পুরনো রোগ চাগাড় দেওয়ায় দেহকষ্ট ভোগ করতে হতে পারে। তীর্থ ভ্রমণ ও ধর্মকর্মে আত্মিক তৃপ্তিলাভ। ... বিশদ
কিন্তু, এই ভারতের ভিতরে আরও একটা ভারত যে বাস করে সেটাও আমরা টের পাই—কোনোরকম গবেষণা ছাড়াই। এই ভারত অন্ধকার—প্রদীপের নীচেই যেমন সুলভ অন্ধকার। যে-দেশ ইন্দিরা গান্ধীর মতো দাপুটে প্রধানমন্ত্রী পেয়েছে, পেয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো মুখ্যমন্ত্রী—সেই দেশে এখনও মেয়েরা পণপ্রথার শিকার, কন্যাসন্তান জন্ম দেওয়ার অপরাধে কোনও কোনও মা-কে সংসার থেকে বিতাড়িত হতে হয়, প্রাণও দিতে হয় কাউকে, মেয়েরা বিক্রি হয়ে যায়, মেয়েরা ধর্ষণ, গণধর্ষণেরও শিকার হয় অহরহ। অপছন্দের নারীকে ‘ডাইনি’ দেগে দিয়ে অত্যাচার করা হয়। ওইসঙ্গে রয়েছে অপশক্তির চর্চাসহ নানারকম সমস্যা প্রতিকারের ‘সেবা’। জাদুটোনা, কালাজাদু, ভূতপেত্নী, জিনপরির নামে তুকতাক, গোনাপড়া—তাবিজ-কবচ-পাথর ধারণ। অপশক্তির চর্চার আড়ালেও চলে নারী নির্যাতনের খেলা। এইসব অশুভ শক্তির কথা বলে কিছু বোকা মানুষকে সম্মোহিত করে ফেলাই প্রতারকদের লক্ষ্য। কেউ প্রভাবিত হয়েছে টেরে পেলেই গুনিনরা তাকে চূড়ান্তভাবে ঠকানোর ব্যবস্থাটি পাকা করে ফেলে—মোটা টাকা, দামি গয়নাগাঁটি চায়। ‘শিকার’ যে হয়ে পড়ে তার পক্ষে ওই প্রতারকের দাবি না-মেটানোর অবস্থা আর থাকে না। অনেককিছু খোয়ানোর পরই সেই মানুষের সংবিৎ ফেরে—ততক্ষণে প্রতারকটি চলে যায় নাগালের বাইরে। এক চাতুরি বেশিদিন অচল। চালাকিতেও নতুনত্ব আনে তারা। এই যেমন খোঁজ পাওয়া গিয়েছে, ‘ভালো’ ভূতের। বসিরহাট, বাদুড়িয়া থেকে বীরভূম পর্যন্ত নানা জায়গায় দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ভূতের কারবারিরা! প্রেমে ব্যর্থতা? দাম্পত্যকলহ? বিবাহের সুপাত্র জোগাড় হচ্ছে না? ব্যবসা জমছে না? এই সমস্ত অতি চেনা সমস্যার চটজলদি ‘সমাধান’-এ রেডি ভালো ভূতেরা। তারা সব ‘পোষ্য’ ভূত। একদল ধড়িবাজ লোক মার্কেটে নেমে পড়েছে বিশেষ বিশেষ ক্ষমতাসম্পন্ন পোষ্য ভূতের পসরা সাজিয়ে। মাইনে করা স্যাঙাতরা ঘুরে ঘুরে খদ্দের জোগাড় করে বড় গুনিনের কাছে হাজির করে আর সেখানেই বিশেষ কায়দায় ফাঁসানো হয় লোকজনকে। টাকাসহ বহুকিছু হারানোর পরই তারা বুঝতে পারে কী ঠকা ঠকেছে! অন্তত পশ্চিমবঙ্গে ভূত কেনাবেচনার ধড়িবাজি জানাজানি হয়েছে ২০১৫ সালে। পুলিস ইতিমধ্যেই কিছু ব্যবস্থাও নিয়েছে। মিডিয়াতেও অনেক প্রচার হয়েছে। তারপরও মানুষের জ্ঞানচক্ষু খোলেনি।
এর থেকে পরিষ্কার—শিক্ষার হার, স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়, ইন্টারনেটের ব্যবহার প্রভৃতি বাড়ানোটাই যথেষ্ট নয়। যথেষ্ট নয় পশ্চিমি পোশাক পরে আধুনিক স্টাইলে চলাফেরা। এমনকী মহাকাশে মানুষ পাঠিয়েও এই দেশকে টেনে তোলা সম্ভব নয়। স্কুল কলেজে কী শেখানো হচ্ছে, কারা শেখাচ্ছেন সেটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। শিক্ষাদানের দায়িত্ব যাঁদের কাঁধে, তাঁদের সকলে কি কুসংস্কারমুক্ত? ওই শিক্ষকদের যাঁরা নির্বাচন ও নিয়োগ করেন তাঁরা কি মুক্তমনের অধিকারী? দুর্ভাগ্য যে আমাদের দেশের রাজনীতি মুখে যত বিপ্লবের কথাই বলুক না কেন, বাস্তবে তারাই নানা প্রকারে কুসংস্কারকে প্রশ্রয় দিয়ে থাকে। ৩৪ বছর বাম শাসনে কাটানোর পরও বাংলা এই রসাতলে পড়ে রয়েছে কেন? এই ঘটনা রাজনৈতিক বজ্জাতির পরিণাম নয় কি? রাজনৈতিক বজ্জাতি বন্ধ না-হওয়া পর্যন্ত অন্ধকার ভারতকে আলোয় টেনে তোলা অসম্ভব।