পুরনো রোগ চাগাড় দেওয়ায় দেহকষ্ট ভোগ করতে হতে পারে। তীর্থ ভ্রমণ ও ধর্মকর্মে আত্মিক তৃপ্তিলাভ। ... বিশদ
পরমহংসদেবের উপদেশসকল নিতান্ত কঠোর ও রসহীন নহে। তিনি নিজে রসিকচূড়ামণি ছিলেন, সেইজন্য তাঁহার এক একটি উপদেশ রসে ঢল ঢল করিতে থাকে। একদিন কেশববাবুকে দক্ষিণেশ্বরে রজনী যাপন করিবার জন্য পরমহংসদেব আজ্ঞা করিয়াছিলেন। কেশববাবু নানাবিধ কারণ দেখাইয়া সন্ধ্যার পূর্বেই চলিয়া আসিতে মনস্থ করিলেন। পরমহংসদেব তচ্ছ্রবণে কহিয়াছিলেন, ‘‘বাস্তবিক আমার এরূপ অনুরোধ করা ভাল হয় নাই। আঁশচুবড়ি না হইলে কি তোমাদের ঘুম হয়? আমার একটি গল্প মনে হইতেছে। কোন গ্রামে দুইজন ধীবর কার্যানুরোধে গ্রামান্তরে গমন করিয়াছিলেন। প্রত্যাগমনের সময় পথিমধ্যে সন্ধ্যা হইল। পথটি নিতান্ত দুর্গম, দুই পার্শ্বে বন, রাত্রে দিগ্বিদিক কিছুই দেখা যায় না। কোথায় যাইবে, বিবেচনা করিয়া নিকটস্থ এক উদ্যানে প্রবেশপূর্বক মালীর গৃহে আশ্রয় গ্রহণ করিল। একে পুষ্পোদ্যান, তাহাতে রাত্রিকাল, নানা জাতীয় ফুলের সৌরভে বাগানটি আমোদিত করিয়া রাখিয়াছে। ধীবরদিগের স্থান পরিবর্তন হেতু এবং পুষ্প-সৌরভ তাহাদের চির অভ্যস্ত শুষ্ক মৎস্যের দুর্গন্ধভোগের নাসারন্ধ্রে অসহ্য হওয়ায় কিছুতেই নিদ্রাকর্ষণ হইল না। যত মন্দ মন্দ সমীরণ পুষ্পের সুগন্ধকণা তাহাদের নিকট সঞ্চালিত করিতে লাগিল, ততই তাহাদের ক্লেশের পরিসীমা রহিল না। অবশেষে তাহারা উঠিয়া বসিল এবং কতক্ষণে রজনী শেষ হইবে, এই ভাবিয়া ছটফট করিতে লাগিল! ক্রমে রাত্রি প্রভাত হইয়া আসিল, এমন সময়ে কয়েকজন ধীবরকন্যা মস্তকে মৎসের ঝুড়ি লইয়া মৎস্য ক্রয় করিতে যাইতেছিল। তাহাদের দেখিয়া ধীবরেরা ঊর্ধ্বশ্বাসে দৌড়াইয়া গিয়া তাহাদের নিকট হইতে মৎস্যের ঝুড়ি লইয়া তন্মধ্যে মস্তক প্রবিষ্ট করাইয়া দিল এবং আঘ্রান লইয়া ‘এতক্ষণে বাঁচিলাম’ বলিয়া দীর্ঘনিঃশ্বাস পরিত্যাগ করিল। তাইতো, কেশব, ধর্ম সম্প্রদায়ের নেতা হইয়া আজও আসক্তি ত্যাগ করিতে পারিলে না? ইহা নিতান্ত কুলক্ষণ জানিবে।’’ কেশববাবু কিঞ্চিৎ অপ্রতিভ হইয়া এই বাক্যগুলি শিরোধার্য জ্ঞান করিয়া লইয়াছিলেন।
রামচন্দ্র দত্ত প্রণীত ‘শ্রীশ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের জীবনবৃত্তান্ত’ থেকে