যারা বিদ্যার্থী তাদের মানসিক অস্থিরতা বৃদ্ধি পাবে। নানা বিষয়ে খুঁতখুঁতে ভাব জাগবে। গোপন প্রেম থাকলে ... বিশদ
সংবাদে প্রকাশ, সদ্য বিজেপিতে যোগ দেওয়া আলিপুর এলাকার এক ‘নেতা’র একটি ভিডিও ভাইরাল হয়ে ছড়িয়ে পড়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। ওই ভাইরাল নিয়েই অভিযোগ। বিতর্কিত এই ‘নেতা’ আট ফুট লম্বা ডান্ডা নিয়ে লোকজনকে অমিত শাহের মিছিলে আসতে নির্দেশ দিচ্ছেন বলে দেখা গিয়েছে। বিজেপির প্রতীক পদ্মফুল আঁকা গেঞ্জি গায়ে তিনি একটি গ্রুপের সদস্যদের বলছেন, আপনারা কী কাজের জন্য এই গ্রুপে আছেন, ভালোই জানেন। অমিত শাহের রোড শোতে ঝামেলা হতে পারে। আপনাদের আসা খুব জরুরি। যদি না আসেন, এই গ্রুপ থেকে আমরা আপনাদের একেবারে বের করে দেব, এমন হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন তিনি। ‘স্বঘোষিত’ এই নেতাকে ওই ভিডিওতে আরও বলতে শোনা যাচ্ছে, গ্রুপে আমার যত হোয়াটসঅ্যাপ সদস্য আছেন, যত ভাই ও বন্ধু আছেন, প্রত্যেককে বলছি, আপনাদের ঝামেলা করতে হতে পারে। তাই অবশ্যই আসবেনই আসবেন। কেন গ্রুপের লোকজনের ওই মিছিলে আসা এত জরুরি, সেকথাও সেই ভিডিও বার্তায় খোলাখুলি বলেছেন। বলছেন, আট ফুটের ডান্ডা নিয়ে পুলিস আর তৃণমূলের গুন্ডাদের সঙ্গে লড়তে হবে আপনাদের।
এই ভিডিওর সত্যতা নিয়ে তিনি বলেছেন, হ্যাঁ, ভিডিওটি আমারই। আমিই বলেছি। কিন্তু, আমার সাফ কথা হল, পুরো বক্তব্য না দেখিয়ে ভিডিওর একটি অংশ কেটে প্রচার করা হচ্ছে। কেন এইসব বলেছি তার ব্যাখ্যাও দিয়েছিলাম। সেসব কেটে ভিডিওটি প্রচারিত হচ্ছে। ভিডিওটি ছিল ২ মিনিট ১৩ সেকেন্ডের। দেখানো হচ্ছে ১ মিনিট ৫৩ সেকেন্ডের ইত্যাদি ইত্যাদি। তিনি পাল্টা আরও বলেছেন, এবার আমাদের পালা আসছে। ভিডিও শুধু ওদের হাতে নেই, আমাদেরও আছে। তিনটি ছাড়ব শীঘ্রই, সব জলের মতো পরিষ্কার হয়ে যাবে।
অর্থাৎ, ক্ষমতা ও শক্তি প্রদর্শনের জন্য বাহুবল-পেশিশক্তি দেখানোই হল এখনকার রাজনীতির মূল লক্ষ্য। শুধু তিনিই নন, এবছরই প্রথম গোটা দেশ জুড়ে যে কুকথা-কুৎসিত ভাষায় একে অপরকে আক্রমণের পালা চলছে, তা আগে কখনও দেখা যায়নি। ইন্দিরা গান্ধীর আমলে নকশাল ও বামেদের দেওয়াল লিখনে ফালা ফালা করে তির্যক ভাষা লেখা হলেও এখনকার মতো গুলি করে মারব, ঝাঁটা-জুতো পেটা করা হবে এসব ভাষা প্রয়োগ হতো না। পরবর্তীকালে রাজনীতিতে যখন থেকে বেনোজলের মতো সরস্বতীর বরবঞ্চিতদের আবির্ভাব হল তখন থেকে ভাষণে গেঁয়ো খেউড় আমদানি করে সিপিএমের নেতৃত্বাধীন বামফ্রন্ট। লাল শালু কাঁধে ফেলে তাঁদের অনেককেই বস্তির কদর্য ভাষায় গালিগালাজ দিতে দেখা গেল। এরপর রাজীব গান্ধীর আমলে বিশ্বনাথপ্রতাপ সিং পকেটে বোফর্স কেলেঙ্কারির নথি নিয়ে ভারতব্যাপী আওয়াজ তুললেন ‘...রাজীব গান্ধী চোর হ্যায়!’ যা এবারেও চলছে, নামটাই শুধু বদলেছে।
সুতরাং দেখা যাচ্ছে যে, ক্ষমতায় বসার জন্য রাজনৈতিক দলগুলি সমস্তরকম শিষ্টাচার, লোকলজ্জা, নীতিবোধ ভুলে মানুষের কাছে যে ভাষায় প্রচার করছেন, তাতে হয়তো দলের পা-চাটার দল খুশিতে ডগমগ হচ্ছে। কিন্তু, সাধারণ জনমানসে কী প্রতিক্রিয়া হচ্ছে— সেটা বোধহয় তাঁদেরও ভাবার সময় এসেছে। কারণ, এখন মানুষ অন্ধ নয়, অন্যান্য দেশের ভোট দেখা এখন একটা আঙুলের খেল। অন্য দেশেও সরকার বিরোধী আন্দোলনে আগুন জ্বলে, লাঠি-গ্যাস, জল কামান, এমনকী গুলি পর্যন্ত চলে। রাষ্ট্রক্ষমতা প্রয়োগ করা হয় আন্দোলন দমনে। কিন্তু, কোথাও এমনটা হয় কী? লড়াই যদি নীতি-আদর্শগত হয়, তাহলে আঁস্তাকুড় থেকে আবর্জনা মুখে তুলে থুতু করে অন্যের দিকে ছিটিয়ে দেওয়ার নামই কি এদেশের রাজনীতি?