রিয়াধ, ১৬ নভেম্বর: নির্বাসন কাটিয়ে জাতীয় দলের জার্সিতে ফিরেই গোল পেলেন লায়োনেল মেসি। আর তাঁর সেই একমাত্র গোলে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ব্রাজিলের বিরুদ্ধে ১-০ ব্যবধানে জয় পেল আর্জেন্তিনা। প্রীতি ম্যাচ হলেও ব্রাজিলের বিরুদ্ধে নিজের সাত বছরের গোল খরা কাটিয়ে উঠতে পেরে দারুণ তৃপ্ত মেসি। কোপা আমেরিকায় চিলির বিরুদ্ধে তৃতীয় স্থানের ম্যাচের পর দক্ষিণ আমেরিকার ফুটবলের নিয়ামক সংস্থার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে গত জুলাইয়ে নির্বাসিত হয়েছিলেন মেসি। কিন্তু নির্বাসন কাটিয়ে স্বমহিমায় ফিরলেন ফুটবলের রাজপুত্র। অন্যদিকে নেইমারহীন ব্রাজিলকে বিবর্ণ লেগেছে পুরো ম্যাচে।
সৌদি আরবের কিং সাউথ ইউনিভার্সিটি স্টেডিয়ামে শুক্রবার রাতের প্রীতি ম্যাচে ১৫ মিনিটের মধ্যে দুই দলই একটি করে পেনাল্টি পায়। ম্যাচের নবম মিনিটে বক্সের মধ্যে গাব্রিয়াল হেসাসকে আর্জেন্তিনার মিডফিল্ডার লেয়ান্দ্রো পারেদেস ফাউল করলে পেনাল্টির বাঁশি বাজান রেফারি। কিন্তু লক্ষ্যভ্রষ্ট স্পট কিকে ব্রাজিলকে হতাশ করেন হেসাস। চার মিনিট পরই পেনাল্টি পেয়ে যায় আর্জেন্তিনা। ডান দিক দিয়ে বক্সে ঢুকে পড়া মেসিকে ফাউল করে বসেন অ্যালেক্স সান্দ্রো। পেনাল্টি শট নিতে গিয়ে ব্যর্থ হতে বসেছিলেন মেসিও। তাঁর শট প্রাথমিক ভাবে ঠেকিয়ে দিয়েছিলেন ব্রাজিলের গোলরক্ষক অ্যালিসন। কিন্তু ফিরতি বল গোলে পাঠাতে আর ভুল করেননি মেসি। সেই সঙ্গে ব্রাজিলের বিরুদ্ধে নিজের সাত বছরের গোল খরা থেকে মুক্তি পান তিনি। বিরতির ঠিক আগে পাল্টা আক্রমণে ব্যবধান দ্বিগুণ করার সুযোগ পেয়েছিলেন বার্সেলোনার মহাতারকা। কিন্তু তাঁর শটে তেমন জোর ছিল না। ফলে তা আটকাতে অসুবিধা হয়নি অ্যালিসনের।
দ্বিতীয়ার্ধের ষষ্ঠ মিনিটে পাল্টা আক্রমণে আর্জেন্তিনার বক্সে ঢুকে পড়েছিলেন হেসাস। কিন্তু শট নিতে দেরি করে ফেলেন তিনি। পরে উইলিয়ানের শটও প্রতিহত হয়। ৬৬ মিনিটে মেসির দারুণ একটা ফ্রি-কিকে বল শেষ মুহূর্তে বাঁক খেয়ে জালে জড়াতে যাচ্ছিল। কোনওমতে কর্নারের বিনিময়ে তা বাঁচান অ্যালিসন। শেষ আধ ঘণ্টায় বল দখলের হিসেবে ব্রাজিল অনেকটা এগিয়ে থাকলেও আক্রমণে আধিপত্য দেখায় আর্জেন্তিনা। শেষ দিকে বেশ কয়েকটি ভালো সুযোগও তৈরি করেছিল তারা। কিন্তু ব্রাজিলের গোলরক্ষক অ্যালিসনের তৎপরতায় গোলের ব্যবধান বাড়াতে পারেননি মেসিরা।
তবে তাতে আর্জেন্তিনার জয়ের আনন্দ কমেনি এতটুকু। শেষ বাঁশি বাজার সঙ্গে সঙ্গে সাইডলাইনে কোচ লায়োনেল স্কালোনির উচ্ছ্বাস দেখেই বোঝা যাচ্ছিল, এই জয়ে কতটা রোমাঞ্চিত তিনি। আসলে কোপা আমেরিকার সেমি-ফাইনালে ব্রাজিলের কাছে ২-০ গোলে হেরে স্বপ্নভঙ্গ হয়েছিল তাঁর দলের। এই জয়ে কিছুটা হলেও লাঘব হল সেই যন্ত্রণা। গত জুলাইয়ে ব্রাজিলের কাছে ওই হারের পর থেকে এখনও পর্যন্ত অপরাজিত রয়েছে আর্জেন্তিনা। যার মধ্যে তারা জিতেছে চারটিতে, ড্র করেছে দুটি। তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হল, মেসিকে ছাড়াই শেষ তিন ম্যাচে আর্জেন্তিনার নজরকাড়া পারফরম্যান্স। অক্টোবরে জার্মানির বিপক্ষে দুই গোলে পিছিয়ে পড়েও দ্বিতীয়ার্ধে দুর্দান্ত প্রত্যাঘাতে ম্যাচ ড্র করে মাঠ ছেড়েছিল তারা। পরের ম্যাচে ইকুয়েডরকে উড়িয়ে দিয়েছিল ৬-১ গোলে। আর এবার ব্রাজিলের বিপক্ষে এল মধুর প্রতিশোধ নেওয়া জয়। অন্যদিকে, কোপা আমেরিকায় চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর যেন জিততেই ভুলে গেছে ব্রাজিল। এই নিয়ে টানা পাঁচ ম্যাচে জয়হীন থাকল কোচ তিতের দল। এর মধ্যে তারা হেরেছে দুটিতে ও ড্র করেছে তিনটি ম্যাচে।
সোমবার উরুগুয়ের বিরুদ্ধে আরও একটি প্রীতি ম্যাচে নামার কথা ছিল আর্জেন্তিনার। কিন্তু ইজরায়েলে যুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে সেই ম্যাচ বাতিল হতে পারে। ব্রাজিলের পরবর্তী ম্যাচ মঙ্গলবার আবুধাবিতে দক্ষিণ কোরিয়ার বিরুদ্ধে। এরপরই শুরু হয়ে যাবে ফিফা বিশ্বকাপের যোগ্যতা বাছাই পর্ব।