বাধা ও অসফলতার জন্য চিন্তা। মানসিক টানাপোড়েনের মধ্যে কোনও ভালো যোগাযোগ পেতে পারেন। ... বিশদ
তবে ৫১ মিনিটের মধ্যে দু’গোলে পিছিয়ে পড়েও মোহন বাগান শেষ ৩৫ মিনিট দুরন্ত ফুটবল খেলেছে। চামারো গোল শোধ করার পর মাঠ জুড়ে ছিল শুধুই মোহন বাগান। এই সময়ে ফ্রান গঞ্জালেস মুনোজের নেতৃত্বে মোহন বাগান জ্বলে ওঠে। তাঁকে চমৎকারভাবে সহায়তা করেছিলেন হোসেবা বেইতিয়া। কিন্তু গোকুলাম রক্ষণে ছিলে ছ’ফুট দুই ইঞ্চির ডিফেন্ডার আন্দ্রে ডেনিস। তাঁকে চমৎকার সহযোগিতা করলেন মহম্মদ ইরশাদ। এই ছেলেটি মোহন বাগানের প্রধান স্ট্রাইকার চামারোকে খাপ খুলতে দেননি বক্সে। একমাত্র গোলটি করার সময়েই আন্দ্রে আর ইরশাদের মাঝখান দিয়ে ছিটকে বের হতে পেরেছিলেন সালভা চামারো। স্প্যানিশ এই স্ট্রাইকারটি বেশ সফট। প্রতিপক্ষ বক্সে টাইট মার্কিং এড়াতে নীচে নেমে আসেন না। শেষ ৩০-৩৫ মিনিট মোহন বাগান গোল শোধই করেনি, আরও তিনটি সিটার পেয়েছিল। চামারো-সুহের দুটি সুবর্ণ সুযোগ নষ্ট করেন। ফ্রান গঞ্জালেস মুনোজের দুটি শট তৎপরতার সঙ্গে বাঁচান গোকুলামের গোলরক্ষক উবেইদ। ৫১ মিনিটে দুই গোলে পিছিয়ে পড়েও শেষ ৩৫ মিনিট প্রচণ্ড সাহসিকতার সঙ্গে দলকে আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলিয়েছেন মোহন কোচ কিবু ভিকুনা। এই সাহস ভারতীয় ফুটবলের সঙ্গে যুক্ত সচরাচর কোচরা দেখাতে পারতেন না।
সেমি-ফাইনালে এই মরশুমে পারফরম্যান্সের নিরিখে সেরা ফুটবল খেলেছিল মোহন বাগান। সেদিন মাঠ ছিল শুকনো। সেমি- ফাইনালের আগে তিনদিন কলকাতায় বৃষ্টি হয়নি। ফাইনালের আগের দু’দিন মোটামুটি বৃষ্টি হয়েছে। যুবভারতীর আমেরিকান বারমুডার ঘাস মোটা হওয়ায় ময়দানের ঘেরা মাঠের থেকে এই মাঠটি স্প্যানিশদের কাছে অনেক স্বস্তিদায়ক। কিন্তু শনিবার দুপুরে স্টেডিয়াম চত্বরে ভারি বৃষ্টি হওয়ায় ঘাসের নীচে একটু জল ছিল। এই জন্য মোরান্তে গোকুলামের জোড়া ফলা হেনরি ও মার্কাসকে সামলাতে বেশ ঝামেলায় পড়বেন তা বোঝা গিয়েছিল মিনিট দশেকের মধ্যে। গোকুলামের দুই বিদেশি প্রথম ১৫ মিনিটের মধ্যে তিনটি সুযোগ পেয়ে গিয়েছিল। ১১ মিনিটে মার্কাসের কাছ থেকে দেবজিতের সেভটি অনেকদিন মনে থাকবে। এর মধ্যে দুটি ক্ষেত্রে দেবজিৎ হয়ে ওঠেন সেভজিৎ। ২৩ মিনিটে অরক্ষিত বেইতিয়া বক্সের বাইরে থেকে চমৎকার শট নিয়েছিলেন, বলটি লক্ষ্যভ্রষ্ট হয় ইঞ্চিখানেকের জন্য। প্রথমার্ধের মাঝামাঝি সময়ে মার্কাস একটু ডানদিকে সরে আসেন। কখনও নীচে নেমে আসেন মোরান্তে আর সাহিলের জোড়া মার্কিং এড়াতে। তবে ওইসব মার্কারদের টলিয়ে ত্রিনিদাদ টোবাগোর সিনিয়র দলের হয়ে ১৫টি ম্যাচ খেলা মার্কাস জোসেফ ভারতীয় ফুটবলে যে প্রতিষ্ঠা পেয়ে গেলেন এদিন। ডুরান্ড ফাইনালে জোড়া গোল করে তিনিই নায়ক। প্রথম গোলটির ক্ষেত্রে হেনরিও অবদান আছে। মার্কাসের কম্পাসে মাপা পাস থেকে মোরান্তেকে টপকে কিমকিমাকে ডজ করে ঢোকেন হেনরি। দেবজিৎ বাধ্য হয়ে বেরিয়ে এসেছিলেন। শেষ পর্যন্ত ফাউল করেন হেনরিকে। পেনাল্টি থেকে মার্কাস ১-০ করেন। এবারের ডুরান্ডের ম্যাচে তিনটি পেনাল্টির সদ্ব্যবহার করেছেন এই ক্যারিবিয়ান স্ট্রাইকার। ইস্ট বেঙ্গলের বিরুদ্ধে পেনাল্টি শ্যুট আউটে লক্ষ্যে স্থির ছিলেন। মরশুমে এটি কেরলের দলটির ১৫তম ম্যাচ। মরশুমে শুরুতেই দ্রুত পিক কন্ডিশনে চলে যাচ্ছে গোকুলাম।
প্রথম গোলটির ক্ষেত্রে মোহন বাগানের দুই স্টপার বে-আব্রু হয়ে যান। আর ৫১ মিনিটে গোকুলামের গোলটি আশুতোষ মেহতার চরম ভুলে। নিজেদের অর্ধে উবেইদের একটি নিরীহ গোলকিক রিসিভ করতে গিয়ে বলের উপর নিয়ন্ত্রণ হারান। নওচা সিংয়ের কাছ থেকে বল পেয়ে মার্কাস আগুয়ান দেবজিতকে কাটিয়ে গোলটি করেন (২-০)। এরপর মোহন বাগান মোরান্তেকে তুলে নিয়ে ফ্রান গঞ্জালেসকে নামালে আক্রমণের তীব্রতা বাড়ে। ৬৩ মিনিটে বেইতিয়ার ফ্রি-কিক থেকে ডাইভিং হেডে মুনোজ ২-১ করেন। সেটা মোকাবিলা করতে ব্রাজিলিয়ান মিডিও ব্রুনো পেলিসেরিকে নামিয়ে পরিস্থিতি ম্যানেজ করেন ফার্নান্দো ভালেরা। ব্রুনো ও মার্কাসের সম্মিলিত আক্রমণে তিনবার মোহন বাগান রক্ষণের মুখ খুলে যায়। একটি ক্ষেত্রে ব্রুনোর শট বাঁচান দেবজিৎ। ৮৬ মিনিটে জাস্টিন জর্জ দ্বিতীয়বার হলুদ কার্ড দেখে মার্চিং অর্ডার পান। ৯৫ মিনিটে গুরজিন্দার কুমারের শট ইরশাদের পেটে লাগে বক্সের মধ্যে। মোহন বাগানের পেনাল্টির দাবি নাকচ করেন রেফারি।