বাধা ও অসফলতার জন্য চিন্তা। মানসিক টানাপোড়েনের মধ্যে কোনও ভালো যোগাযোগ পেতে পারেন। ... বিশদ
সম্প্রতি প্রকাশিত কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের রিপোর্টে আমাদের এই অসহায়তারই হুবহু প্রতিফলন ঘটেছে। রিপোর্টটি অবশ্য ২০১৭ সালের সমীক্ষার ভিত্তিতে রচনা। কলকাতাসহ সাতটি মেট্রোপলিটন শহরের ১৭টি ‘সাইলেন্স জোন’-এর শব্দমাত্রার পর্যালোচনা তারা করেছে। রিপোর্টে প্রকাশ—প্রতিটি জায়গাতেই সারা বছরের গড় শব্দমাত্রা সহনশীল মাত্রার তুলনায় অনেকটাই বেশি ছিল। দিনের বেলা কোনও জোন এই প্রশ্নে পাশ করেনি। তবে, রাতের বিচারে ১৭টির মধ্যে একটি মাত্র জোনের শব্দমাত্রা সহনশীলতার ভিতরে ছিল—সেটি বেঙ্গালুরুর। কলকাতার দুটি হাসপাতাল চত্বরকে এই ১৭টি সাইলেন্স জোনের মধ্যে রাখা হয়েছে। বলা বাহুল্য, সেই দুটির কোনোটিই এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারেনি। এই ধরনের সাইলেন্স জোনের বাইরে কেন্দ্রীয় সংস্থাটি পর্যালোচনা করেছিল গুরুত্বপূর্ণ কিছু বসতি এলাকাকেও। মোট ১৬টি বসতি এলাকার পর্যালোচনাতেও উঠে এসেছে একইরকম হতাশাজনক ছবি। দুর্ভাগ্য যে, তার মধ্যে কলকাতার বসতি এলাকার শব্দমাত্রা অত্যন্ত খারাপ। কলকাতার তিনটি বসতি এলাকাকে বিচারের মধ্যে রাখা হয়ছিল। কী দিন, কী রাত—দুটি ক্ষেত্রের কোনোটিতেই কলকাতার বসতি এলাকাকে সহনশীল শব্দমাত্রার মধ্যে খুঁজে পাওয়া যায়নি। আশার কথা কিছুটা শুনিয়েছে বেঙ্গালুরু এবং লখনউ। দিনের বেলায় ওই দুটি নগরীর একটি করে বসতি এলাকার শব্দমাত্রা সহনশীলতার মধ্যে ছিল। মুম্বই, দিল্লি, চেন্নাই, কলকাতা, বেঙ্গালুরু, হায়দরাবাদ, লখনউ প্রভৃতি মহানগরীর মোট ২৫টি বাণিজ্য এলাকার শব্দমাত্রা পর্যালোচনার কথাও রিপোর্টে স্থান পেয়েছে। এইসব এলাকায় সাধারণভাবেই শব্দমাত্রা বেশি থাকে। সেই নিরিখে এইসব স্থানে শব্দমাত্রা যা দেখা গিয়েছে তা সহনশীলতার কিছু বেশি হলেও মারাত্মক নয়। ১৩টি এলাকায় দিবাভাগে বেশি এবং ২০টি এলাকায় রাতের বেলা বেশি ছিল। অন্যদিকে, ১২টি শিল্পাঞ্চলেরও শব্দ পরিমাপ করা হয়। তার মধ্যে দুটিমাত্র শিল্পাঞ্চলের শব্দমাত্রা দিনের বেলা স্বাভাবিকের থেকে বেশি চিহ্নিত হয়েছিল। সংখ্যাটি রাতের নিরিখে তিন। তাই, বাণিজ্য এবং শিল্পাঞ্চলের খবরটি তুলনামূলকভাবে স্বস্তিদায়ক।
সবচেয়ে বেশি ভাবিয়ে তুলেছে বসতি এবং সাইলেন্স জোনের দুঃসংবাদ। আরও একটি অপ্রকাশিত সত্য এই যে—সরকারি সমীক্ষা রিপোর্টের পরিসরটি সীমাবদ্ধ এবং ক্ষুদ্র। এই উদ্বেগের শরিক তাই সারা দেশই বলা যায়। দিকে দিকে শব্দ মাপার যন্ত্র বসানো এবং কঠিন কঠোর শাস্তিদানের ব্যবস্থা করাই যথেষ্ট নয়। আসল দরকার হল আত্মসচেতনতা। বুঝতে হবে আমরা নিজেরা নিজেদেরকে ভালোবাসি কি না। আমরা আমাদের পরিবার পরিজন প্রতিবেশীকে ভালোবাসি কি না। এসব প্রশ্নের উত্তর ইতিবাচক হলে আমাদের সকলকেই সতর্ক পদক্ষেপ করতে হবে এবং এখন থেকেই। নতুবা, আমরা কিন্তু নিজ দায়িত্বে নিজেদেরকেই শেষ করে চলেছি। আত্মঘাতী যাপনের এই পথ থেকে এখনই সরে আসতে হবে
আমাদের। কাজটা কে কবে শুরু করবেন তাই দেখে অনুপ্রাণিত হওয়ার বিলাসিতা আমরা নাই-বা করলাম! আসুন, সবাই মিলে একসঙ্গে বাঁচার পথে ফিরে আসি এবং এখনই।