কর্মে শুভ। নতুন কর্মপ্রাপ্তি বা কর্মসূত্রে দূররাজ্য বা বিদেশ গমন হতে পারে। আনন্দানুষ্ঠানে যোগদান ও ... বিশদ
তুমি ধন্য—ঈশ্বর তোমাকে তাঁর সৃষ্টি রচনার কাজে করেছেন নিযুক্ত—তোমার হাতে তুলে দিয়েছেন সোনার চাবিকাঠি—এখন মনের দুয়ার খুলে আনন্দের রাজত্বে তুমি পৌঁছুতে পার—এ শুধু তাঁর অহেতুক কৃপা, কোনওদিন অমর্যাদা করো না তাঁর দানকে। দেহাত্মবুদ্ধি মানুষকে তার আদর্শ থেকে, স্বর্গ থেকে ভ্রষ্ট করে।
এই শরীরটা দুদিন পরে ঝরে যাবে, মিশে যাবে ধুলোয় তার জন্য হত্যা করো না আত্মাকে, মনুষ্যত্বের চরম গৌরবকে করো না লাঞ্ছিত, ঈশ্বরকে ভুলে যেয়ো না।
ঈশ্বর সর্বশক্তিমান—ধুলোকে তিনি সেনা করেন, মাটি থেকে ফুল, মাটির দেহে জ্বালেন অমর প্রাণের শিখা—কত ক্ষুদ্র জীবন তাঁর প্রসাদে পেয়েছে অসামান্যের গৌরব। শব হয় শিব, গলিত পত্রের রস থেকে আবার ঝরে পুষ্পিত নির্ঝর,—এমন কোনও জীবন নেই যা তাঁর অমৃতস্পর্শে ধন্য হয়ে না ওঠে। রাত্রি আসে, জ্যোৎস্নায় ভিজে রিক্তপত্র শীতের বন ওই পাহাড়তলীর হাঁ করা গহ্বর, ধুলোমলিন ঝরাপাতা, জীর্ণ মাটির দেয়াল, পুরানো ইঁটের স্তূপ—এই সব কিছুই কী সুন্দর লাগে। তেমনি ঈশ্বরের আলোয় নিরানন্দ জীবন, জীবনের ক্ষয়ের চিহ্ন, ক্ষতের চোঁয়ানো রক্ত, অসম্মানের মসীর অবলেপ—সবই অপরূপ হয়ে ওঠে, মুহূর্তে মুছে যায় হৃদয়ের অন্ধকার। নিজেকে নিঃশেষে তাঁর হাতে সমর্পণ করে দাও, যত বড় অন্ধকারই তোমাকে ঘিরে থাক, আলোর নির্মল পদক্ষেপে অন্ধকারের দেয়াল ভেঙে ভেঙে পড়বে। এক অবারিত জগতে পাবে তুমি মুক্তি। রাত্রির অন্ধকারে নির্জন পথের বাঁকে দুহাতে প্রচুর কালি মেখে যে গাছ এলোমেলো ভূত হয়ে থাকে, আর আঁকাবাঁকা পায়ে চলা পথ অজগরের মত রয় ঘাড় গুঁজে শুয়ে—ঐখানে কংকালীতলার মাঠে মাঠে কার ছায়া ঘোরে? ভোরের আলোয় এই গাছ, গ্রামের পথ, দূরের মাঠ, ঘাসবন বহন করে আনে এক অপূর্বের সংকেত,—শান্তির ছবি আঁকে আলোর অনির্বচনীয় রেখার রঙে।
পত্রসাহিত্যে শ্রীপরমানন্দ (২য় খণ্ড) থেকে