ঝগড়া এড়িয়ে চলার প্রয়োজন। শরীর স্বাস্থ্য বিষয়ে অহেতুক চিন্তা করা নিষ্প্রয়োজন। আজ আশাহত হবেন না ... বিশদ
(সুহের, সালভা, নাওরেম, ফ্রান গঞ্জালেজ)
নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: চতুর্থ রেফারির ভিনাইল ফ্লুরোসেন্ট বোর্ডে তখন তিন মিনিটের সংযোজিত সময়ের সংকেত। মোহন বাগান মাঠ জুড়ে শুধুই সাদা ধোঁয়া। সবুজ-মেরুনে রংমশালের রংবাজি। গ্যালারিতে ব্যান্ড-তাসা বেজেই চলেছে। ম্যাচ শেষে এক দৃষ্টিতে সেদিকে তাকিয়ে রয়েছেন সবুজ-মেরুনের স্প্যানিশ ব্রিগেড। সবাই একে একে সদস্য-সমর্থকদের সঙ্গে সেলফির অনুরোধ মেটালেন। বেইতিয়া-ফ্রান গঞ্জালেজদের শরীর তখন পুরো কাদায় মাখামাখি।
রবিবার কলকাতা লিগে জর্জ টেলিগ্রাফকে ৪-০ গোলে দুরমুশ করে মোহন বাগান শিবির বড় অক্সিজেন পেল। উল্লেখ্য, ইস্ট বেঙ্গলকে হারিয়ে বুলির ফোয়ারা ছুটেছিল জর্জের কোচের। এদিন তাঁর মুখ কার্যত বন্ধ করে দিল ভিকুনা-ব্রিগেড। ৫ ম্যাচে ৯ পয়েন্ট সংগ্রহ করে জর্জ নেমে গিয়েছে ছ’নম্বরে। ৬ ম্যাচে ১১ পয়েন্ট নিয়ে আপাতত লিগ টেবলের শীর্ষে উঠে এল মোহন বাগান। যার ফলে সোমবার গতবারের রানার্স পিয়ারলেসের বিরুদ্ধে মাঠে নামার আগে কিছুটা হলেও চাপ বাড়ল ইস্ট বেঙ্গলের উপর।
লিগে ঘরের মাঠে প্রথম জয়। টানা দু’টি ম্যাচে জয়। লিগে আপাতত সর্বাধিক ব্যবধানে জয়। আত্মবিশ্বাস বাড়তে বাধ্য কিবু ভিকুনার। কিন্তু স্প্যানিশ কোচ সতর্ক, সাবধানী ও লক্ষ্যে স্থির। আপনি কি লিগ খেতাব দেখতে পাচ্ছেন? ভিকুনা ঠোঁট উল্টে বললেন, ‘না, না। লিগ এখনও অনেক বাকি। সবে ছ’টা ম্যাচ খেললাম। প্রতিপক্ষরা সব গায়ে গায়ে রয়েছে। আমি এত দূর এখনই ভাবতে চাই না। সোমবার থেকে এরিয়ান ম্যাচের লক্ষ্যে প্রস্তুতি নিতে চাই। রোটেশনে দলকে খেলাচ্ছি। তারই সুফল পাচ্ছি।’ আগামী বৃহস্পতিবার কল্যাণী স্টেডিয়ামের এরিয়ানের বিরুদ্ধে খেলবে মোহন বাগান। তার আগে রবিবারের জয় দেবজিৎ-চুলোভাদের মনোবল বাড়িয়ে দিল।
বৃষ্টিতে এদিন মোহন বাগান মাঠও খেলার অযোগ্য হয়ে উঠেছিল। ম্যাচের শুরুর দিকটা জমিতে বল রেখে খেলতে গিয়ে সমস্যায় পড়ছিলেন বেইতিয়ারা। পরে কৌশল পাল্টে উঁচু বলে খেলার সুফল পেল মোহন বাগান। ১৬ মিনিটে চুলোভার ঠিকানা লেখা ক্রস পেয়ে দুরন্ত হেডে গোল করে দলকে এগিয়ে দেন সুহের (১-০)। এই কম্বিনেশন একদা কলকাতা লিগে ইস্ট বেঙ্গলকেও গোল উপহার দিয়েছে। এর আগে অফ দ্য বল সুহেরের মুখে কনুই চালিয়ে তাঁকে মাটিতে ফেলে দেন ইচে। রেফারি নৃপেন হালদার গোটা ম্যাচেই পকেট থেকে কার্ড বের করতে চাননি। ম্যাচ জুড়ে জর্জের অসীম কুমার দে সহ একাধিক ফুটবলার বিপজ্জনক ফাউল করলেন। রেফারি ছিলেন নির্বিকার! ৮ মিনিটে নাওরেমের সেন্টার থেকে সালভা চামোরো ঠিকমতো কানেক্ট করতে পারলে গোল ছিল। ধারাবাহিকভাবে অনবদ্য ফুটবল খেলছেন মোহন বাগানের এই পাহাড়ি উইং হাফ এদিন ম্যাচের সেরা হলেন। একটি গোল করলেন, একটি করালেন। একাধিকবার বাঁ-প্রান্ত দিয়ে উঠে বিপজ্জনক হলেন। ১১মিনিটে জর্জের মরগ্যানের ক্রস থেকে সানডেও গোল করতে ব্যর্থ হন। ১৮ মিনিটে সুহেরের সঙ্গে ওয়ান-টু খেলে সালভার ক্রস থেকে নাওরেমের হেড পোস্টের উপর দিয়ে বাইরে যায়। ৩৫ মিনিটে মোহন বাগানের দ্বিতীয় গোল। গুরজিন্দরের সেন্টার থেকে বক্সের মাথায় দাঁড়িয়ে সালভা নিখুঁত হেডে গোল করে ২-০ করেন।
বিরতির পর জর্জ কিছুটা আক্রমণে সচল হয়। তখন মোহন বাগান কোচ চামোরোকে তুলে নিয়ে স্টপার মোরান্তেকে নামান। চামোরো উঠে যাওয়ায় জর্জ রক্ষণে চাপ কিছুটা হাল্কা হয়ে যায়। তবে তার ফায়দা নিতে পারেননি জোয়েল সানডেরা। মোহন বাগানের বেইতিয়া মাঝমাঠে খেলাটাকে দারুণ নিয়ন্ত্রণ করলেন। বিপজ্জনক ফাউলেও তিনি দমে যাননি। ৭১ মিনিটে চুলোভার পাস ফলো করে নাওরেমের শট জালে জড়িয়ে যায় (৩-০)। ৮৫ মিনিটে সেই নাওরেমের সেন্টার থেকে ফ্রান গঞ্জালেজ হেডে ফ্লিক করে দলের চতুর্থ গোলটি করেন (৪-০)। ম্যাচের শেষলগ্নে বক্সের বাইরে থেকে নাওরেমের প্লেসিং দ্বিতীয় পোস্ট ঘেঁষে বাইরে যায়। হয়তো বড় ব্যবধানে হারের লজ্জা থেকে বাঁচতে চার গোলের পরই দ্রুত মাঠ ছাড়লেন জর্জের এক শীর্ষ কর্তা!
মোহন বাগান: দেবজিৎ, চুলোভা, ফ্রান গঞ্জালেজ, কিমকিমা, গুরজিন্দর, ব্রিটো (সুরাবুদ্দিন), শেখ সাহিল, নাওরেম, বেইতিয়া, সালভা চামোরো (ফ্রান মোরান্তে), সুহের (শুভ ঘোষ)।