বিমাসূত্রে ধনাগম হতে পারে। প্রেম-প্রণয়ে আনন্দ। কাজকর্মে অগ্রগতি ও সুনাম। ... বিশদ
সম্প্রতি কলকাতা শহরেই দু-দুটি ঘটনা অনেকেরই চোখ খুলে দিয়েছে। প্রথমটি পোস্তার। এক ব্যক্তির কাছে সেখানে উদ্ধার হয়েছিল ১১ লক্ষ টাকা। পুলিস সূত্রে খবর, ধৃত জেরার মুখে ওই টাকার উৎস সম্পর্কে কিছুই জানাতে পারেনি। তার থেকেই পুলিসের অনুমান, এটি হাওয়ালার টাকা। আরও তদন্তে জানা যায়, জিএসটি ফাঁকি দেওয়া টাকার একটা বড় অংশ এভাবেই ভোটের মুখে ব্যবসায়ীদের হাত ঘুরে চলে যাচ্ছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কাছে।
পরের ঘটনাটি আরও চাঞ্চল্যকর। এবার ঘটনাস্থল সদর স্ট্রিট। নিউ মার্কেট থানার অন্তর্গত এই এলাকায় আচমকা হানা দিয়ে পুলিস পাকড়াও করে এক আপাত সাদামাটা যুবককে। যার পিঠে ছিল একটি সাধারণ ব্যাগ। যেটি খুলে দেখা যায়, তাতে রয়েছে নগদ প্রায় সাড়ে ৮৭ লক্ষ টাকা। এক্ষেত্রেও পুলিসি জেরায় একই চিত্র বেরিয়ে আসে। এই বিরাট অঙ্কের টাকার কোনও হিসেব ওই যুবক দিতে পারেনি। কিন্তু পুলিসের একাংশের অনুমান, ভোটের মুখে এই টাকা নির্ঘাত কোনও রাজনৈতিক দলের কাছে পাঠানো হচ্ছিল। সেই তদন্ত এখনও চলছে।
রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সাম্প্রতিক বিভিন্ন সভায় বার বার বলে আসছেন, একটি রাজনৈতিক দল টাকা ছড়িয়ে ভোট কেনার খেলায় নেমেছে। ট্রেনপথে সেই টাকা আসছে, এমন কথাও অত্যন্ত জোরের সঙ্গেই তিনি জানিয়েছিলেন। শুধু তাই নয়, সীমান্তবর্তী নানা জেলায় বিভিন্ন সময়ে ঘটে যাওয়া গণ্ডগোলের পিছনেও বেশ কয়েকবার উঠে এসেছে একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলের নাম।
দলের নাম যাই হোক না কেন, প্রকাশ্যে এই ধরনের টাকার লেনদেন কিন্তু বন্ধ হওয়া উচিত। পুলিসকে এ ব্যাপারে আরও সক্রিয় হতে হবে। কারণ, সম্প্রতি যে দুটি ঘটনা হাতেনাতে ধরা পড়েছে, তা হিমশৈলের চূড়া মাত্র। আরও গভীরে গিয়ে তদন্ত চালালে অনেক না জানা তথ্য প্রকাশ্যে আসতে পারে।
টাকা যে নেতাদের পকেটে ঢোকে, সেরকম আশঙ্কা কিন্তু নির্বাচন কমিশনের সাম্প্রতিক পদক্ষেপেও প্রকাশ পেয়েছে। কমিশন সাফ জানিয়ে দিয়েছে, মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় ২৬ নম্বর ফর্মের সঙ্গে হলফনামা দিয়ে গত পাঁচ বছরের আয়কর রিটার্ন, বিদেশে থাকা সম্পত্তি বা বিদেশের ব্যাঙ্কে গচ্ছিত অর্থ থাকলে তার বিস্তারিত তথ্য এবং প্যান নম্বর দিতে হবে প্রার্থীকে। শুধু প্রার্থী নন, তাঁর স্ত্রীর সম্পত্তিরও বিস্তারিত হিসেব জমা দিতে হবে। উল্লেখ্য, এবারের ভোটে সম্পত্তির হিসেব, বিশেষ করে টাকা খরচের হিসেব নিয়ে অত্যন্ত কড়া মনোভাব নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। আয়কর, শুল্ক এবং আবগারি দপ্তরের সঙ্গে বৈঠক করে তারা এ ব্যাপারে তাদেরও সতর্ক করে দিয়েছে। ব্যাঙ্কে আরটিজিএস বা এনইএফটিতে বেশি পরিমাণ টাকা লেনদেন হলে নজরের আওতায় রাখতে বলা হয়েছে তাকেও। কারণ, একজন প্রার্থী তাঁর লোকসভা কেন্দ্রে সর্বোচ্চ ৭০ লক্ষ টাকা খরচ করতে পারবেন। সিংহভাগ খরচই করতে হবে চেক বা ব্যাঙ্কের মাধ্যমে। বলা বাহুল্য, এর অন্যথা ভোটের মুখে আকছারই চোখে পড়ে। প্রচারের জৌলুস, ফ্লেক্স বা ব্যানারের বাহুল্য ইত্যাদি দেখে অনেক সময়ই বোঝা যায়, এসবের তোয়াক্কা করা হয়নি।
তাই সাধারণ নেতানেত্রীদের সঙ্গে ভোটে দাঁড়ানো প্রার্থীরাও যাতে ‘মানি পাওয়ার’ ব্যবহার করার সুযোগ না পান, তা সুনিশ্চিত করতে হবে, এটাই সবার কাম্য।