গৃহে শুভকর্মের প্রস্তুতি ও ব্যস্ততা। হস্তশিল্পীদের নৈপুণ্য ও প্রতিভার বিকাশে আয় বৃদ্ধি। বিদ্যায় উন্নতি। ... বিশদ
যদিও আয়ুর্বেদিক চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তালপাতার পাখার বাতাস স্বাস্থ্যকর ও আরামদায়ক। তুলনায় এসি বা এয়ার কুলারের হাওয়া স্বাস্থ্যকর নয়। গরমে সাময়িক স্বস্তি দেয় মাত্র। এখন কেউ আর কৃষিজমিতে তালগাছ বসান না। অধিকাংশ তালগাছই কেটে মাটির বাড়ি তৈরিতে ব্যবহার করা হচ্ছে। তাই তালপাতার পাখার শীতল হাওয়া আগামীদিনে হয়তো গল্প কথায় পরিণত হবে। এমনটাই দাবি করেছেন পাটুলির মহাজনপট্টির প্রবীণ তালপাতার পাখাশিল্পী গোপাল মহান্ত। তাঁর বাবা তারাপদ মহান্ত ছিলেন তালপাতার পাখাশিল্পী। দিনে ৩০-৪০টি পর্যন্ত হাতপাখা বানাতে পারতেন তিনি। পাটুলিতে আগে অনেক পরিবার তালপাতার পাখা তৈরি করত। ধীরে ধীরে এর চাহিদা কমায়, তারা এই পেশা ছেড়েছে বলে জানা গিয়েছে। একসময় পূর্বস্থলীজুড়ে হাজার হাজার তালগাছ দেখা যেত। এখন তার ১০ শতাংশ গাছও নেই। তালগাছের পাতা সংগ্রহ করতে হয় বীরভূম, পুরুলিয়া থেকে। সেগুলিকে বেশ কিছুদিন রোদে শুকিয়ে হাতপাখা করতে বসেন পরিবারের সদস্যরা। তালপাতার পাখা বিক্রির মরশুম শুরু হয় ফাল্গুন মাসের মাঝামাঝি। চলে আশ্বিন মাস পর্যন্ত।
গোপালবাবু বলেন, পৌষমাস থেকে আমরা তালপাতা সংগ্রহ শুরু করি। একশ্রেণীর মহাজন আছে, যারা বিভিন্ন জেলা থেকে দিনমজুরদের দিয়ে তালগাছের পাতা কাটায়। পরে সেই পাতা আমাদের বিক্রি করে। আমরা সেগুলিকে সাইজ করে কেটে, সরু বাঁশের টুকরো দিয়ে বেঁধে রং করে হাতপাখার রূপ দিই। বাড়ির মহিলারা এই কাজে সহযোগিতা করেন।
তালপাতার পাখা বিক্রির বড় জায়গা গ্রামীণ এলাকার মেলা। ফাল্গুন থেকে চৈত্রমাস পর্যন্ত বিভিন্ন মেলায় তালপাতার পাখা বিক্রি বাড়ে। বছর পাঁচেক আগে একটি পাখা ৮ থেকে ১০ টাকায় বিক্রি হতো। এখন তার দাম বেড়ে হয়েছে ১৫ থেকে ২০ টাকা। গোপালবাবুর ছেলে নির্মল মহান্ত বলেন, শতকরা ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা দরে আমাদের তালপাতা কিনতে হয়। তারপর পাখা তৈরি করতে রং, বাঁশের খরচ রয়েছে। আগের থেকে এই পাখার চাহিদা অনেকটাই কমে গিয়েছে। লাভও এখন তেমন নেই। অনেকে প্লাস্টিক, ফাইবারের পাখা ব্যবহার করেন। তাই আগামীদিনে হয়তো আমাদের এই পাখা তৈরির পেশা ছেড়ে দিতে হবে।