কর্মে অগ্রগতি ও নতুন কাজের বরাত প্রাপ্তি। আইটি কর্মীদের শুভ। মানসিক চঞ্চলতার জন্য বিদ্যাচর্চায় বাধা। ... বিশদ
কেন চালু হল নতুন নিয়ম?
কেবল ব্যবসায় স্বচ্ছতা আনার লক্ষ্যই ডিজিটাইজেশন হয়। কিন্তু সেই পরিবর্তনের পরও স্বচ্ছতা আসেনি টিভি দেখার খরচে। প্যাকেজের নামে একগুচ্ছ চ্যানেল টিভির পর্দায় ভেসে উঠত এতদিন। যে চ্যানেল দেখেন না দর্শক, তার জন্যও গুনতে হতো খরচ। সেই সংস্কৃতিতে রাশ টানতেই ২০১৭ সালের মার্চ মাসে নয়া নিয়ম চালু করে ট্রাই। সেখানেই বলা হয়, দর্শকের পূর্ণ স্বাধীনতা আছে চ্যানেল বাছাইয়ের। অর্থাৎ তিনি যা দেখবেন, তার জন্যই খরচ করবেন। কিন্তু তা কেবল ব্যবসায় ততটা গ্রাহ্য হয়নি। সেই নিয়মকে বাধ্যতামূলক করতে অবশেষে গত বছরের ২৮ ডিসেম্বর সমসয়সীমা বেঁধে দেয় ট্রাই। পরবর্তীকালে দর্শককে বিষয়টি বুঝে নিতে এবং কেবল সংস্থা ও অপারেটরদের নয়া নিয়ম সম্পর্কে অবগত করতে সময়সীমা বাড়ায় কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা।
নতুন নিয়মে কী কী এল?
প্রথমেই বলা হয়েছে, দর্শক ১০০টি স্ট্যান্ডার্ড ডেফিনিশন বা এসডি চ্যানেল দেখতে পাবেন। তার জন্য তাঁকে দিতে হবে সর্বোচ্চ ১৩০ টাকা। এটা ক্যাপাসিটি ফি। এরপর যদি কোনও দর্শক পে চ্যানেল দেখতে চান, তাহলে সেই চ্যানেলের দাম দর্শককে দিতে হবে। চ্যানেল সংখ্যা ১০০ পেরিয়ে গেলে, প্রতি ২৫টি চ্যানেলের জন্য দিতে হবে ২০ টাকার ক্যাপাসিটি ফি।
প্রথম ১০০টি চ্যানেল কি ফ্রি টু এয়ার হতেই হবে?
একদমই নয়। এর মধ্যে যেমন ফ্রি চ্যানেল আছে, তেমনই থাকতে পারে পে চ্যানেলও। এমনকী চ্যানেল বোকে নিলেও তা ওই ১০০টি চ্যানেলের মধ্যে ঢুকতে পারে।
তাহলে লাভ কী হল?
২৫টি অতিরিক্ত চ্যানেলের জন্য যে ২০ টাকা ক্যাপাসিটি ফি দেওয়ার নির্দেশ রয়েছে, তা এড়িয়ে যেতে পারেন গ্রাহক। সেটি এড়াতেই তাঁরা ওই ১০০টি চ্যানেলের মধ্যে পে চ্যানেল ঢুকিয়ে নিতে পারেন।
ক্যাপাসিটি ফি কি দিতেই হবে?
ট্রাই জানিয়ে দিয়েছে, ক্যাপাসিটি ফি বাবদ যে ১৩০ টাকা বা ২০ টাকা ধার্য করা হয়েছে, তা সর্বোচ্চ। কোনও কেবল সংস্থা তার চেয়ে কম নিতেই পারে। কিন্তু কোনও নির্দিষ্ট গ্রাহক বা ব্যক্তিকে আলাদা করে সুবিধা দেওয়া যাবে না। যদি কোনও কেবল সংস্থা ক্যাপাসিটি ফি বাবদ কম টাকা নেয়, তাহলে সেই সুবিধা তার গ্রাহকদের সবাইকে দিতে হবে এবং তা ঘোষণা করতে হবে। ক্যাপাসিটি ফি’র অর্থ হল কেবল সংযোগ দেওয়ার খরচ। এক্ষেত্রে যদি কোনও বাড়িতে একাধিক টিভি থাকে, তাহলেও ছাড়ের ব্যবস্থা করতে পারে কেবল সংস্থা। সেক্ষেত্রেও জানাতে হবে স্কিমটি কী।
টিভি দেখার ক্ষেত্রে জিএসটি কত হারে প্রযোজ্য?
মোট বিলের উপর ১৮ শতাংশ হারে জিএসটি প্রযোজ্য হবে। অর্থাৎ চ্যানেল খরচ এবং ক্যাপাসিটি ফি— সবার উপর প্রযোজ্য হবে ওই কর।
একবার চ্যানেল পছন্দ করার পর কি সেই চ্যানেলগুলিই দেখতে বাধ্য দর্শক?
না, একেবারেই নয়। যেহেতু বিল সিস্টেম প্রতি মাসে মাসে প্রযোজ্য, তাই যে কোনও মাসে চ্যানেল বা চ্যানেলের সংখ্যায় বদল আনতে পারেন গ্রাহক। সেই মতো তাঁকে ওই মাসে খরচ জোগাতে হবে।
টিভি দেখার খরচ কি বাড়ল?
ট্রাই নয়া নিয়ম চালু করার পরই রব উঠেছিল, টিভি দেখার খরচ বাড়বে। কিন্তু সব দর্শকের ক্ষেত্রে এই কথা প্রযোজ্য নয়। প্রতিটি চ্যানেলের কী দর, তা দেখার সুযোগ ও অধিকার আছে দর্শকের। সেই মতো দর্শক চ্যানেল পছন্দ করবেন। ফলে তাঁর বিল মাসে কত হবে, তা ঠিক করবেন দর্শক নিজেই। যদি তাঁর পছন্দের চ্যানেলের সংখ্যা অনেক বেশি হয় এবং তার অনেকটা জায়গা জুড়ে যদি পে চ্যানেল থাকে, তাহলে খরচ বাড়বে। যদি দর্শক কম সংখ্যক চ্যানেল দেখতে অভ্যস্ত হন, তাহলে তাঁর খরচ কম হবে। প্রয়োজনে প্রতি মাসেই বিলের অঙ্ক বদলাতে পারেন দর্শক।
চ্যানেল পিছু খরচ জোগানোই যদি ট্রাইয়ের উদ্দেশ্য হয়, তাহলে প্যাকেজ কেন?
বিভিন্ন চ্যানেল বা ব্রডকাস্টার সংস্থা বিভিন্ন প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। আবার কেবল সংস্থা বা মাল্টি সিস্টেম অপারেটর সংস্থাগুলিও তাদের নিজেদের মতো করে প্যাকেজ এনেছে। সবারই দাবি, এতে দর্শকের খরচ কমবে। ট্রাই অবশ্য সবাইকেই প্যাকেজ ঘোষণার এই স্বাধীনতা দিয়েছে।
সত্যিই কি খরচ কমবে?
চ্যানেল কর্তৃপক্ষ, যাদের হাতে একাধিক চ্যানেল আছে, তারা নিজেদের মতো করে প্যাকেজ সাজিয়েছে। সেখানে যে ক’টি চ্যানেলকে ওই প্যাকেজে রাখা হয়েছে, সেই চ্যানেলগুলির আলাদা আলাদা দামকে যোগ করলে দেখা যাচ্ছে, তা প্যাকেজের দরের চেয়ে অনেক বেশি। ফলে দর্শক প্যাকেজ নিলে সুবিধা পাচ্ছেন।
প্যাকেজেই যদি সুবিধা, তাহলে নতুন নিয়ম কেন?
ট্রাই বলছে, দর্শকের যদি মনে হয় চ্যানেলের প্যাকেজ নিলে সুবিধা, তাহলে তিনি তা নিতেই পারেন। কিন্তু তিনি যদি প্যাকেজের সবক’টি চ্যানেল দেখতে না চান, তাহলে যেটি দেখবেন, শুধু সেটিই নিতে পারেন। এক্ষেত্রে কেবল সংস্থা বা অপারেটর দর্শককে প্যাকেজ নিতে বাধ্য করতে পারে না।
যাঁরা আগে থেকেই ছ’মাস বা এক বছরের জন্য টাকা জমা রেখেছেন, তাঁরা কী করবেন?
এক্ষেত্রে যতদিন পর্যন্ত টাকা জমা দেওয়া আছে, ততদিন দর্শকের পুরনো প্যাকেজকে বন্ধ বা পরিবর্তন করা যাবে না। কিন্তু যদি দর্শক নিজেই চান নয়া নিয়মে চলে আসতে, তাহলে সেই মতো তাঁকে টাকা ‘অ্যাডজাস্ট’ করে দেওয়ার বিধান দিয়েছে ট্রাই।
টাকা দেওয়ার নিয়ম কি আগেভাগেই? অর্থাৎ প্রিপেইড মোডে?
না। প্রিপেইড এবং পোস্ট পেইড— দু’টি ক্ষেত্রেই দর্শক টাকা দিতে পারেন। কিন্তু কেবল অপারেটররাই নিজেদের সুবিধার কারণে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আগে টাকা নিচ্ছেন। তাঁদের দাবি, কেবল সংস্থা বা টিভি চ্যানেলগুলিকে আগে পেমেন্ট করতে হচ্ছে। তাই তাঁরা দর্শকের থেকে আগে টাকা নিতে বাধ্য হচ্ছেন।
ছবি: ভাস্কর মুখোপাধ্যায় ও ধ্রুব হালদার