বিদ্যায় অধিক পরিশ্রম করতে হবে। ব্যবসায় যুক্ত ব্যক্তির পক্ষে দিনটি শুভ। প্রেম-প্রীতিতে আগ্রহ বাড়বে। নতুন ... বিশদ
আসলে রাষ্ট্রদ্রোহের তকমা লাগিয়ে দেওয়াটা একটা রাজনৈতিক রোগ। গোরক্ষার নামে কিছু তথাকথিত ‘রক্ষকে’র গা জোয়ারিতে প্রাণ পর্যন্ত হারাতে হয়েছে এদেশেরই নাগরিককে। সেই ঘা এখনও শুকায়নি। আর এখন নতুন জিগির উঠেছে, কাশ্মীরি মানেই যেন জঙ্গি। আর এই ভাবধারাকে লালন পালন করে ইদানীং দেশেরই একটা বিশেষ শ্রেণী রীতিমতো ধমক-চমক শুরু করেছে। অসমের নাগরিকপঞ্জির ক্ষেত্রে যাই হোক একটা সরকারি প্রক্রিয়া ছিল। আশঙ্কা বুকে নিয়ে ঘুমাতে যাওয়া বহু অসমবাসী সকালে ঘুম থেকে উঠে আবিষ্কার করেছিলেন, তাঁরা আর ভারতীয় নন। কিন্তু কাশ্মীর উপত্যকা বা উত্তর-পূর্ব ভারতের বাসিন্দাদের এমনই সন্দেহের চোখে দেখা হয়, তাঁরা যেন দেশের অন্যত্র পা রাখলেই চরম অপরাধ। আর কাশ্মীরের মানুষদের সরাসরি জঙ্গি বলে চালিয়ে কিছু লোক এমন আত্মশ্লাঘা বোধ করেন যেন রাষ্ট্রপতি পুরস্কার পেয়েছেন।
সমস্যাটা আসলে গোড়ায়। ধর্মকে হাতিয়ার করে ভোটের রাজনীতি এদেশের গণতন্ত্র এবং সংবিধানকেই চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিয়েছে। কোনও রাজনৈতিক দল বা সংগঠন কোনওভাবেই একজন ভারতীয়ের মত প্রকাশের স্বাধীনতায় বাধা দিতে পারে না। নাগরিক মানে সেই ব্যক্তি ভারতের যে কোনও প্রান্তে যেতে পারেন। যে কোনও ধর্মকে মানতে পারেন। তাতে বাধা দেওয়া মানে সংবিধানকেই অসম্মান করা। যে সংবিধানের নামে শপথ নিয়ে গণতন্ত্রের মন্দির সংসদে প্রবেশ করেন একজন জনপ্রতিনিধি। সরকার চালানোর, দেশের প্রতিনিধিত্ব করার ছাড়পত্র পান। তাঁদের উপরও তো দায়িত্ব বর্তায় প্রত্যেক নাগরিকের অধিকার সুনিশ্চিত করার! তাঁর নিরাপত্তার! আইনশৃঙ্খলা রাজ্যের বিষয়। এক্ষেত্রে শুধুমাত্র কেন্দ্রীয় সরকারকেও দোষ দেওয়া যায় না। আজ যখন কোনও কাশ্মীরি শালওয়ালা রাস্তা দিয়ে সাইকেল নিয়ে যাওয়ার সময় আক্রান্ত হন, তার দায় কেবল দিল্লিতে বসে থাকা বিজেপি সরকারের হতে পারে না। সমানভাবে রাজ্য সরকারগুলিও এর দায় নিতে বাধ্য। গত ৭০ বছরে কী উন্নয়ন হয়েছে কাশ্মীরের? ছিল বলতে শুধু পর্যটন। জঙ্গি হানা এবং সেনা অভিযানের জেরে তা দীর্ঘদিন ধরে ধুঁকছে। পুলওয়ামায় জয়েশ জঙ্গিদের হামলা এবং তারপর ভারতের সামরিক অভিযানের আতঙ্কে উপত্যকার ৮০ শতাংশ অগ্রিম বুকিং বাতিল হয়ে গিয়েছে। এরপর যদি গরিবির ঠেলায় সাধারণ মানুষ পাকিস্তানের পাঠানো টাকায় ভুলে যায়, তার দায়টাই বা তাহলে কার? সেখানকার ছোটছোট ছেলেমেয়েরা দিনের পর দিন বাড়িতে বসে থাকতে বাধ্য হয়। স্কুল বন্ধ। দু’বেলা ঠিকমতো খাবার জোটে না। উন্নয়ন নেই। বিনিয়োগ নেই। তারপর যদি কেউ রাজ্য থেকে বেরিয়ে ভারতের মূল ভূখণ্ডে অন্য স্থানে ঢুকে কিছু উপার্জনের উপায় করতে চায়, তার ফল বেদম মার। নাগরিকত্ব নিয়ে প্রশ্ন। ধর্মের রাজনীতির গুঁতোয় মানবিকতা এখানে আজ ধূসর রং ধারণ করেছে। রবি ঠাকুর লিখে গিয়েছেন না... অন্ধ সে জন মারে আর শুধু মরে।