বিদ্যায় অধিক পরিশ্রম করতে হবে। ব্যবসায় যুক্ত ব্যক্তির পক্ষে দিনটি শুভ। প্রেম-প্রীতিতে আগ্রহ বাড়বে। নতুন ... বিশদ
কোনও গণতান্ত্রিক সরকারই এমন প্রশাসন চায় না। গণতন্ত্রে শ্রদ্ধাশীল সরকার চায় মানুষের সমস্ত প্রয়োজনে পাশে থাকতে—কল্যাণকামী সরকারের হাত আর হৃদয় হয়েই জেগে থাকতে হয় পুলিস এবং সাধারণ প্রশাসনকে। অবশ্য, এসব না-পেতে-পেতে, না-দেখে-দেখে কাব্য সাহিত্য সিনেমার বিষয়মাত্র ভাবতে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছিলাম আমরা। কাব্য সাহিত্য সিনেমা প্রভৃতি যে জীবন থেকেই নেওয়া—সেটাও আমরা দেখছি ইদানীং। তাঁর দৈনন্দিন কাজকর্ম আচার আচরণে আগেই দেখিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়—অনেক বার। পরে তাঁকে অনুসরণ করে চলেছে তাঁর প্রশাসন। সর্বশেষ অভূতপূর্ব নজিরটি রাখল কলকাতা পুলিস। বৃহস্পতিবার ছিল উচ্চমাধ্যমিকের ইংরেজি পরীক্ষা। পরীক্ষা শুরু সকাল ১০টায়। তার মিনিট দশেক আগে শ্যামবাজার পাঁচ মাথার মোড়ে দেখা যায় এক কিশোরী হাউ হাউ করে কাঁদছেন। তিনি কেন কাঁদছেন—জানার জন্য কিছু মানুষ এগিয়ে গিয়ে তাঁকে ঘিরে ভিড় জমান। এত কৌতূহলী মানুষের জটলা দেখে এগিয়ে যান শ্যামবাজার ট্রাফিক গার্ডের সার্জেন্ট রাজীব সিং এবং শ্যামপুকুর থানার অতিরিক্ত ওসি সুব্রত দাস। মেয়েটির হাতে বোর্ড আর ফাইলে কাগজপত্র দেখে পুলিসের বুঝতে অসুবিধা হয়নি যে তিনি পরীক্ষার্থিনী। রাজীববাবু এবং সুব্রতবাবু মেয়েটির সঙ্গে সস্নেহে কথা বলে বোঝেন, ঠিক সময়ে পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছাতে পারবেন না ধরে নিয়ে মেয়েটি অত্যন্ত ঘাবড়ে গিয়েছেন। কারণ, তখন রাস্তায় যানজট এবং তাঁর হাতে সময় আর মাত্র ১০ মিনিট! তাঁর পরীক্ষা দেওয়া কোনওভাবেই আটকাবে না, পরীক্ষা শুরুর আগেই তাঁকে পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছে দেওয়া হবে বলে দুই পুলিসকর্তা তাঁকে আশ্বস্ত করেন। তবে, পুলিসকর্তারা বুঝে যান—সাধারণভাবে রওনা দিল কোনওমতেই ১০ মিনিটে রাজাবাজারের পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছানো সম্ভব নয়, একমাত্র সমাধান ‘গ্রিন করিডর’ তৈরি করে নেওয়া। অতএব মুহূর্তকালও নষ্ট না-করে সুব্রতবাবু কলকাতা পুলিসের কন্ট্রোল রুমের সঙ্গে কথা বলেন—যাতে ওই পরীক্ষার্থিনীর জন্য সংশ্লিষ্ট রাস্তায় গ্রিন করিডর তৈরি করা যায়।
দ্রুত সেই ব্যবস্থাই করল কলকাতা পুলিস। নিজের গাড়ির সামনে বসিয়ে মিনিট কয়েকের ভিতরেই ওই ছাত্রীকে পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছে দিলেন অতিরিক্ত ওসি সুব্রত দাস—সঙ্গে সবরকমে সাহসও জোগালেন তাঁকে। এ যেন এক অসম্ভবকে সম্ভব করা—অবিশ্বাস্য বাস্তব! ভিভিআইপি ট্রিটমেন্টে যথাসময়ে পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছতে পেরে মেয়েটি দারুণ খুশি। পরীক্ষা কেন্দ্রে প্রবেশের সময় তাঁর কথায় কৃতজ্ঞতা ঝরে পড়ে ‘পুলিস কাকু’দের প্রতি। মেয়েটি অকপটে জানান, পুলিসের জন্যই আজ তাঁর পরীক্ষায় বসা সম্ভব হচ্ছে। পুলিসের এই ভূমিকা অভূতপূর্ব এবং অভিনন্দনযোগ্য। এই ঘটনায় কলকাতা পুলিসের সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের মুখও উজ্জ্বল হল। সারা রাজ্যের পুলিস প্রশাসনের উচিত, এই দৃষ্টান্তকেই সামনে রেখে এগনো। তাহলে পুলিস এবং সরকারি প্রশাসন সম্পর্কে ব্রিটিশ আমল থেকেই সাধারণের মধ্যে যে নেতিবাচক ধারণা বদ্ধমূল হয়ে রয়েছে তা ধীরে ধীরে কেটে যাবে। শুধু মুখ্যমন্ত্রীকে নয় তাঁর পুরো সরকারকেই ভালোবাসতে আর কুণ্ঠা থাকবে না রাজ্যবাসীর। সারা দেশও উপকৃত হবে এই মানবিক প্রশাসনকে অনুসরণ করলে।