পুরনো রোগ চাগাড় দেওয়ায় দেহকষ্ট ভোগ করতে হতে পারে। তীর্থ ভ্রমণ ও ধর্মকর্মে আত্মিক তৃপ্তিলাভ। ... বিশদ
উত্তর: সাধনা বলতে তাঁর নামগুণগান, পবিত্র জীবন-যাপন করা, সৎগ্রন্থ পাঠ, ভঙ্গসঙ্গ করা—এসব। এর যে কোন একটি নিষ্ঠার সঙ্গে কেউ পালন করলে তাতেও হবে। এছাড়া জপ-ধ্যান তো আছেই। শাস্ত্রে বলে, স্থিতপ্রজ্ঞের লক্ষণ যা, তাতে উন্নীত হবার একমাত্র পথ সাধনা। ভগবানকে ভাবতে ভাবতে মানুষ ভগবানের মতোই হয়ে যায়। গীতার শংকরভাষ্যে আছে—অধ্যাত্ম শাস্ত্রে সর্বত্রই উপলব্ধি প্রাপ্ত ব্যক্তির গুণগুলি, তা যাই হোক না কেন, অনুগামী (আধ্যাত্মিক) সাধকের জন্যে অনুশাসন বলা হয়, কারণ এই বৈশিষ্ট্যগুলি (আধ্যাত্মিক) প্রচেষ্টারই ফল-স্বরূপ। আচার্য শংকর বলেছেন: ‘সর্বত্র এব হি অধ্যাত্মশাস্ত্রে কৃতার্থলক্ষণানি যানি, তানি এব সাধনানি উপদিস্যন্তে যত্নসাধ্যত্বাৎ। যানি যত্নসাধ্যানি সাধনানি লক্ষণানি চ ভবন্তি তানি।।’
প্রশ্ন: জপ-ধ্যান করাকেই সাধনা বলে কি?
উত্তর: হ্যাঁ, তা বলতে পার। জপ-ধ্যান এও সাধনা, আবার সত্যকে ধরে থাকলেও তা সাধনা, কাউকে বঞ্চনা না করাও সাধনা, ইন্দ্রিয়-নিয়ন্ত্রণও সাধনা, বিলাস বর্জন করাও সাধনা, ভগবানকে ভক্তি করাও সাধনা।
প্রশ্ন: সাধনার প্রয়োজনীয়তা কি?
উত্তর: সাধনা অর্থাৎ অভ্যাস। কোন আদর্শকে প্রাপ্ত করার চেষ্টাই হলো সাধনা। কেউ সঙ্গীত-বিদ্যা অভ্যাস করে সঙ্গীতজ্ঞ হয়, কেউ দৈহিক ব্যায়াম করে দৈহিক দিক দিয়ে বলবান হয়, তেমনি ভগবানের জন্য সাধনা করলে ভগবান লাভ হয়। সমস্ত সাধনার মধ্যে ঈশ্বর লাভ করবার সাধনাই শ্রেষ্ঠ সাধনা। প্রথমে আমাদের একটি লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য ঠিক করে নিতে হবে। ‘ভগবান লাভ’ যদি উদ্দেশ্য হয়, তবে লক্ষ্যে পৌঁছুতে হলে সাধনা ছাড়া উপায় নেই। সাধনা না করলে মনের বা আধ্যাত্মিক শক্তি পাওয়া যায় না, অতএব এ ধরনের শক্তির অভাবে ভগবান লাভ হয় না। দিনের পর দিন ভগবানের জন্য সাধনা করতে করতে সাধক ভগবানের মতো শুদ্ধ, তাঁর মতো পবিত্র হয়ে যায় এবং সাধকের মধ্যে ভগবৎ সত্তা প্রকাশ পায়। সোনার ওপরে ময়লা পড়ে থাকলে সোনাকে প্রথমে চেনা যায় না, কিন্তু ময়লা পরিষ্কার করলে বোঝা যায় এটি সোনা। তেমনি মানুষের মনের ময়লা দূর করে তার ভিতরের দেবত্বকে জাগ্রত করার জন্যই সাধনার প্রয়োজন হয়। অন্তর থেকে সাধনা না হলে তা কখনও ফলপ্রসূ হতে পারে না। যে, লক্ষ্য স্থির করে আদর্শ-প্রাপ্তির জন্য আন্তরিকভাবে চেষ্টা করছে, তার সাধনায় ফল হবে। লক্ষ্যে পৌঁছুতে চায় সে, সে তার সমগ্র জীবন সেই দিকেই চালিত করবে।
প্রশ্ন: সাধনার জন্য তিতিক্ষার কি খুব প্রয়োজন আছে?
উত্তর: খুব প্রয়োজন নেই, তিতিক্ষা উপায় মাত্র, উদ্দেশ্য নয়। এখানে উদ্দেশ্য কি তা দেখতে হবে, উদ্দেশ্য হলো মনকে বিচলিত হতে না দিয়ে সর্বদা ঈশ্বরে মন রাখা। তিতিক্ষার দুটি দিক আছে— প্রথমত সুখ দুঃখকে সহ্য করে মনকে অচঞ্চল রাখার জন্য সাধন কালে প্রথম প্রথম তিতিক্ষার প্রয়োজন আছে। আর দ্বিতীয়ত তিতিক্ষাকে অনেকে আবার লোকপ্রিয় হবার উপায় হিসেবে গ্রহণ করে, অর্থাৎ এখানে খারাপ দিক হচ্ছে—তিতিক্ষা করে অনেকে মান-যশ লাভ করতে চায়। এ জন্যে, যাঁরা ভাল সাধু, তাঁরা গোপনে তিতিক্ষা করেন, অপরকে জানতে দেন না। আমি যখন উত্তর কাশীতে ছিলুম, তখন সেখানে একজন সাধু থাকতেন, সবাই তাঁকে খুব শ্রদ্ধা-ভক্তি করতেন। তাঁর সম্বল বলতে শুধু একটি চাদর ছিল, আর কিছু ছিল না। তিনি চাদরটিকে খুব পরিষ্কার রাখতেন, তাঁর দেহ চাদরটি দিয়ে আবৃত থাকত সর্বদা।