বাধা ও অসফলতার জন্য চিন্তা। মানসিক টানাপোড়েনের মধ্যে কোনও ভালো যোগাযোগ পেতে পারেন। ... বিশদ
বর্ধমান শহরের শ্রীপল্লি বেচারহাট এলাকায় পীযূষকান্তিবাবুর বাড়ি। স্ত্রী তপতী পান গৃহবধূ। তাঁর দুই মেয়ে অমৃতা পান এবং ঈশিতা পানের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। বর্ধমান শহর থেকে অল্প দূরেই শ্রীরামপুর হাইস্কুলের শিক্ষক ছিলেন তিনি। ২০১৩ সালে অবসর নিয়েছেন। কিন্তু, অবসরের পর বাড়িতে বসে থাকেননি। নিয়মিত যোগা প্র্যাকটিস চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি শিক্ষকতায় যোগ দেওয়ার আগে পর্যন্ত কোনওদিন যোগার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না। তাঁর কথায়, শরীর সুস্থ রাখতে ৫৫ বছর বয়সে হরিদ্বারে গিয়েছিলেন বাবা রামদেবের যোগ শিবিরে। ওই শিবিরই তাঁর জীবনের প্রথম যোগার প্রশিক্ষণ।
বাড়িতে ফিরে তিনি যোগার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়েন। তারপরই যোগা কোচ সুব্রত সরকারের কাছে তিনি প্রশিক্ষণ শুরু করেন। স্ত্রী, দুই মেয়ে এবং তাঁর কোচ পীযূষকান্তিবাবুকে নিয়মিত অনুপ্রেরণা জোগাতে শুরু করেন। তাঁদের চারজনের অনুপ্রেরণায় ২০০৯ সালে প্রশিক্ষণ শুরু করার পর ওই বছরই তিনি প্রথমবার জেলাস্তরের যোগা চ্যাম্পিয়নশিপে অংশ নেন। প্রথমবারই তিনি জেলাস্তরে তৃতীয়স্থান দখল করেছিলেন। তারপর ওই বছরই রাজ্যস্তরে অংশ নিয়েও তিনি চতুর্থ হন। তারপর একাধিক চ্যাম্পিয়নশিপে অংশ নেন তিনি। ন্যাশনাল যোগা চ্যাম্পিয়নশিপে অংশ নিয়েছেন ১০ বার। প্রতিবারই কোনও না কোনও স্থান পেয়েছেন।
গত ৫ থেকে ৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দক্ষিণ কোরিয়ায় আন্তর্জাতিকস্তরের এই ‘এশিয়ান যোগা স্পোর্টস চ্যাম্পিয়নশিপ’ অনুষ্ঠিত হয়। তিনি ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল যোগা অ্যাসোশিয়েশন’ থেকে ৩৫ উর্ব্ধ সিনিয়র দলে অংশ নেন। অর্থাৎ সেখানে ৩৫ বছরের যুবকেরাও ছিলেন। যাঁরা বয়সে পীযূষকান্তিবাবুর থেকে ৩১ বছরের ছোট। ভারত, ভিয়েতনাম, ইরান, চীন, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া সহ ১৫ টি দেশের প্রতিযোগীরা অংশ নিয়েছিলেন। গত ৭ তারিখ ফাইনালে তিনি তৃতীয়স্থান দখল করে ব্রোঞ্জ পদক ছিনিয়ে নেন। গত ১৩ তারিখ তিনি বর্ধমান শহরে ফিরেছেন। গত বছরও এই এশিয়ান যোগা স্পোর্টস চ্যাম্পিয়নশিপে তিনি অংশ নিয়েছিলেন। কিন্তু, পদক পাননি। চতুর্থ হয়েছিলেন। কেবলমাত্র সার্টিফিকেট পেয়েছিলেন। এবার আন্তর্জাতিক মঞ্চ থেকে পদক মিলেছে। তাঁর এই সাফল্যের জন্য শ্রীরামপুর হাইস্কুল থেকে তাঁকে সংবর্ধনাও দেওয়া হয়।
পীযুষকান্তিবাবু বলেন, আগে কোনওদিন যোগা করতাম না। প্রতিযোগিতা নয়, শুধুমাত্র শরীর ভালো রাখতে ৫৫ বছর বয়স থেকে শুরু করেছিলাম। কিন্তু, যোগা করতে করতে এতদূর যে যাব তা কোনওদিনই ভাবিনি। এশিয়ান যোগা স্পোর্টস চ্যাম্পিয়নশিপে সাফল্য পেয়ে খুবই ভাল লাগছে। পুরস্কার তো রয়েছেই, সেই সঙ্গ যোগার দৌলতে ৬৬ বছর বয়সেও আমার শরীর এখনও ফিট।