বাধা ও অসফলতার জন্য চিন্তা। মানসিক টানাপোড়েনের মধ্যে কোনও ভালো যোগাযোগ পেতে পারেন। ... বিশদ
পরিস্থিতি যে সমস্যাময় হবে, সেই আন্দাজ করেছিলেন ব্যবসায়ীরা। কিন্তু এতটা কঠিন পরিস্থিতি হবে, তাঁরা আশা করেননি। অল ইন্ডিয়া জেম অ্যান্ড জুয়েলারি ডোমেস্টিক কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান শঙ্কর সেন বলেন, আমদানি শুল্ক কেন্দ্রীয় সরকার বাড়ানোর ফলে সমস্যা বাড়বে, তা আন্দাজ করেছিল শিল্পমহল। কিন্তু তার সঙ্গে যোগ হয়েছে চীন ও আমেরিকার বাণিজ্য যুদ্ধ। টাকার দাম কমছে। সব মিলিয়ে দাম চড়েছে সোনার। গোটা অর্থনীতিতেই একটা ধাক্কা লেগেছে। ২০০২ বা ২০০৮ সালেও এমন ধাক্কা এসেছিল। কিন্তু সোনার বাজার তাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। এবার তা শুধু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বললে কম বলা হবে। পরিস্থিতি যেদিকে যাচ্ছে, তাতে স্বর্ণশিল্পে বিপুল বেকারত্ব বাড়বে। গত জুলাই-আগস্টের হিসেব বলছে, গত বছরের তুলনায় এবার দেশে সোনা আমদানি তিনভাগের একভাগ। আমরা কেন্দ্রীয় বাণিজ্যমন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীকে এই বিষয়ে একাধিকবার চিঠি দিয়েছি। কোনও কাজ হয়নি। এবার আমরা একটা সমাধান চাই। আমরা চাই সরকার এমন কোনও নীতি নিক, যাতে স্বর্ণশিল্প বাঁচে।
স্বর্ণ শিল্প বাঁচাও কমিটির কার্যনির্বাহী সভাপতি বাবলু দে বলেন, আমরা কেন্দ্রীয় সরকারকে বারবার বলেছি, আমদানি শুল্ক কমানো হোক। আমাদের কথায় কর্ণপাত না করে তারা তা আরও এক ধাপ বাড়িয়ে সাড়ে ১২ শতাংশ করে দিয়েছে। তার দায় নিতে হচ্ছে দোকানদার ও ক্রেতাদের। সোনার দাম লাগামছাড়া হওয়ায় এখন ব্যবসা ‘জিরো’ লেভেলে নেমে এসেছে, দাবি বাবলুবাবুর। তিনি বলেন, ১৯৭১ সাল থেকে আমি ব্যবসা করছি। শিল্পে নানা উত্থান-পতনের সাক্ষী থেকেছি। কিন্তু এতটা খারাপ অবস্থা হয়নি।
তাহলে উপায়? বাবলুবাবুরা ইতিমধ্যেই সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনকে চিঠি লিখেছেন। সেখানে তাঁরা তিনটি বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন। প্রথমত, জিএসটি কমানোর দাবি জানিয়েছেন তাঁরা। এর যুক্তি হিসেবে তাঁরা বলেছেন, যখন ১০ গ্রাম সোনার দাম ৩২ হাজার টাকা ছিল, তখন তিন শতাংশ জিএসটি বাবদ যে কর আদায় হতো, ৪০ হাজার টাকায় তার চেয়ে বেশি আদায় হয়েছে। জিএসটি আসার আগে ভ্যাট ছিল এক শতাংশ। জিএসটি’ও এক শতাংশে ফিরিয়ে আনা হোক, দাবি তুলেছে স্বর্ণ শিল্প বাঁচাও কমিটি। তাদের দ্বিতীয় পরামর্শ, যেখানে গাড়ি, বাড়ি বা হরেক সামগ্রী মাসিক কিস্তি বা ইএমআই’তে পাওয়া যায়, তাহলে সোনাতেও সেই সুবিধা গ্রাহককে দেওয়া হোক। তৃতীয় পরামর্শ হিসেবে কমিটির পক্ষ থেকে ডিজিটাল বা প্লাস্টিক পেমেন্টে ছাড় দেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে। ব্যবসায়ীদের দাবি, এক্ষেত্রে এক থেকে দেড় শতাংশ কেটে নেওয়া হয় লেনদেন খরচ বাবদ। তার দায় বহন করতে হয় দোকানদারদেরই। যেখানে সরকার ডিজিটাল লেনদেনের উপর এত জোর দিচ্ছে, সেখানে ওই খরচ ০.২ শতাংশে নামানোর দাবি জানিয়েছে তারা। এতে স্বর্ণশিল্পে সুদিন ফিরবে, আশা তাদের।
সোনার দাম এতটা বেড়ে যাওয়ায় ছোট ব্যবসায়ী ও কারিগরদের অবস্থা যে সবচেয়ে করুণ, তা জানিয়েছেন বঙ্গীয় স্বর্ণশিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক টগরচন্দ্র পোদ্দার। তিনি বলেন, অন্তত ৬০ শতাংশ কাজ হারিয়েছেন কারিগররা। তাঁরা অন্য শিল্পে চলে যাচ্ছেন। শুধু বাংলায় নয়, দিল্লি ও মুম্বইতেও একই পরিস্থিতি। সোনার কাজ ছেড়ে দিনমজুরিতে নাম লিখিয়েছেন অনেকে। তাঁর আক্ষেপ, রামায়ণ-মহাভারতের যুগ থেকে যে পেশা চলে আসছে, তাতে আচমকা এতটা হাহাকার শুরু হবে, তা ভাবা যায়নি। গোটা অবস্থার কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে চিঠি দিচ্ছেন টগরবাবুরা।