পুরনো রোগ চাগাড় দেওয়ায় দেহকষ্ট ভোগ করতে হতে পারে। তীর্থ ভ্রমণ ও ধর্মকর্মে আত্মিক তৃপ্তিলাভ। ... বিশদ
কিন্তু শেষ রক্ষা হল না। প্রথমে হাইকোর্ট এবং পরে সুপ্রিম কোর্টও সেই রথযাত্রায় অনুমতি দিল না। দেশের শীর্ষ আদালতের রায়ে এটাও প্রমাণিত হল, রাজ্যের অভিযোগ অমূলক ছিল না। রাজ্য বরাবরই বলে আসছে, চেতনা যাত্রার নাম করে রাজ্যের চারটি জায়গা থেকে বিজেপি’র রথ বেরলে শুধু যানবাহন চলাচলই যে লণ্ডভণ্ড হয়ে যাবে, তা নয়। শান্তিশৃঙ্খলাও বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। একইসঙ্গে রাজ্য আরও যে বিষয়টি বারবার আদালতের সামনে তুলে ধরেছে, তা হল, এর ফলে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিও নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। কারণ, দেড়-দু হাজার মানুষের মিছিল রথ নিয়ে স্পর্শকাতর এলাকা দিয়ে গেলে উত্তেজনা সৃষ্টি হতেই পারে। সামনেই সাধারণতন্ত্র দিবস। সেখানেও বিরাট বাহিনীকে নিরাপত্তার কাজে রাখতে হয়। ফলে বাড়তি পুলিস মোতায়েন করাটাও একটা সমস্যার ব্যাপার।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বা তাঁর সরকারের প্রশাসনের পক্ষ থেকে যখন এইসব যুক্তি তুলে ধরা হয়েছিল, তখন অনেকেই বিষয়টিকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসাপরায়ণ বলে মন্তব্য করেছিলেন। এই অংশের যুক্তি ছিল, মমতা বিরোধীদের মিটিং-মিছিল করার অনুমতি না দিয়ে তাদের কণ্ঠরোধ করার মতো নোংরা খেলায় নেমেছেন। কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট রায় দেওয়ার আগে প্রথমেই এটা পরিষ্কার বলে দিয়েছে, যাত্রা নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ সরকার যে আশঙ্কা করছে, তা মোটেই ভিত্তিহীন নয়। মূলত এই যুক্তির উপর দাঁড়িয়েই শীর্ষ আদালত রথযাত্রার অনুমোদন সরাসরি নাকচ করে দিয়েছে। বিজেপি অবশ্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং, অসম সহ ছ’টি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী সভায় যোগ দেবেন বলে জানিয়ে বিচারপতিদের প্রভাবিত করার একটা চেষ্টা চালিয়েছিল। কিন্তু প্রধান বিচারপতি সেই যুক্তিতে কর্ণপাতই করেননি। বরং শীর্ষ আদালত এটাই স্পষ্ট করে দিয়েছে, রথযাত্রার অনুমতি পেতে হলে রাজ্যের আশঙ্কা দূর করতেই হবে।
আসলে কেন্দ্রে ক্ষমতায় থাকার দম্ভ এবং সাম্প্রদায়িক ইস্যুকে হাতিয়ার করে বিজেপি যেভাবে রাজ্যে ক্ষমতার মসনদে বসার স্বপ্ন দেখছে, তার মধ্যেই রয়েছে যত গলদ। একদিকে জোরদার সংগঠন, অন্যদিকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর স্বল্পকালের শাসন ব্যবস্থার মধ্যেই হাসপাতালে বিনামূল্যে চিকিৎসা, কন্যাশ্রী, যুবশ্রী সহ এমন বহু প্রকল্প এনেছেন, যা দিন দিন তাঁর ভোটব্যাঙ্কের ভিত্তিকে আরও শক্ত করেছে। ফলে এর সঙ্গে লড়াই করতে গেলে বিজেপি কেন, যে কোনও বিরোধী দলেরই দরকার সাংগঠনিক শক্তিবৃদ্ধি, দরকার গ্রামে গ্রামে নিজেদের শাখাপ্রশাখা বিস্তার করা। যা থেকে এ রাজ্যে বিজেপি যে এখনও সহস্র যোজন দূরে, তা অতি বড় বিজেপি ভক্তও স্বীকার করবেন। বিজেপি’র বোঝা উচিত, তৃণমূলের মতো দলকে প্রতিহত করার একমাত্র রাস্তাই হল, রাজনৈতিক লড়াই। তা না করে তারা যেভাবে স্বল্প ক্ষমতার অধিকারী হয়েই স্রেফ সাম্প্রদায়িক ইস্যুকে হাতিয়ার করে ক্ষমতা দখলের স্বপ্ন দেখা শুরু করেছে, তার ফল যা হওয়ার তাই-ই হয়েছে।
কেন্দ্রে ক্ষমতায় থেকেও প্রধানমন্ত্রীকে সাম্প্রতিক পাঁচটি রাজ্যের উপ নির্বাচনের ফলাফলে যে ভরাডুবি দেখতে হয়েছে, রাজ্য বিজেপিকেও আগামীদিনে তেমনই ঘটনার মুখোমুখি হতে হবে, যদি তারা সস্তার রাজনীতি ছেড়ে সংগঠনকে শক্তপোক্ত করার দিকে নজর না দেয়। তাই এবার তাদের বোধোদয় হোক, এটাই কাম্য।