নিজের সীমাবদ্ধ জীবনের অক্ষমতাসমূহ স্পষ্ট করিয়া বুঝিতে পারে, শুধু তখনই শ্রীভগবানের চরণে লুটাইয়া পড়ে। অতটুকু অভিমান থাকিতেও মানুষ মনের কোণে ভগবানকে স্থান দিতে চাহে না। তাই, অনুক্ষণ তাঁহাকে মনে রাখিবার জন্য, মর্ম্মে মর্ম্মে তাঁহার নামের মধু মাখিয়া রাখিবার জন্য, দুঃখ চাই।
শ্রীশ্রীস্বামী স্বরূপানন্দের পরমহংসদেবের ‘আপনার জন’ থেকে