উপস্থিত বুদ্ধি ও সময়োচিত সিদ্ধান্তে শত্রুদমন ও কর্মে সাফল্য। ব্যবসায় গোলযোগ। প্রিয়জনের শরীর-স্বাস্থ্যে অবনতি। উচ্চশিক্ষায় ... বিশদ
অন্যদিকে, নির্বাচনী লড়াইয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল সবচেয়ে বেশি জোর দিয়েছে পশ্চিমবঙ্গের উপর। রাজ্যবাসীর কাছে তৃণমূল সুপ্রিমোর আবেদন, তাঁরা যেন বাংলার ৪২টি আসনই তাঁকে উপহার দেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্ব যদি এইমতো সফল হয় তবে বিজেপি এবং কংগ্রেস-বিরোধী অনেক আঞ্চলিক দল তাঁর নেতৃত্বে কেন্দ্রে সরকার গড়তে আগ্রহ প্রকাশ করেছে আগাম। বিজেপি-বিরোধী সরকারের চেহারা যেমনই হোক না কেন, সোনিয়া গান্ধীও আলাদাভাবে সেই সরকারের প্রতি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আশীর্বাদ প্রার্থনা করে রেখেছেন। অন্যদিকে, যে বিজেপি পশ্চিমবঙ্গের ভোটে কোনোদিনই বিশেষ প্রাসঙ্গিক বলে গণ্য হয়নি তারা এখান থেকে ২৩টি আসন সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে ময়দানে নেমেছে। বিজেপির ক্ষমতার উৎস উত্তরপ্রদেশকে কেন্দ্র করে গোবলয়। বিজেপির আশঙ্কা, উত্তর ভারত এবার আগের মতো প্রসন্ন নাও হতে পারে মোদির প্রতি। অতএব দলের পুরোধাপুরুষ শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের বাংলার দিকেই নজর ঘুরিয়েছেন অমিত শাহরা। স্বয়ং নরেন্দ্র মোদি এবং অমিত শাহ বার বার ছুটে আসছেন ভোটের প্রচারে। বিগ্রেডে মিটিং করেছেন। বাংলার নানা প্রান্তে তাঁরা জনসভা করছেন। বাংলার দিকে দিকে পদ্মফুল ফুটিয়ে গোবলয়ের আসন ঘাটতি পূরণ করার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছেন তাঁরা। কিন্তু, এবার কতটা সাফল্য বিজেপি পাবে তা নিয়ে নেতৃত্বের মধ্যেই সংশয় রয়েছে। বস্তুত, এক ঢিলে দুই পাখি মারার মতো করেই লক্ষ্য স্থির করেছে তারা। বিজেপির এই চালটি নিঃসন্দেহে দীর্ঘমেয়াদি। লোকসভার ভোটে এক বা একাধিক আসন হলে হল। তাতেই খুশি থাকবেন নেতৃত্ব। বিজেপির পাখির চোখ কিন্তু ২০২১ সালের রাজ্য বিধানসভার ভোট—এবার বপন করা বীজ থেকে দু’বছর বাদে গোলা ভরার খোয়াব দেখছেন আমিত শাহরা। রাহুল গান্ধীর কংগ্রেস পার্টি তৃণমূলের থেকে বড় হলেও বিজেপি এবং মোদি-বিরোধিতার প্রশ্নে এই মুহূর্তে সারা দেশের প্রধান মুখ হলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এমন কোনও ইস্যু নেই যাতে মোদিকে ছেড়ে কথা বলছেন তিনি। সব মিলিয়ে এবারের ভোটে উত্তরপ্রদেশ বা হিন্দি বলয় নয়, বাংলাই আলোচনার কেন্দ্রে জায়গা করে নিয়েছে। ২০১৯-এর ভোটের কেন্দ্রীয় চরিত্রের নামও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
পশ্চিমবঙ্গে ভোটের ছয় দফা খুব শান্তিতে কেটেছে বলা যাবে না। প্রচারে বাধা দেওয়া থেকে সংঘর্ষ, খুন, জখম, ভোট লুট সবই হয়েছে কমবেশি। দু’পক্ষই দুষেছে দু’পক্ষকে। সবচেয়ে বড় ঘটনাটি ঘটেছে মঙ্গলবার। উত্তর কলকাতায় অমিত শাহের রোড শো-কে কেন্দ্র করে ধুন্ধুমার কাণ্ড। হয়েছে দু’পক্ষের মধ্যে তীব্র সংঘর্ষ, রক্তারক্তি, মোটরবাইকে অগ্নিসংযোগ, একটি কলেজে হামলা। সবচেয়ে লজ্জার ব্যাপার, সংকীর্ণ রাজনীতির বলি হলেন সমস্ত রাজনীতির ঊর্ধ্বে প্রতিষ্ঠিত আমাদের প্রাতঃস্মরণীয় বিদ্যাসাগর—তাঁর জন্মের দ্বিশতবর্ষের মতো এক পুণ্য মুহূর্তে! বিদ্যাসাগর কলেজের বিধান সরণি ক্যাম্পাসে রক্ষিত বিদ্যাসাগরের একটি মূর্তি ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়েছে রাজনীতির পুতুল কিছু যুবক। ঘটনাটি নিয়ে চাপান-উতোর পৌঁছেছে দিল্লি অবধি। কিন্তু, সাধারণ মানুষ রাজনীতির এই নোংরামি নিশ্চয় চাইছেন না। ক্ষমতার শূন্য আসন শান্তিপূর্ণ স্বচ্ছ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াতেই যাতে পূরণ হয়, সেটাই মানুষের একান্ত আকাঙ্ক্ষা। রাজনৈতিক দলগুলি মানুষের অতি সামান্য এই চাহিদা পূরণ করার যোগ্যতা কবে অর্জন করবে?