পুরনো রোগ চাগাড় দেওয়ায় দেহকষ্ট ভোগ করতে হতে পারে। তীর্থ ভ্রমণ ও ধর্মকর্মে আত্মিক তৃপ্তিলাভ। ... বিশদ
বঙ্গভঙ্গ আন্দোলন থেকে দেশভাগ। তেভাগা আন্দোলন থেকে নকশাল আন্দোলন। সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম থেকে মাওবাদী কিংবা গোর্খাল্যান্ড আন্দোলন। এসব ক্ষেত্রেই ঘটেছে রক্তপাত। স্বাধীনতার পর থেকে গ্রামগঞ্জে, কলকারখানায় যখন কৃষক-শ্রমিকরা মাথাচাড়া দিয়ে উঠে বেঁচে থাকার অধিকার ঘোষণা করল, সেদিনও সরকারের চোখে চোখ রাখা কমিউনিস্টদের উপর দমনপীড়ন শুরু হয়। কিন্তু, সেদিনের নীতি-আদর্শে ভর করে জেগে ওঠা কমিউনিস্টরা তাতে দমে যাননি। সে কারণে তাদের বাগে আনতে লাঠি, গুলি, গ্যাস, চর লাগিয়ে ধরপাকড় কিছুই বাদ দেয়নি সরকার। ইন্দিরা গান্ধীর সময়েও চরম দুর্নীতি, অরাজকতা, একনায়কতন্ত্র, স্বৈরাচারী মনোভাবের বিরুদ্ধে দেশজুড়ে যে গণআন্দোলন হয়, সেখানেও চুপ করে বসেছিল না বাঙালি। সেসব আজ ইতিহাস বলে মনে হলেও তার মধ্যে ছিল ন্যূনতম আদর্শগত লড়াই। কিন্তু, কমিউনিস্টরাই ক্ষমতায় বসে যেদিন থেকে সিপিএম হয়ে গেল, ক্ষয়িষ্ণু আদর্শগত বোধশক্তি যেদিন থেকে লুপ্ত হয়ে গেল, আলিমুদ্দিন স্ট্রিট ‘সর্বশক্তিমান’ এই ধারণা বশবর্তী হয়ে গুটিকতক মানুষ বিরোধী দলগুলির সঙ্গে কুকুর-বিড়ালের মতো আচরণ শুরু করল। যে শ্রমিক-কৃষকের অনেকের চোখে সমাজতন্ত্রের ঠুলি পরিয়ে তারা ক্ষমতায় এল, তাদেরই পাকা ধানে মই, পুকুরে বিষ ঢেলে দেওয়া, ধানভরা গোলায় রাতের অন্ধকারে আগুন ধরিয়ে দেওয়া, পাটকল মালিকের সঙ্গে ষড়যন্ত্র করে লকআউট করে দেওয়া— কী করেনি তারা? কারণ, যে-ই না কেউ সিপিএমের ফতোয়া মানতে অস্বীকার করেছে, তার উপরই নেমে এসেছে নির্মম অত্যাচার। এইভাবে কেটে গেল, বছরের পর বছর।
৩৪ বছরের সেই অপশাসনের বিরুদ্ধে আবার যখন নিঃশব্দ বিপ্লব ঘটে গেল, তখন ভিত নড়ে উঠল লালপার্টির ঘূণ ধরা সেই দুর্গের। পতন ঘটল সিপিএম সাম্রাজ্যের। এবারেও দেখা গেল সেই উইপোকার দল রাতারাতি ঘাসফুল হয়ে গেল কাস্তে-হাতুড়ি ছেড়ে। ফের শুরু হল বিরোধী উৎপাটন যজ্ঞ। এবার এখনও রাজ্যে ক্ষমতায় আসেনি বিজেপি। কিন্তু, লোকসভা নির্বাচনে ভালো ফল করার জেরে ফের তাদের অনেকে শুরু করেছে সেই অতিদর্পের চোখরাঙানি। ভাটপাড়া, হালিশহর, কাঁচরাপাড়া, নৈহাটিতে বিজেপির একাংশ যে তাণ্ডব শুরু করেছে, তা তীব্র ভাষায় নিন্দার যোগ্য। এমনকী পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, যেদিন নরেন্দ্র মোদি দিল্লির সিংহাসনে বসতে চলেছেন, সেদিনই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে ঘরছাড়াদের পাশে দাঁড়াতে যেতে হচ্ছে। এই রাজনীতির কি অবসান হবে না? অন্য দেশেও ক্ষমতার পরিবর্তন হয়, কোথায় এমন মারদাঙ্গা, রক্তপাত, ঘর জ্বালানোর ঘটনা ঘটে? গণতন্ত্রের দশটা আঙুল হল বিরোধী দল। তাদের নিয়ে মুষ্টিবদ্ধ হাতই দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করে। হিংসার দ্বারা গণতান্ত্রিক শক্তির সফল প্রয়োগ কোনও কালে হয়নি, হবেও না।