উপস্থিত বুদ্ধি ও সময়োচিত সিদ্ধান্তে শত্রুদমন ও কর্মে সাফল্য। ব্যবসায় গোলযোগ। প্রিয়জনের শরীর-স্বাস্থ্যে অবনতি। উচ্চশিক্ষায় ... বিশদ
এ দফার ভোটটি আও একাধিক কারণে রাজ্য-রাজনীতির ময়দানে উল্লেখযোগ্য। ২০১৪-র লোকসভা ভোটে পশ্চিমবঙ্গ থেকে বিজেপি মাত্র দু’টি আসনে জয়ী হতে পেরেছিল। আসানসোলে থেকে বাবুল সুপ্রিয় এবং দার্জিলিং থেকে সুরিন্দর সিং আলুওয়ালিয়া। এবারও ওই দু’জনই প্রার্থী। বাবুল তাঁর আগের আসনে থাকলেও সুরিন্দর গতবারের জায়গা পাহাড় ছেড়ে এবার বর্ধমান-দুর্গাপুর কেন্দ্রে প্রার্থী হয়েছেন। বাবুল ও সুরিন্দর দু’জনই কেন্দ্রের মোদি মন্ত্রিসভায় ঠাঁই পেয়েছিলেন। কিন্তু বাবুল গোটা দেশের জন্য শিল্পমন্ত্রকের মন্ত্রী হলেও নিজের কেন্দ্র তথা পশ্চিমবঙ্গের প্রধান শিল্পাঞ্চল আসানসোলের ক্ষেত্রে আশাব্যঞ্জক কোনও ভূমিকা গ্রহণ করতে পারেননি। প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও আগের আমলে বন্ধ হয়ে যাওয়া হিন্দুস্থান কেবলসের মতো কোনও বৃহৎ শিল্প প্রতিষ্ঠানের দরজা খুলতে তো পারেনইনি, উল্টে তাঁর আমলে বার্ন স্ট্যান্ডার্ডের মতো ঐতিহ্যশালী কারখানার দরজায় তালা পড়েছে। ওইসব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কয়েক লক্ষ মানুষের রুটি-রুজির সম্পর্ক। ফলে, এবারও শিল্পনগরীতে প্রার্থী হওয়া বাবুল এলাকার ভোটারদের কত অংশের সমর্থন আদায় করতে পারবেন সেসম্পর্কে প্রশ্ন রয়েই যাচ্ছে। আর, অন্য প্রার্থী সুরিন্দর সিং আলুওয়ালিয়া তো নিজের পুরানো আসন দার্জিলিংকে টা-টা করে বর্ধমান-দুর্গাপুরের মানুষের দরজায় ভোটপ্রার্থী হয়ে হাজির হয়েছেন। নতুন এলাকায় তাঁর প্রতি মানুষ কতটা ভরসা করতে রাজি হবেন, সেই প্রশ্নেরও জবাব তৈরি হবে আজ।
আজকের ভোটপর্বের তালিকায় রয়েছে বীরভূম জেলাও। এবারের নির্বাচনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়সহ হাতে গোনা কয়েকজনকে বাদ দিলে রাজ্যে সবচেয়ে আলোচিত ব্যক্তিটির নাম অনুব্রত মণ্ডল। তিনি বীরভূম জেলার বাসিন্দা। নিজে প্রার্থী নন, কিন্তু ওই জেলার দুটি এবং প্রতিবেশী কয়েকটি জেলার বিস্তীর্ণ এলাকায় তৃণমূল প্রার্থীদের প্রধান ভরসা তিনিই। একাধিকবার নানান বিতর্কিত মন্তব্য করে তিনি রাজ্যের আম জনতার কাছে বিপুল প্রচার পেয়েছেন। একইসঙ্গে নির্বাচন কমিশনের একাধিক শোকজের মুখে পড়েছেন। প্রায় প্রতিদিনই তিনি এমন এক একটি মন্তব্য করছেন যা নিয়ে রাজনীতির বাজারে রীতিমতো চর্চা হচ্ছে। গত বছর অনুষ্ঠিত পঞ্চায়েত ভোটে তিনি গুড়-বাতাসা খাওয়ানোর নিদান দিয়েছিলেন। তা নিয়ে ব্যাপক হইচই হয়েছিল। চলতি লোকসভা ভোটে দলীয় কর্মীদের প্রতি অনুব্রত মণ্ডলের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য নিদান—নকুলদানা। ভোটার থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় বাহিনীকে পর্যন্ত তাঁর এই নকুলদানা খাওয়ানোর নিদানের নানারকম ব্যাখা হয়। কমিশন তাঁকে শোকজ করে। তিনি জবাবও দেন। মাসখানেকের মধ্যে চার-পাঁচবার শোকজ হলেও অনুব্রত মুখ বন্ধ করেননি। তাঁর চাঁদমারি থেকে রেহাই মিলছে না বিরোধী থেকে কেন্দ্রীয় বাহিনী, কারোরই। অনুব্রত-নিদানের পরীক্ষা হওয়ার কথা আজকের ভোটপর্বেই।
তবে শেষ কথা হল, আগের দফার ভোটগ্রহণ পর্বে রাজ্যের মাটিতে একটি প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। জখমও হয়েছেন বেশ কয়েকজন। ওই খুন-জখমের কারণ নিয়ে যে ব্যাখ্যাই দেওয়া হোক না কেন, আজকের পর্বে ওরকম ঘটনার যেন পুনরাবৃত্তি না-ঘটে সেই ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সবাই সচেতন সতর্ক থাকবেন, এটাই সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা। আজকের ভোট হোক আক্ষরিক অর্থেই শান্তিপূর্ণ।