কর্মে শুভ। নতুন কর্মপ্রাপ্তি বা কর্মসূত্রে দূররাজ্য বা বিদেশ গমন হতে পারে। আনন্দানুষ্ঠানে যোগদান ও ... বিশদ
(করিম, তীর্থঙ্কর, জন চিডি ) (বেইতিয়া, সালভা)
অভিজিৎ সরকার : বেলঘরিয়ার দুই বঙ্গতনয়ের দুরন্ত ফুটবলে মোহন বাগানের লিগ জয়ের স্বপ্ন কার্যত চুরমার করে দিল মহমেডান স্পোর্টিং। বৃহস্পতিবার সল্টলেক স্টেডিয়ামে সাদা-কালো গোলরক্ষক প্রিয়ন্ত সিং একাধিক পতন রোধ করেন। আর মহমেডানের মিডফিল্ডার তীর্থঙ্কর সরকার একটি গোল করলেন, দু’টি করালেন। একদা মোহন বাগান বাতিল তীর্থঙ্কর এদিন ম্যাচের সেরা। ৯ ম্যাচে ১৬ পয়েন্ট নিয়ে লিগ টেবলে দু’নম্বরে উঠে খেতাবি দৌড়ে পৌঁছাল দীপেন্দু বিশ্বাসের দল। মোহন বাগানের ৯ ম্যাচে ১৪ পয়েন্ট। দুর্গে ফাটল ধরাতে গেলে দূর থেকে গোলা নিক্ষেপ অব্যর্থ টোটকা। ঠিক এই বিজ্ঞান মেনে দীপেন্দু বিশ্বাসের ছেলেরা বারবার দূরপাল্লার শটে মোহন বাগান রক্ষণে কাঁপুনি ধরালেন।
এদিন স্টেডিয়ামের প্রায় ফাঁকা গ্যালারিতে প্রথম ১১ মিনিটেই দু’গোল খেয়ে যায় মোহন বাগান! ৮ মিনিটে বক্সের বাইরে সত্যমের শট ফিস্ট করে বিপদমুক্ত করেন দেবজিৎ মজুমদার। ওই শটেই সাইরাস-কিমকিমারা কেঁপে যান। সেই আক্রমণ থেকে মহমেডান প্রথম কর্নার পায়। তীর্থঙ্কর সরকারের কর্নার থেকে মোহন বাগান বক্সে জটলার মধ্যে থেকে করিম ওমোলাজার প্লেসিং দ্বিতীয় পোস্ট দিয়ে জালে জড়িয়ে যায় (১-০)। ৯ মিনিটেই সহজ সুযোগ নষ্ট করেন মহমেডানের চাংটে।
এদিন মহমেডান স্পোর্টিং নির্দিষ্ট পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নেমেছিল। মোহন বাগান বিদেশি স্টপার ড্যানিয়েল সাইরাসের শ্লথতার সুযোগ নিয়ে পেনিট্রেটিভ জোনে প্রচুর পাস খেললেন, আচমকা শট করলেন মহমেডান অ্যাটাকাররা। যাতে মোহন বাগান মিডফিল্ড ও রক্ষণ থিতু হতে না পারে। প্রচণ্ড গরম কোমর ধরিয়ে দিল ফ্রান গঞ্জালেজদের। তবে রক্ষণ সংগঠন নিয়ে মোহন বাগান কোচের কোনও ‘প্ল্যান বি’ চোখে পড়েনি। কৌশলী ফুটবলে বেইতিয়াকে খুব বেশি বল ধরতে দেননি মহমেডান ফুটবলাররা। ১১ মিনিটে প্রায় ২২ গজ দূর থেকে তীর্থঙ্করের বাঁ-পায়ের ওভারহেড শট দেবজিৎকে টপকে জালে জড়িয়ে যায় (২-০)। এদিন মোহন বাগান মাঝমাঠে ব্লকিং ঠিকঠাক হয়নি। শেখ সাহিল ও ফ্রান গঞ্জালেজ নিষ্প্রভ ছিলেন। উইং অ্যাটাকে ছিল দুর্বলতা। নংডাম্বা নাওরেম ফর্ম হারিয়েছেন। আর ব্রিটোর বদলে কেন রোমারিও জেসুরাজ? তা নিয়ে ম্যাচের পর ক্ষোভ প্রকাশ করছিলেন কতিপয় কর্তারা। তীর্থঙ্করের গোলের পর মোহন বাগান একটি সুযোগ পেয়েছিল। শেখ সাহিলের পা থেকে বল ছিনিয়ে নেন মহমেডান গোলরক্ষক প্রিয়ন্ত সিং। ২৫ মিনিটে বক্সের বাইরে ডান পায়ের দুরন্ত ফ্রি-কিক থেকে বেইতিয়া গোল করে ব্যবধান কমান (২-১)। ৩৪ মিনিটে প্রতিআক্রমণে চাংটের পা থেকে বল বিপদমুক্ত করেন দেবজিৎ। পরের মিনিটেই বক্সের মাথা থেকে বেইতিয়ার বাঁ-পায়ের শট বাঁ-দিকে ঝাঁপিয়ে বাঁচান প্রিয়ন্ত। এইসময়টা আক্রমণ ও প্রতিআক্রমণে খেলা জমে ওঠে। ৪২ মিনিটে তীর্থঙ্করের বাঁ-পায়ের শট পোস্টের উপর দিয়ে বাইরে যায়। বিরতির ঠিক আগে গুরজিন্দরের শট গোললাইন সেভ করেন মহমেডান ডিফেন্ডার সুজিত সাধু।
বিরতির পর জেসুরাজের বদলে স্ট্রাইকার শুভ ঘোষ মাঠে নামেন। এই পর্বে মহমেডানের মিডফিল্ডার তীর্থঙ্কর সরকার অনবদ্য ফুটবল খেললেন। তাঁর সবচেয়ে বড় গুণ হল, মাঠের যে কোনও প্রান্ত থেকে যে কোনও পরিস্থিতিতে গোলে বল রাখতে পারেন। তীর্থঙ্করের গোলার মতো পাঞ্চ বাঁ-দিকে ঝাঁপিয়ে বাঁচান দেবজিৎ। তিন মিনিট পরই শুভর শট পোস্টের উপর উড়ে যায়। ৫৩ মিনিটে পাল্টা মহমেডান স্ট্রাইকার জন চিডি একের বিরুদ্ধে এক পরিস্থিতিতে দেবজিৎকে টপকাতে ব্যর্থ। ৬১ মিনিটে তীর্থঙ্করের সাজিয়ে দেওয়া বল ধরে সহজ সুযোগ নষ্ট করেন চাংটে। তিন মিনিট পরে শেখ সাহিলের মিস পাস ধরে তীর্থঙ্করের বাঁ-পায়ের শট দেবজিৎ সেভ করলে ফিরতি বল ফলো করে এসে গোলে ঠেলেন জন চিডি (৩-১)। ৭০ মিনিটে বেইতিয়ার ক্রসে হেডে ব্যবধান কমান পরিবর্ত মোহন বাগান স্ট্রাইকার সালভা চামোরো (৩-২)। জেতাই যেখানে মূল লক্ষ্য সেখানে মোহন বাগান কেন সিঙ্গল স্ট্রাইকারে (সুহের) শুরু করল তা বোধগম্য হল না!
মহমেডান স্পোর্টিং: প্রিয়ন্ত, সফিউল, প্রসেনজিৎ, করিম, সুজিত সাধু, তীর্থঙ্কর, মুসা, ফিরোজ, চাংটে, সত্যম, জন চিডি (কোয়াসি)।
মোহন বাগান: দেবজিৎ, চুলোভা (ব্রিটো),ড্যানিয়েল, কিমকিমা, গুরজিন্দর, জেসুরাজ (শুভ), সাহিল, ফ্রান গঞ্জালেজ (সালভা),নাওরেম, বেইতিয়া, সুহের। রেফারি: রাহুল কুমার গুপ্তা ।