বাধা ও অসফলতার জন্য চিন্তা। মানসিক টানাপোড়েনের মধ্যে কোনও ভালো যোগাযোগ পেতে পারেন। ... বিশদ
জনকল্যাণমূলক নীতি গ্রহণ এবং রূপায়ণের প্রথম ও প্রধান শর্ত হল বাস্তববোধ ও স্বচ্ছতা। আমাদের দেশের রাজনীতিতে এবং সরকারি প্রশাসনে এই দুটি জিনিসই মহার্ঘ। তার ফল যে কী ভয়ানক তা আমরা এখনও প্রত্যক্ষ করছি। মোট জনসংখ্যার ২০ শতাংশের বেশি, অর্থাৎ ২৫-৩০ কোটি মানুষ মনুষ্যেতর জীবনযাপনে বাধ্য হচ্ছেন। এঁরা দু’বেলা পেটভরে খেতে পান না। এঁদের জন্য উপযুক্ত বাসস্থান, ন্যূনতম চিকিৎসা এবং বুনিয়াদি শিক্ষাটুকুরও ব্যবস্থা করা যায়নি। জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক একাধিক সমীক্ষাতেও বার বার ধরা পড়ছে ‘মহান’ ভারতের এই রূঢ় বাস্তবের ছবি। ভারতের জন্য অবশ্যম্ভাবী হয়ে উঠেছে মানব পুঁজির সূচকের নিম্নগতি, বিশ্ব ক্ষুধা সূচকের ঊর্ধ্ব গতি এবং মানব উন্নয়ন সূচকে অতি নিম্নস্থান। ব্যাপারটা একাধিক প্রকোষ্ঠযুক্ত চৌবাচ্ছার জলের মতো। এক দিক জলশূন্য কিংবা সামান্য জল থাকার অর্থ সমপরিমাণ জল অন্যদিকে গিয়ে জমা হওয়া। লোকসভা নির্বাচনে বিজয়ীদের সহায়-সম্পদের যে হিসেব প্রকাশ পাচ্ছে তাতে প্রকারান্তরে যেন চৌবাচ্চায় জলের সামান্য তত্ত্বটাই প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে। ৫৪২টি আসনে এবার ভোট নেওয়া হয়েছে। বিজয়ীদের মধ্যে ৪৭৫ জন কোটিপতি। এর মধ্যে বিজেপি, কংগ্রেস, ডিএমকে, ওয়াইএসআর, শিবসেনা, তৃণমূল প্রভৃতি প্রধান দলগুলির কোনোটিই বাদ নেই! অ্যাসোসিয়েশন অফ ডেমোক্র্যাটিক রিফর্মসের তথ্য অনুযায়ী, এবার সেরা তিন ধনী এমপি হলেন কংগ্রেসি। এক নম্বরে রয়েছেন মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী কমল নাথের পুত্র নকুল নাথ। নির্বাচন কমিশনে তাঁর দেওয়া হিসেব অনুযায়ী তিনি মাত্র ৬৬০ কোটি টাকার সম্পত্তির মালিক!
মানুষের সেবা করে ধন্য হওয়ার ব্রত নিয়েই ভোটে নামেন রাজনীতির কারবারিরা। সাধারণ বিবেক বুদ্ধি বলে, রাজনীতির কারবারিরা নিজেদের সুখ-সমৃদ্ধি নিয়ে ভাবুন আর না-ভাবুন দেশবাসীর সমৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে। কিন্তু, আয়কর এবং এডিআর সূত্রে পাওয়া তথ্যের তুলনামূলক বিশ্লেষণে উল্টো ছবি বেরিয়ে এসেছে: একজন এমপি এবং তাঁর নির্বাচন ক্ষেত্রের নাগরিকদের আয়ের বৈষম্য বাড়ছে। নানা ধরনের ট্যাক্স গুনে জেরবার নাগরিকদের তুলনায় গড়পড়তা একজন এমপির সম্পত্তি ৩৪৫ গুণ বেশি! ২০১৪ সালেও এই ফারাকটা তিনশো গুণের নীচে ছিল। কেন্দ্রে শুরু হচ্ছে বিজেপি সরকারের প্রত্যাবর্তন। রাজ্যে রাজ্যে চলছে নানা দলের সরকার। ভারতবাসী সত্যিই রোজ প্রতীক্ষা করে—রাজনীতিকরা তাঁদের কথার দাম রাখবেন এবং রাজনৈতিক দলগুলি বাস্তবিক মানুষের জন্য হয়ে উঠবে। মানুষের এই প্রতীক্ষার অন্তেই বসে রয়েছে বৈষম্যহীনতা এবং সব মানুষের সুখ-সমৃদ্ধি।