বাধা ও অসফলতার জন্য চিন্তা। মানসিক টানাপোড়েনের মধ্যে কোনও ভালো যোগাযোগ পেতে পারেন। ... বিশদ
গোটা দেশের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গেও লোকসভা ভোটের দামামা বেজে উঠেছে। নির্বাচন কমিশন এবার এরাজ্যের ৪২টি আসনের জন্য মোট সাত দফায় ভোটগ্রহণের নিদান দিয়েছে। ইতিমধ্যে কেবল রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসই সবক’টি আসনে নিজেদের প্রার্থীর নাম ঘোষণা করতে পেরেছে। অন্যদিকে বিজেপি থেকে শুরু করে বাম ও কংগ্রেস এব্যাপারে অনেকটাই পিছিয়ে রয়েছে। তবে, সব দলের পূর্ণাঙ্গ প্রার্থীতালিকা ঘোষিত না হলেও আসন্ন ভোটগ্রহণকে কেন্দ্র করে তৎপরতা দ্রুত বাড়ছে। একদিকে ভোটপর্বকে অবাধ ও শান্তিপূর্ণ রাখতে কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা বাহিনী পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন এলাকায় পৌঁছে গিয়েছে। রাজধানী কলকাতা মহানগরীসহ ভিন রাজ্যের সীমানাবর্তী বেশ কিছু অঞ্চলে ওই বাহিনী টহল দেওয়াও শুরু করেছে। আরও বাহিনী আসছে। অন্যদিকে, নির্বাচন কমিশনের নানাস্তরের কর্তারা রাজ্যে আসতে শুরু করেছেন। বিভিন্ন বিষয়ের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত পর্যবেক্ষকরা নিজেদের দায়িত্ব বুঝে নিচ্ছেন। কমিশনের ফরমান অনুযায়ী জেলায় জেলায় মিডিয়া সেল তৈরি থেকে বুথ চিহ্নিতকরণসহ হরেকরকম ব্যবস্থা দ্রুতগতিতে সম্পন্ন করার চেষ্টা চলছে। জেলাস্তরে জেলাশাসক তথা ডিস্ট্রিক্ট রিটার্নিং অফিসারদের পৌরোহিত্যে প্রশাসনিক ও সর্বদলীয় বৈঠক চলছে। এরইমধ্যে শনিবার ডেপুটি নির্বাচন কমিশনার সুদীপ জৈন কলকাতায় এসেছিলেন। তিনি জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারদের বৈঠকে ডেকে তাঁদের দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে অবগত করেছেন। নির্দেশ দিয়েছেন, নির্বাচনপর্বকে অবাধ, শান্তিপূর্ণ, পক্ষপাতহীন করে তুলতে প্রয়োজনীয় সমস্তরকমের ব্যবস্থা নিতে হবে। পক্ষপাতদুষ্ট অফিসারদের নিয়ে কাজ করা যাবে না। কমিশনের নির্দেশ মেনে না চললে সংশ্লিষ্ট অফিসারদের নির্বাচন প্রক্রিয়া থেকে সরিয়ে দেওয়া হবে।
এরই পাশাপাশি শনিবারই বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক করেন ডেপুটি নির্বাচন কমিশনার। বৈঠকে বিজেপি এবং কংগ্রেস রাজ্যের মোট ৭৯ হাজার পোলিং বুথকেই সুপার সেনসিটিভ তথা অতি স্পর্শকাতর ঘোষণার দাবি করে। বামেরা সরাসরি ঠিক অতটা নাহলেও রাজ্যে চলতি পরিস্থিতিতে অবাধ নির্বাচনের ব্যাপারে সংশয় প্রকাশ করেছে। ভোটপর্বকে অবাধ করতে তারাও কিছু দাবি জানায়। বিজেপি ও কংগ্রেসের দাবিকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক অরাজনৈতিক মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। বিরোধীদের ওই দাবিকে তৃণমূল কংগ্রেস ‘অনায্য’ বলে উড়িয়ে দিয়েছে। বিজেপির নেতৃত্ব কয়েকদিন আগেই দিল্লিতে নির্বাচন কমিশনে গিয়ে একই দাবি করায় ফুঁসে উঠেছিলেন বাংলা মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল সর্বাধিনায়িকা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর মতে, গেরুয়া নেতাদের ওই দাবি কার্যত ‘বাংলার মানুষকে অপমান’ করার শামিল। তা বাংলার শান্তিপূর্ণ পরিবেশ, সর্বধর্মের মানুষের নিরাপদ জীবন ও সুস্থিত অবস্থার পরিপন্থী চিত্র তুলে ধরতে চায়। আসন্ন নির্বাচনে বাংলার মানুষ ওই অপমানের জবাব দেবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন তৃণমূলের নেতানেত্রীরা। এই ইস্যুতে শাসক দলের একটি শাখা সংগঠনের উদ্যোগে কলকাতার রাজপথে অবস্থান কর্মসূচিও পালন করা হয়েছে।
কোনও গণতান্ত্রিক দেশে ভোটে শাসক ও বিরোধী পক্ষ সমস্ত বিষয়ে সহমত পোষণ করছে এমন দৃষ্টান্ত বিরল বলাই চলে। প্রতিটি ভোটেই ক্ষমতাসীনরা ক্ষমতা বজায় রাখতে মরিয়া প্রচেষ্টা চালায়। অন্যদিকে, বিরোধীরা সর্বতোভাবে সক্রিয় থাকে ক্ষমতাসীনদের গদিচ্যুত করার চেষ্টায়। তবে এই লড়াইয়ের ফলাফল নির্ধারণ করেন নির্বাচকমণ্ডলী অর্থাৎ ভোটাররা। সেই ভোটারদের সমর্থন নিজেদের দিকে টানতে বিবদমান পক্ষগুলি চেষ্টার ত্রুটি রাখে না। এলাকা, ইস্যু, সম্ভাব্য ভোটারদের প্রত্যাশা প্রভৃতি বিভিন্ন বিষয় বিবেচনা করে প্রার্থীবাছাই হয়। তারপর প্রচার
এবং শেষপর্বে তথাকথিত ইলেকশন মেশিনারির সদ্ব্যবহার করার তোড়জোড় চলে।
কিন্তু, এতসব সত্ত্বেও নির্বাচন প্রক্রিয়াকে সুষ্ঠু, অবাধ ও সার্বিক করতে নির্বাচন কমিশনের ভূমিকাই সবার উপরে। বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্র ভারতে নির্বাচন কমিশন বরাবরই অত্যন্ত মুনশিয়ানার সঙ্গে তাদের সেই ভূমিকা পালন করে এসেছে। তাই এবারও এরাজ্যের কতগুলি বুথ স্পর্শকাতর, কতগুলি অতি স্পর্শকাতর, অথবা অবাধ তা নির্ধারণের দায়িত্ব কমিশনই নিক। কমিশনের বিবেচনার উপর রাজ্যবাসীর আস্থা অটুট।
