ঝগড়া এড়িয়ে চলার প্রয়োজন। শরীর স্বাস্থ্য বিষয়ে অহেতুক চিন্তা করা নিষ্প্রয়োজন। আজ আশাহত হবেন না ... বিশদ
(বিদ্যাসাগর, কোলাডো) (অর্জুন টুডু)
নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: ‘দেখলি তো, কোলাডো আর বিদ্যাসাগরকে স্টার্টিং ইলেভেনে রাখতেই আমরা জিতলাম। ডার্বিতে এই দু’জনকে শুরু থেকে না খেলিয়ে ভুল করেছিলেন কোচ আলেজান্দ্রো।’
‘মাঠ তো প্রায় খাটাল রে। আলে স্যার তাও এখানে প্র্যাকটিস করান না। তাহলে আর এদিন খেলতে হত না আমাদের। ক্লাব কর্তারা যে কী করেন? মাঠটার দিকে তাকানোর প্রয়োজনই নেই ওঁদের।’
ইস্ট বেঙ্গল তাঁবু থেকে কাস্টমস ক্যান্টিন। সামান্য দূরত্ব। এরই মধ্যে জটলার মধ্যে থেকে ভেসে আসা মন্তব্যগুলি শুনে বোঝা গেল, ক্লাব প্রশাসনের মতো লাল-হলুদ সমর্থকরাও এখন দু’ভাগে বিভক্ত। সাবেক কর্তাদের অনুকূলে একদল। আর অন্যেরা কোয়েস এবং আলেজান্দ্রোর জয়গানে ব্যস্ত। বৃহস্পতিবার সাদার্ন সমিতির বিরুদ্ধেও ইস্ট বেঙ্গলের পারফরম্যান্সে কখনও মেঘ, কখনও রোদ্দুর। ২-১ গোলে জিতলেও আলেজান্দ্রোর এই দলকে নিয়ে খুব বেশি আশা দেখা কি উচিত? সময়ের গর্ভেই লুকিয়ে রয়েছে উত্তর।
ডার্বি ড্রয়ের পরে কোচ আলেজান্দ্রোর সমালোচনায় মুখর হয়েছিল মিডিয়া। তাতে যে ভুল ছিল না তার প্রমাণ এদিনের ম্যাচ। হাইমে স্যান্টোস কোলাডো এবং বিদ্যাসাগর সিংকে শুরু থেকে খেলিয়ে হয়তো ভুল শোধরাতে চেয়েছিলেন লাল-হলুদ কোচ। স্কোরশিটে এই দু’জনেরই নাম জ্বলজ্বল করছে। তবে শেষ দশ মিনিট মেহতাব হোসেনের প্রশিক্ষণাধীন সাদার্ন সমিতির চাপের মুখে যেভাবে ইস্ট বেঙ্গল রক্ষণকে অবিন্যস্ত দেখিয়েছে তা মোটেই ইতিবাচক সংকেত নয়।
ম্যাচ শুরুর আগে প্রবল বৃষ্টি। ওয়ার্ম-আপের সময়েই ফুটবলারদের পাস খেলতে অসুবিধা হচ্ছিল। মাঠ পরিদর্শন করার পর ম্যাচ কমিশনার নির্দিষ্ট সময়ের আধঘণ্টা পরে খেলা শুরু করার সিদ্ধান্ত নেন। প্রথমার্ধে ইস্ট বেঙ্গলের বিরুদ্ধে যথেষ্ট লড়াই করেছে সাদার্ন। সিরিয়ান মিডফিল্ডার আল-আমনার নেতৃত্বে তারা বেশ কয়েকটি আক্রমণও শানায়। প্রাক্তন ক্লাবের বিরুদ্ধে দুরন্ত খেলে ম্যাচের সেরার শিরোপা ছিনিয়ে নিয়েছেন আমনা। মাঠ স্বাভাবিক থাকলে তাঁকে রুখতে আরও বিপদে পড়তে হত লালরিনডিকা রালতে-সামাদ আলি মল্লিকদের। সেন্টার সার্কেলের কাছে বল পেয়ে আমনার ‘ডাউন দ্য মিডল’ দৌড় বারবার উৎকণ্ঠায় রেখেছে বোরহা-মনোজ মহম্মদদের। ভাগ্যিস, সাদার্নের ফয়সল আলি-উত্তম রাইরা গোলকানা। তাই তিন পয়েন্ট পেয়ে মাঠ ছাড়ল আলেজান্দ্রোর দল।
বৃষ্টিভেজা মাঠে আমনার মতো সমস্যায় পড়েছেন কোলাডোও। তিনি এই মুহূর্তে ইস্ট বেঙ্গল আক্রমণের সেরা ভরসা। এদিন ভালো খেলেছেন বোরহা গোমেজ পেরেজও। তাঁর নেতৃত্ব দেওয়ার সহজাত গুণ এদিন দলের রক্ষণকে নির্ভরতা দিয়েছে। ম্যাচের প্রারম্ভিক পর্বে দু’টি সুযোগ নষ্ট করলেও দলকে কাঙ্ক্ষিত লিড এনে দেন বিদ্যাসাগর সিং। ৩৩ মিনিটে ডিকার কর্নার ভেসে আসে প্রথম পোস্টে। কোলাডোর মাথা ছুঁয়ে বল দ্বিতীয় পোস্টের কাছে এলে হেডে তা জড়ান বিদ্যাসাগর (১-০)। বিরতির আগে আমনার সঙ্গে ওয়ান-টু খেলে নেওয়া অমরেন্দুর শট অল্পের জন্য বাইরে যায়। দ্বিতীয়ার্ধে মাঠের অবস্থা আরও বেহাল হয়। ৬২ মিনিটে কর্নার থেকেই ব্যবধান বাড়ায় ইস্ট বেঙ্গল। ডিকার ভাসানো বল থেকে হেডে লক্ষ্যভেদ কোলাডোর (২-০)। এর আগের মিনিটেই আমনাকে নিষ্প্রভ করার জন্য কাসিম আইদারাকে নামান আলেজান্দ্রো। তবে সাদার্ন ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নেয় ৭০ মিনিটে অর্জুন টুডু নামার পর। ৮১ মিনিটে আমনার পাস ধরে ব্যক্তিগত নৈপুণ্যে মার্কারকে বোকা বানিয়ে ব্যবধান কমান তিনি (২-১)। শেষদিকে পরিবর্ত হিসেবে নামা হুয়ান গঞ্জালেজের বুদ্ধিদীপ্ত ফুটবল সমর্থকদের হাততালি কুড়িয়েছে। পাঁচ ম্যাচে দশ পয়েন্ট পেয়ে তৃতীয় স্থানে উঠে এল ইস্ট বেঙ্গল।