ঝগড়া এড়িয়ে চলার প্রয়োজন। শরীর স্বাস্থ্য বিষয়ে অহেতুক চিন্তা করা নিষ্প্রয়োজন। আজ আশাহত হবেন না ... বিশদ
এরাজ্যে পুজোকে কেন্দ্র করে কত টাকা খরচ হয়, তার কোনও সংগঠিত হিসেব পাওয়া মুশকিল। কারণ, পুজো মানে শুধু প্যান্ডেল, প্রতিমা, লাইট বা তারকাখচিত উদ্বোধন ও রংদার বিসর্জন নয়। পুজোর সঙ্গে জড়িয়ে আছে লাগাতার প্রচার, ব্র্যান্ডিং। আছে হরেক প্রতিযোগিতায় নিজেদের সেরা প্রমাণ করার চেষ্টা। সেসবে খরচা আছে। আর আছে আপামর বাঙালি, যাঁরা পুজোকে কেন্দ্র করে খরচ করেন দু’হাত ভরে। বোনাস জুটুক না জুটুক, পুজোয় জামাকাপড় কেনা, উপহার দেওয়া বা খাওয়াদাওয়া আর ঘুরে বেড়ানোর খরচ মোটেই কম নয়। তাই সেসবকে কেন্দ্র করে জীবন-জীবিকার বহরও বিরাট। কিন্তু এসবের সামগ্রিক হিসেব কষবে কে? সর্বভারতীয় বণিকসভা অ্যাসোচেম পাঁচ বছর আগে একটি সমীক্ষা চালিয়েছিল পশ্চিমবঙ্গে দুর্গাপুজোকেন্দ্রিক ব্যবসা নিয়ে। তাদের হিসেব ছিল, ২০১৩ সালে পুজোকে কেন্দ্র করে ব্যবসা হয়েছে ২৫ হাজার কোটি টাকার। ঠিক দু’বছরের মাথায় তা ৪০ হাজার কোটি টাকা ছোঁয়ার কথা ছিল। বণিকসভাটির হিসেব ছিল, প্রতি বছর গড়ে ৩৫ শতাংশ বহর বাড়ছে পুজোকেন্দ্রিক ব্যবসার। সেই হিসেবে এবার তা এক লক্ষ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাওয়ার কথা। যে গণেশ পুজোকে কেন্দ্র করে গোটা মহারাষ্ট্রে এত ধুমধাম, সেখানকার পুজো বাজেট যে বাংলার পুজোর ধারে কাছে থাকে না, তাও জানিয়েছিল ওই সমীক্ষা। বলা হয়েছিল, ২০ হাজার কোটি টাকার ব্যবসা করা গণেশ পুজোর বহর বছরে ২০ শতাংশের বেশি বাড়ে না। বিশ্বে যে ক’টি রাস্তাকেন্দ্রিক উৎসব হয়, তার মধ্যে দুর্গাপুজো যে খরচ ও জনপ্রিয়তায় সবার শীর্ষে, তার ইঙ্গিত দিয়েছিল ওই বণিকসভা।
একটা সময় ছিল, যখন পুজো বাজেটের অনেকটাই আসত এরাজ্যে রমরম করে চলা চিট ফান্ডগুলি থেকে। সেই সুযোগ এখন নেই। তবে রাজ্য সরকার গত বছর থেকে যেভাবে পুজো পিছু ১০ হাজার টাকা দিচ্ছে, তা কিছুটা হলেও টাকার খামতি মেটাচ্ছে, দাবি করেছেন পুজো উদ্যোক্তারা। তবে গত তিন থেকে চার বছরে সেই কর্পোরেট সংস্থাগুলিই কিন্তু গৌরী সেন হয়ে টাকা বিলিয়েছে কমিটিগুলিকে। সোনার শোরুম থেকে শুরু করে ব্যাটারি, গুঁড়ো মশলা, অন্তর্বাস, মোবাইল ফোন বা গাড়ি সংস্থা— স্পনসরশিপে কার্পণ্য করেনি এমন অনেক সংস্থা। পাশাপাশি ক্রেতাসুরক্ষা বা পর্যটনের মতো রাজ্য সরকারের বিভিন্ন দপ্তরও বহু পুজো কমিটিকে জুগিয়ে গিয়েছে বিজ্ঞাপনের টাকা। পুজো কমিটিগুলির আশা, এবারও সেই ব্যবস্থার নড়চড় হবে না।
তাহলে চিন্তা কিসের? অর্থনীতিবিদরা বলছেন, গোটা পুজোর ব্যবসা এবার মার খেতে পারে শুধু আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতির কারণে। বাজারে নগদ টাকার জোগানের যে অভাব রয়েছে, তা নিয়ে সরব হয়েছে একাধিক শিল্প। ব্যাঙ্কগুলিতে টাকা আছে। অথচ ঋণ নেওয়ার লোক নেই। উৎপাদন মুখ থুবড়ে পড়েছে। কর্মী ছাঁটাইয়ের চিন্তাভাবনা চলছে নানামহলে। আর্থিক ত্রাণের জন্য সরকারের দিকে তাকিয়ে আছে শিল্পসংস্থাগুলি। এই পরিস্থিতিতে মানুষের খরচের বহর যে বিরাট মাত্রায় বাড়বে, তা আশা করা যায় না। ফলে ছোট ও মাঝারি শিল্পগুলি বাংলায় পুজোকে কেন্দ্র করে যতটা ব্যবসা করে, তা এবার টাল খেতে পারে। যদি ব্যবসাই না হয়, তাহলে স্পনসরশিপ বাবদ কর্পোরেট সংস্থাগুলি কতটা হাত খুলে খরচ করবে, সেই বিষয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়, বলছেন অর্থনীতিবিদরা। এসবের পরে আয়কর দপ্তর পুজোয় নাক গলিয়ে যেভাবে জল ঘোলা করেছে, তার প্রভাব এবার বারোয়ারি পুজোগুলিতে কতটা পড়বে, সেই প্রশ্নও এড়িয়ে যাচ্ছেন না তাঁরা।