গৃহে শুভকর্মের প্রস্তুতি ও ব্যস্ততা। হস্তশিল্পীদের নৈপুণ্য ও প্রতিভার বিকাশে আয় বৃদ্ধি। বিদ্যায় উন্নতি। ... বিশদ
অজ্ঞান, আলস্য, জড়ত্ব নিদ্রা, প্রমাদ, নির্বুদ্ধিতা প্রভৃতি তমোগুণের কাজ। এই সকলের দ্বারা সংসৃষ্ট পুরুষ কিছুই জানে না বা বোঝে না, কিন্তু নিদ্রিতের ন্যায় বা স্তম্ভের ন্যায় জড়বৎ অবস্থান করে। সত্ত্বগুণ বিশুদ্ধ জলের ন্যায় স্বচ্ছ; কিন্তু ইহা রজঃ ও তমোগুণের সহিত মিলিত হইয়া জীবের সংসারে যাতায়াতের কারণ হয়। এই সত্ত্বগুণে শুদ্ধ চৈতন্যস্বরূপ আত্মা প্রতিফলিত হইয়া সূর্যের ন্যায় সমগ্র জড় জগৎকে প্রকাশিত করেন।
অমানিত্ব প্রভৃতি, নিয়মসমূহ, যম প্রভৃতি, শ্রদ্ধা, ভক্তি, মুমুক্ষুতা, বিভিন্ন দৈবী সম্পদ, অসদাচরণত্যাগ প্রভৃতি গুণ মিশ্র সত্ত্বগুণ হইতে উৎপন্ন হয়।
চিত্তের প্রসন্নতা, স্বস্বরূপের অনুভব, নিরতিশয় সন্তোষ, তৃপ্তি, উত্তম, আহ্লাদ এবং পরমাত্মানিষ্ঠা—এই সকল শুদ্ধ সত্ত্বগুণের কাজ। পরমাত্মনিষ্ঠা হইতে জীব নিত্য-অবিনাশী আনন্দ অনুভব করিতে সমর্থ হয়। সত্ত্ব, রজঃ ও তমোগুণের দ্বারা বর্ণিত অব্যক্ত আত্মার কারণশরীর বলিয়া কথিত হয় যে-সুষুপ্তিতে সকল ইন্দ্রিয়ের এবং বুদ্ধির বৃত্তিসমূহ লয় পায়, সেই-সুষুপ্তি কারণ শরীরাভিমানী জীবের জাগ্রৎ ও স্বপ্ন হইতে পৃথক একটি অবস্থা।
সুষুপ্তিকালে সকলপ্রকার বিষয়জ্ঞানের (এবং স্মৃতি, ভ্রান্তি প্রভৃতিরও) লয় হয়; বুদ্ধি তখন অবিদ্যারূপে অবস্থান করে। ‘আমি কিছুই জানি না’, সকল মানুষের সুষুপ্তিকালের এই প্রকার অনুভব কারণশরীররূপ অজ্ঞানের অস্তিত্ব বিষয়ে প্রমাণ। দেহ ইন্দ্রিয় প্রাণ মন অহংকার প্রভৃতি, সকলপ্রকার দেহচেষ্টা, শব্দস্পর্শাদি বিষয়সকল, সুখদুঃখাদি মনের বিকার, আকাশাদি পঞ্চমহাভূত, সমস্ত বিশ্বব্রহ্মাণ্ড, অব্যক্তনাম্নী মায়া পর্যন্ত এ-সব কিছু অনাত্মা। মায়া এবং মহৎ হইতে স্থূলদেহ পর্যন্ত মায়িক সৃষ্টি—সব কিছুই মিথ্যা। এই সকল অনাত্মবস্তুকে তুমি মরুভূমিতে জলভ্রমের ন্যায় মিথ্যা বলিয়া জান। পরমাত্মার যে স্বরূপ অবগত হইলে অধিকারী সাধক সকল বন্ধন হইতে মুক্ত হইয়া কৈবল্যমুক্তি লাভ করে, পরমাত্মার সেই স্বরূপ এখন তোমার নিকট বর্ণনা করিব।
পঞ্চকোশ হইতে পৃথক্, জাগ্রৎ-স্বপ্ন-সুষুপ্তি, এই তিন অবস্থার দ্রষ্টা, মরণ পর্যন্ত জীবের যে ‘আমি আমি’ জ্ঞান হয় সেই জ্ঞানের সাক্ষী জড়পদার্থসমূহ হইতে ভিন্ন, চেতন পরমাত্মা আছেন। যিনি জাগ্রৎ-স্বপ্ন-সুষুপ্তি এই তিন অবস্থাতেই বুদ্ধিকে এবং বুদ্ধির বৃত্তিসমূহের বর্তমানতা বা বৃত্তিসকলের অভাবকে জানেন এবং ‘অহং’-জ্ঞানের সাক্ষীরূপে বর্তমান থাকেন, সেই এই আত্মা।