কর্মে শুভ। নতুন কর্মপ্রাপ্তি বা কর্মসূত্রে দূররাজ্য বা বিদেশ গমন হতে পারে। আনন্দানুষ্ঠানে যোগদান ও ... বিশদ
ঘটনাচক্রে ১৯৬৬ সালে আয়োজক দেশ ইংল্যান্ডের ফুটবল বিশ্বকাপ জয়েও লেগেছিল বিতর্কের কালিমা। ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে ফাইনালে ইংল্যান্ডের প্রতিপক্ষ ছিল সাবেক পশ্চিম জার্মানি। ইংল্যান্ডের তৃতীয় গোলটি নিয়ে গত ৫৩ বছর ধরে বিতর্ক অব্যাহত। জিওফ হার্স্টের শট ক্রসবারের নীচে লেগে গোল লাইনে ড্রপ খেয়ে বেরিয়ে আসে। কিন্তু বল পুরোপুরি গোললাইন ক্রস করেনি। ৯৭ শতাংশ পেরিয়েছিল। লাইন্সম্যান পতাকা নাড়িয়ে তবু গোলের সংকেত দিয়েছিলেন। যদিও বল ৬ সেন্টিমিটার বাইরেই ছিল। সোভিয়েট ইউনিয়নের লাইন্সম্যানকে অনেকেই দায়ী করেছিলেন। নিকটতম ইংরেজ ফুটবলার ছিলেন রজার হান্ট। তিনিও গোলের আবেদনে হাত তোলেন। এরপর সুইস রেফারি গডফ্রেড ডাইনেস্ট গোলের বাঁশি বাজান। শেষ পর্যন্ত পশ্চিম জার্মানিকে ৪-২ গোলে হারিয়ে প্রথম ও শেষ বারের জন্য ফুটবল বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ইংল্যান্ড। কিন্তু অনেকের মতে, ওই ‘ভুল’ গোলটি না হলে ম্যাচের রং অন্যরকম হত।
ঠিক যেমনটা ঘটেছে লর্ডসে রবিবারের ফাইনালে। তিনবার আইসিসি’র বর্ষসেরা পুরস্কারজয়ী প্রাক্তন আম্পায়ার সাইমন টাফেল জানিয়েছেন, ইংল্যান্ড ইনিংসের শেষ ওভারের চতুর্থ বলে মার্টিন গাপটিলের থ্রো বেন স্টোকসের ব্যাটে লেগে বাউন্ডারির বাইরে চলে যায়। তার আগে দৌড়ে দুই রান নেন স্টোকস ও আদিল রশিদ। আম্পায়ার কুমার ধর্মসেনা মাঠের অপর আম্পায়ার মারাইজ ইরাসমাসের সঙ্গে আলোচনা করে মোট ছয় রান দেন। নিয়ম অনুযায়ী এখানে পাঁচ রান দেওয়ার কথা ছিল। আর সেটা হলে ম্যাচ টাই হত না। নিউজিল্যান্ডই ১ রানে জিতত।
বিশ্বকাপের রোমহর্ষক ফাইনালে প্রথমে ব্যাট করার নিউজিল্যান্ডের তুলেছিল ৮ উইকেটে ২৪১। জবাবে ২৪২ রানের টার্গেটে খেলতে নেমে বিশ্বকাপের আয়োজক দেশ ইংল্যান্ডও প্রবল চাপে পড়ে গিয়েছিল প্রথম সারির ব্যাটসম্যানদের উইকেট দ্রুত হারিয়ে। সেখান থেকে অনন্য লড়াইয়ের পরিচয় দিয়ে দলকে শেষ পর্যন্ত টেনে নিয়ে যান বেন স্টোকস। জয়ের জন্য শেষ ওভারে তাদের দরকার ছিল ১৫ রান। ট্রেন্ট বোল্টের ওভারের প্রথম দুই বলে স্টোকস কোনও রান নিতে পারেননি। ফলে সমীকরণ দাঁড়ায় শেষ ৪ বলে ১৫ রানের। তৃতীয় বলে মিড উইকেটে ছক্কা হাঁকিয়ে ম্যাচ জমিয়ে দেন স্টোকস। তখন দরকার ৩ বলে ৯ রান। উত্তেজনায় কাঁপছে লর্ডসসহ গোটা ক্রিকেট বিশ্ব। চার নম্বর বলে দু’রান নেওয়ার সময় গাপটিলের থ্রো স্টোকসের ব্যাটে লেগে বাউন্ডারির বাইরে চলে যায়। আম্পায়ার কুমার ধর্মসেনা মোট ৬ রান ঘোষণা করেন। শেষ ২ বলে ইংল্যান্ডের দরকার ছিল ৩ রান। পঞ্চম ও ষষ্ঠ বলে স্টোকসরা দুটি সিঙ্গলস নেওয়ায় ম্যাচ টাই হয়। খেলা গড়ায় সুপার ওভারে। দুই ইংলিশ ব্যাটসম্যান স্টোকস ও বাটলার কিউয়ি পেসার বোল্টের ৬ বলে তোলেন ১৫ রান। জয়ের জন্য নিউজিল্যান্ডের টার্গেট দাঁড়ায় ১৬ রান। নিশাম এবং গাপটিলও ১৫ রান করেন জোফ্রা আর্চারের ওভারে। সুপার ওভারের স্কোরও সমান হয়ে যাওয়ায় নিয়ম অনুযায়ী ম্যাচে বেশি বাউন্ডারি মারার হিসেবে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয় ইংল্যান্ড।
কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে ওভার থ্রোয়ে ছয় রান দেওয়া নিয়ে। ক্রিকেটের আইন প্রণয়নকারী সংস্থা এমসিসি’র নিয়মানুযায়ী ছয় নয়, ইংল্যান্ডের পাঁচ রান পাওয়ার কথা। কারণ স্টোকস দ্বিতীয় রান পূর্ণ করার আগেই গাপটিলের থ্রো তাঁর ব্যাটে লেগে বাউন্ডারির বাইরে চলে যায়। তাই তাঁর দ্বিতীয় রানটি গণ্য হওয়ার কথা নয়। কিন্তু আইন না জেনে শ্রীলঙ্কার আম্পায়ার কুমার ধর্মসেনা এক রান বেশি দিয়ে পুরস্কৃত করে বসেন ইংল্যান্ডকে। এমন টান টান উত্তেজনার ম্যাচে তাঁর সেই মারাত্মক ভুল চোখ এড়ায়নি সাইমন টাফেলের। ফক্স স্পোর্টসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে অস্ট্রেলিয়ার প্রাক্তন আম্পায়ারটি বলেন, ‘ওভার থ্রোয়ের ক্ষেত্রে মারাত্মক ভুল সিদ্ধান্তের শিকার হয়েছে নিউজিল্যান্ড। নিয়মানুযায়ী যখন ফিল্ডার বল থ্রো করবে তখন থেকে ওভার থ্রো এর হিসাব শুরু হবে। ওভার থ্রো আইনের ১৯.৮ অনুচ্ছেদের সেই আইন অনুযায়ী ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় রানটি বাদ যায়। সেটা হিসাব করাটা ছিল আম্পায়ারদের জাজমেন্টের ভুল। তাই ছয় রান নয়, ইংল্যান্ডের মোট পাঁচ রান পাওয়ার কথা ছিল।’
এমসিসি’র ক্রিকেট সংবিধানের ১৯:৮ অনুচ্ছেদে বলা রয়েছে, কোনও ব্যাটসম্যান দৌড়ে রান পূর্ণ করার আগেই ওভার থ্রোতে বাউন্ডারি হলে শুধু ওভার থ্রোর রান গণনা করা হবে। অর্থাৎ দৌড়ে নিতে যাওয়া রানটা বাতিল হয়ে যাবে আর ব্যাটসম্যানও বদল হবে। সেই হিসাবে দৌড়ে নেওয়া ২ রানের জায়গায় ইংল্যান্ড শুধু এক রানই পেত তা নয়, সেই সঙ্গে স্ট্রাইকিং প্রান্তে স্টোকসের জায়গায় থাকতেন আদিল রশিদ। সেক্ষেত্রে শেষ ২ বলে ৪ রান তাড়া করাটা আরও কঠিন হত ইংল্যান্ডের পক্ষে। তবে টাফেল মনে করেন না ওই ৬ রানই ম্যাচে দুই দলের মধ্যে চূড়ান্ত ব্যবধান গড়ে দিয়েছে। তিনি বলেন, ‘ওই রকম ভুল হওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়। একজন আম্পায়ারকে অনেক দিক খেয়াল রাখতে হয়। গাপটিলের থ্রো স্টোকসের ব্যাটে লাগার সময় তিনি কোথায় ছিলেন সেটাও বিবেচ্য। আম্পায়ারদের কাজটা যথেষ্ট কঠিন।’ ফাইনালের দায়িত্ব পালনকারী আম্পায়ার ধর্মসেনা ও ইরাসমাস দু’জনইে বেশ কয়েকটি ভুল সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। বিশ্বকাপজুড়ে বিশ্রী আম্পায়ারিংয়ের পরম্পরা বজায় রেখে যবনিকা নেমেছে ২০১৯ বিশ্বকাপের আসরে। আর তার চরমতম মাশুলটা দিতে হয়েছে কেন উইলিয়ামসনের দলকে।